নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মুখে হাসি, আইভীও খুশি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জে বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী আলোচিত সমালোচিত প্রভাবশালী আওয়ামীলীগের এমপি একেএম শামীম ওসমান তার রাজনীতিতে যে, বেশ বেকায়দায় রয়েছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ইতিমধ্যে বেশকজন তার খুবই ঘনিষ্ঠ কর্মী চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার তার আপন শ্যালকের বিরুদ্ধে মাদকের মামলায় অভিযোগ তোলা হয়েছে তিনি মাদক বিক্রয়ে সহযোগীতাকারী। তার সবচেয়ে কাছের ডান হাত, বাম হাত বলতে নেতাকর্মীদের ভাষ্যে যা বুঝায় সেই শাহ নিজামের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে করেছেন জিডি। নেতাকর্মীদের দাবি অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের প্রতাপশালী নেতা শামীম ওসমান। কিন্তু তার বর্তমান পরিস্থিতি সংকটাপন্ন।

শামীম ওসমানের এমন করুণ দশা যে, তার একজন ঘনিষ্ট কর্মী ডিস বাবুকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর পুলিশের এসপির কাছে গিয়েছিলেন তদবির নিয়ে। কিন্তু পুলিশ সুপার নাকচ করে দিলেন। এমন খবরগুলো প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় কিংবা অনলাইনে প্রকাশ দেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের মুখ্যে অট্টহাসি দেখা যায়। শামীম ওসমানের নেতাকর্মীদের ধরপাকড়াওয়ের বিষয়ে বেশকজন বিএনপি নেতা এক বাক্যে বলছেন, ‘ঠিকই আছে।’ আবার অনেকেই বলছেন, মেয়র আইভী এই শামীম ওসমানের চার পাশে থাকা বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে বারবার মুখ খুললেও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু পুলিশের বর্তমান ভূমিকায় হয়তো তিনিই বেশ খুশি! যেখানে নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার উচ্ছেদ নিয়ে মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াত আইভী রাজপথে নেমেও পারেননি, সেখানে পুলিশ এসেই এক ইশারায় তুলে সরিয়ে দিলেন হকার।

গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের সময় বর্তমান পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের প্রতি বিএনপি নানা কারনেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর সেই পরিস্থিতি পুরোটাই পাল্টে দিলেন এসপি হারুন অর রশীদ। ইতিমধ্যে যেসব সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, তাদের বেশির ভাগই শামীম ওসমানের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করে আসতো। কেউ কেউ বেশ ঘনিষ্টজনও তার। বিভিন্ন সভা সমাবেশে শামীম ওসমানের চার পাশেও দেখা গিয়েছিল এদের বেশকজনকে। আবার তার মিটিং মিছিলেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতই। ফলে এসব অপকর্মকারীদের দাপটে টটস্ত ছিল নারায়ণগঞ্জের মানুষ। বর্তমান পুলিশ সুপারের ভুমিকায় এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন।

সূত্রে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলোচিত সন্ত্রানী টেনু গাজী ও কুতুবপুরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্র্রাসী মীর হোসেন মিরুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মীরু কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক। গত ৬ এপ্রিল শামীম ওসমান ফতুল্লায় জরুরী কর্মী সভায় মীরুর পক্ষেই কথা বলেছিলেন।

এছাড়াও শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকায় মসজিদের টাকা আত্মসাত নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে এই দুই নেতা সহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে পাঠায় পুুলিশ। এর মধ্যে কামরুল হাসান মুন্না মহানগর শ্রমিকলীগের সেক্রেটারি পদেও রয়েছেন।

তবে এসব ছাড়িয়ে সবচেয়ে আলোচনায় চলে আসে ফতুল্লার মেরী আন্ডারসন নামক একটি ভাসমান বারে পুলিশ অভিযান দিয়ে ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা। ওই ঘটনায় একটি মামলায় দায়ের করে পুলিশ। মামলায় পুলিশ দাবি করে- অভিযুক্ত ১নং আসামী থেকে ২৫ নং আসামী পর্যন্ত সবাই জানায় এসব মাদক বিক্রয়ে সহযোগীতা কারী তানভীর আহমেদ টিটু। এই তানভীর আহমেদ টিটু এমপি শামীম ওসমানের শ্যালক।

এছাড়াও শামীম ওসমানের আরেক ঘনিষ্টজন মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজাম। গত মাসে তৎকালীন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মঞ্জুর কাদের বাদী হয়ে শাহনিজামের বিরুদ্ধে জিডি দায়ের করেন। পুলিশের বিরুদ্ধে বিরুপ মন্তব্যের অভিযোগ তোলা হয়।

এদিকে গত ১৮ এপ্রিল বন্দর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইতিমধ্যে তাকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে জেল গেটের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে আরও দুটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন দুজন ভুক্তভোগী।

২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে শামীম ওসমানের আরেক কর্মী সিদ্ধিরগঞ্জ যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আগের দিন রাতে এক কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এসব ছাড়াও শামীম ওসমানের একমাত্র ছেলে অয়ন ওসমানের শ্যালক বিকির বিরুদ্ধেও মামলা নিয়েছে পুলিশ। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের এখন সন্ত্রাসী চাঁদাবাজী মাদক বিক্রয়ের অভিযোগে পড়ে যাচ্ছেন শামীম ওসমানের লোকজন।

এসবের সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে শহরের দেওভোগ এলাকা থেকে শিশু সাদমান সাকি নিখোঁজের বিষয়টি। শিশুটির বাবা এপন জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর একটি লিখিত দিয়েছেন, সেখানে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজমুল আলম সজলের বিরুদ্ধে শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগ তুলেছেন। এই নাজমুল আলম সজলও শামীম ওসমানের অন্যতম কাছের কর্মী।

আবার গত ২০এপ্রিল ফতুল্লার ভূইগড়ে রূপায়ন টাউনে হামলার ঘটনায় দুটি মামলায় আসামী হয়েছেন জেলা কৃষকলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দীন ভূঁইয়া। নাজিম উদ্দীন ভূঁইয়াও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ কর্মী। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক ভূমিদূস্যতা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠেছিল। ২৩ এপ্রিল সজীব নামের একজনকে বন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই সজীবও ডিস বাবুর সহযোগী। ২০ এপ্রিল ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুকে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।