সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের বিরুদ্ধে এক লাখ টাকা পদ বানিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি ও বন্দর থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী। তবে এমন অভিযোগের পর খোরশেদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন বলেন, একবার যদি কুকুরকে ছোট বেলা থেকে মাংস খাওয়া শেখানো হয় তাহলে পরবর্তীতে যদি কুকুরকে ভাত দেন তাহলে কুকুর ভাত খাবে না। এখন তার (খোরশেদ) অভ্যাসটা হলো মাংস খাওয়ার অভ্যাস। আমরাই ওরে ঘুষ খাওয়া, ওরে টাকা পয়সা দিয়া খাওয়াইন্না অভ্যাস করে দিছি, এখন সে ওটাই চিন্তা করে। এখন সে চিন্তা করছে সানোয়ারকে দরকার নাই, আরেকজনকে তৈরি করমু, ওই আমারে খাওয়ান দিব। কারন সানোয়ার তো আর ওরে পকেট ভরতো না।
মনোয়ার হোসেন শোখন আরও বলেন, আজকে যুবদলে স্বৈরতন্ত্র করতে দিব না। যুবদল দিয়ে কাউকে বানিজ্য করতে দিব না। বানিজ্য করতে চাইলে দাতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। গণতান্ত্রিক উপায়ে যুবদলের সকল কমিটি গঠন করা হবে। কোন স্বৈরতন্ত্র চলবে না। চাটুকারিতা বন্ধ করুন, চামচামি করা বন্ধ করুণ।
২২ এপ্রিল সোমবার সন্ধায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দরে ২৭নং ওয়ার্ডের কুড়িপাড়া এলাকায় বন্দর যুবদলের আয়োজিত এক কর্মীসভায় এসব কথা বলেন উপরোক্ত দুই যুবদলের নেতা। ওই কর্মী সভায় মহানগর যুবদলের বর্তমান বিবাদমান সমস্যা নিরসণের লক্ষ্যে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে খোরশেদকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান। ওই সময় নেতাকর্মীরা এমন আল্টিমেটামের পক্ষে হাত তালি দিয়ে সমর্থন জানান।
একই সভায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও তার ভাই মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুুদুল আলম খন্দকার খোরশেদকে উদ্দেশ্য করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন বলেছেন, তৈমূর আলম খন্দকার ও তার ভাই খোরশেদের রাজনীতি পয়দা করেছি আমরা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি সানোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন শোখন, প্রধান বক্তা হিসেবে মহানগর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাগর প্রধান, বিশেষ অতিথি হিসেবে মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি আহাম্মদ আলী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মনোয়ার হোসেন শোখন আরও বলেন, আজকে তৈমূর আলম খন্দকারকে, খোরশেদ খন্দকারকে রাজনীতিতে পয়দা দিছি আমরা। হাতে গোনা দুচারজনের মধ্যে আমি একজন। খোরশেদকে দিয়ে প্রত্যেকটি কমিটি গঠনের পিছনে আমার অবদান আছে। আমি কেন্দ্রে বিরোধীতা করলে এসব কমিটি ঝুলে থাকতো। কিন্তু সব সময় বলেছি ঐক্যবদ্ধ যুবদল।
এর আগে মনোয়ার হোসেন শোখন বলেন, এক এগারোর সময় আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমাকে গোয়েন্দা সংস্থা বলেছিল বিএনপি করে কি পেয়েছো? বিএনপি ছেড়ে দেও। আমাকে বিএনপি বাদ দিতে বলেছিল। তারপরও আমি বিএনপিতে আছি। এখানে যারা আছেন সবাই আমাদের সাথে থাকবেন। আমরা কখনও আপনাদের ছেড়ে যাবো না। আগামীতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমরা সকলে মিলে কাজ করব। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলে দিয়েছেন আগামীতে মহানগর যুবদলের সকল কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করতে হবে। বন্দর থানা, উপজেলা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, সদর থানা সহ সকল ইউনিটের কমিটি সম্মেলন ছাড়া হবে না। এখন নারায়ণগঞ্জে মহানগর যুবদলে স্বৈরতন্ত্র চলবে না। এককভাবে রাতের আধারে কারো স্বাক্ষরে কমিটি হবে না। সেটার প্রমান পেয়েছেন বন্দর উপজেলা কমিটি গঠনের পর তা স্থগিত করেছেন কেন্দ্রীয় যুবদলের নেতৃবৃন্দ। আগামীতে সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হবে।
তিনি বলেন, আজকে আমি সেক্রেটারিকে বলেছিলাম আপনি সিদ্ধিরগঞ্জ ইজারা নিয়েছেন, বন্দর ইজারা নিয়েছেন সভাপতি। তখন সেক্রেটারি বললো তাহলে তুমি শোখন সদর থানা নিয়ে নেও। আমি বলেছি না, আমি বন্দরের পোলা। আমি নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করব। আমাকে অফার করা হয়েছে আমি যাইনি। আপনারাও কেউ যাবেন না।
কর্মী সভায় যুবদল নেতা আহাম্মদ আলী তার বক্তব্যে বলেন, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বন্দর থানা কমিটি গঠনের সময় আমার হাত থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিল। সেই টাকাটা ছিল ফিরোজ আহমেদের। তারপরও যুবদলের সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচিত হতে হয়েছিল। সে বিরোধ সৃষ্টি করে দিয়েছিল আমাদের মাঝে। এখন আর্থিক লেনদেন ছাড়া পদ পাওয়া হয়না।
এর আগে আহাম্মদ আলী বলেন, আমার রাজনীতি শুরু শোখন ভাইয়ের মাধ্যমে। পারিবারিকভাবে আমরা বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। আজকে যারা নেতৃত্ব দিতে চায় তারা কোথা থেকে আসলো? তারা কোথায় আছে? তাদের পারিবারিক অবস্থান কি। আজকে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়। টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি হয় বলেই দলের আজকে এমন অবস্থা। আজকে যারা নতুন আসছে টাকা দিলেই পদ দেয়া হচ্ছে। খোরশেদ ভাইয়ের সৃষ্টি হলো ২০০০ সালের পরে। দলের স্বাদ পরিপূর্ণ নেয়ার পরে এখন সে কমিশনার। আমরা বিরোধী দল করতে করতে এই জায়গায় আসছি। এখন তাদের কাছে কমিটি রাইখা আমরা নির্যাতিত। আমাদের মধ্যে থেকে কেউ কমিটি পেলে নির্যাতিত হতো না। সে বুঝে অর্থ আর চাটুকারিতা। আমরা আন্দোলনের সময় আমি পুলশের ভয়ে বনে জঙ্গলে থাকিম না হয় বোনের বাড়িতে কিংবা আত্মীয়র বাড়িতে। আর খোরশেদ থাকে আলিশান হোটেলে। সে রাজপথের কোন মিটিং মিছিলেই ছিল না। সব আমরাই করেছি।
কর্মী সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক বোরজাহান, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সোহেল মিয়া, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক সুমন প্রধান, সহ-ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক জাকির হোসেন, সহ-যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান, সদস্য রুবেল হোসেন, মাসুম সহ মহানগর যুবদলের প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী। এই কর্মী সভায় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে ভুমিকা রাখতে মহানগর যুবদলকে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে কর্মী সভায় সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা মাসুদুর রহমান, মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি জুয়েল রানা ও যোগাযোগ বিষয়ক সম্পাদক আলী নেওয়াজ।