সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
এক সময় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের সঙ্গেই রাজনীতি করেছিলেন সানোয়ার হোসেন। তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি। এর আগে তিনি মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সানোয়ার হোসেন এবার মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তুর বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন। ২২ এপ্রিল সোমবার যুবদলের এক কর্মী সভায় এমন সমালোচনা করেন তিনি। একই সভায় যুবদলের শীর্ষ দুই নেতাকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন যুবদলের এ অংশের নেতারা। একই সঙ্গে খোরশেদের বিরুদ্ধে পদ বানিজ্য, কমিটি বানিজ্য সহ নানা ধরণের অভিযোগ তুলেন নেতারা।
সোমবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দরে ২৭নং ওয়ার্ডের কুড়িপাড়া এলাকায় বন্দর যুবদলের আয়োজিত এক কর্মীসভায় এই আল্টিমেটাম দিয়েছেন যুবদলের নেতারা। কর্মী সভায় মহানগর যুবদলের একাংশের নেতাকর্মীদের পক্ষে এমন ঘোষণা দেন মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান। ওই সময় নেতাকর্মীরা এমন আল্টিমেটামের পক্ষে হাত তালি দিয়ে সমর্থন জানান।
ওই সভায় আবারো নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে পদ বানিজ্যের অভিযোগ ওঠেছে। এবার তারই মহানগর যুবদলের কমিটির সহ-সভাপতি আহাম্মদ আলী যুবদল সভাপতি খোরশেদের বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা পদ বানিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবদলের কমিটি গঠনের পূর্বে বর্তমান মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি মমতাজ উদ্দীন মন্তু ৫ লাখ টাকা কমিটি বানিজ্যের অভিযোগ তুলেছিলেন। সোমবার সন্ধায় বন্দরে যুবদলের এক কর্মী সভায় এমন অভিযোগ তুলেন আহাম্মদ আলী।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, প্রধান বক্তা হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, বিশেষ অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আহাম্মদ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
কর্মী সভায় সানোয়ার হোসেন বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথা রাখতে হয়। কেউ বিনা পয়সায় শ্রম দিবে, কেউবা দলে অর্থ দিয়ে সহায়তা করবে, আবার কোন আইনি সহায়তার জন্য তাকে দলে নেয়া যেতে পারে। এখন বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের ২২নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদককে মহানগর যুবদলের আইন বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। তো এভাবে তো দল চলতে পারে না। এখন আমরা বিদ্রোহী করব না, কিন্ত্র এখন যে পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে বিদ্রোহীটা আমাদের করতেই হবে। বিএনপিকে বাঁচাতে হলে বিদ্রোহী করতে হবে। এখন তাদের স্বৈরাচারী যে ভাবটা তাদের থেকে যাবে যদি আমরা বিদ্রোহী না করি। এটা পরিহার করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সানোয়ার হোসেন আরও বলেন, আমরা এখন এভাবে কাজ করতেছি, কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা এটা কোন দিকে চলে যাবে। আপনারা জানেন সুপার ফাইভ যে কমিটি দিছে সেখানে আমি পাইনি তাতে কোন আপত্তি নাই। কিন্তু সুপার ফাইভের কোন ফাউল নিচ থেকেই উপরে যায়। এখন যেহেুত কেন্দ্র কমিটি দিয়ে দিছে এখন সেদিকে যাবোনা, এখন আমরা চক তৈরি করে কাজ করব।
কর্মী সভায় যুবদল নেতা আহাম্মদ আলী তার বক্তব্যে বলেন, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বন্দর থানা কমিটি গঠনের সময় আমার হাত থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিল। সেই টাকাটা ছিল ফিরোজ আহমেদের। তারপরও যুবদলের সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচিত হতে হয়েছিল। সে বিরোধ সৃষ্টি করে দিয়েছিল আমাদের মাঝে। এখন আর্থিক লেনদেন ছাড়া পদ পাওয়া হয়না।
এর আগে তিনি বলেন, আমার রাজনীতি শুরু শোখন ভাইয়ের মাধ্যমে। পারিবারিকভাবে আমরা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। আজকে যারা নেতৃত্ব দিতে চায় তারা কোথা থেকে আসলো? তারা কোথায় আছে? তাদের পারিবারিক অবস্থান কি। আজকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়। টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি হয় বলেই দলের আজকে এমন অবস্থা। আজকে যারা নতুন আসছে টাকা দিলেই পদ দেয়া হচ্ছে। খোরশেদ ভাইয়ের সৃষ্টি হলো ২০০০ সালের পরে। দলের স্বাদ পরিপূর্ণ নেয়ার পরে এখন সে কমিশনার। আমরা বিরোধী দল করতে করতে এই জায়গায় আসছি। এখন তাদের কাছে কমিটি রাইখা আমরা নির্যাতিত। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ কমিটি পেলে নির্যাতিত হতো না। সে বুঝে অর্থ আর চাটুকারিতা। আমরা আন্দোলনের সময় আমি পুলশের ভয়ে বনে জঙ্গলে থাকিম না হয় বোনের বাড়িতে কিংবা আত্মীয়র বাড়িতে। আর খোরশেদ থাকে আলিশান হোটেলে। সে রাজপথের কোন মিটিং মিছিলেই ছিল না। সব আমরাই করেছি।
একই কর্মী সভার প্রধান অতিথি মনোয়ার হোসেন শোখন তার বক্তব্যে খোরশেদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে বলেন, একবার যদি কুকুরকে ছোট বেলা থেকে মাংস খাওয়ানো শেখানো হয় তাহলে পরবর্তীতে যদি কুকুরকে ভাত দেন তাহলে কুকুর ভাত খাবে না। এখন তার অভ্যাসটা হলো মাংস খাওয়ার অভ্যাস। আমরাই ওরে ঘুষ খাওয়া, ওরে টাকা পয়সা দিয়া খাওয়াইন্না অভ্যাস করে দিছি, এখন সে ওটাই চিন্তা করে। এখন সে চিন্তা করছে সানোয়ারকে দরকার নাই, আরেকজনকে তৈরি করমু, ওই আমারে খাওয়ান দিব। কারন সানোয়ার তো আর ওরে পকেট ভরতো না। আজকে যুবদলে স্বৈরতন্ত্র করতে দিব না। যুবদল দিয়ে কাউকে বানিজ্য করতে দিব না। বানিজ্য করতে চাইলে দাতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে যুবদলের সকল কমিটি গঠন করা হবে। কোন স্বৈরতন্ত্র চলবে না। চাটুকারিতা বন্ধ করুন, চামচামি করা বন্ধ করুণ।
কর্মী সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক বোরজাহান, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সোহেল মিয়া, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুমন প্রধান, সহ-ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক জাকির হোসেন, সহ-যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান, সদস্য রুবেল হোসেন, মাসুম সহ মহানগর যুবদলের প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী। এই কর্মী সভায় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রাখতে মহানগর যুবদলকে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে কর্মী সভায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা মাসুদুর রহমান, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জুয়েল রানা ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক আলী নেওয়াজ।