দেশের সাহিত্যাঙ্গনে এক অনন্য নাম সাব্বির আলম সেন্টু

সাব্বির আলম সেন্টু, যার পুরো নাম সাব্বির আহমেদ সেন্টু। নিঃসন্দেহে বহুগুণে গুণান্বিত একজন সাদা মনের মানুষ। একটি জীবনকে যে মানুষটি এতোকাল ঘষেমেজে সাজিয়ে রেখেছেন সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক থেকে,তাকে অতিব সাধারণ মানুষ বল্লেও বোধ করি তার প্রতি অবিচারই করা হবে। আমার দৃষ্টিতে একেবারেই ব্যতিক্রম আর অসাধারণ একজন মানুষই হচ্ছেন কবি-ছড়াকার ও সাংবাদিক সাব্বির আহমেদ সেন্টু। হোক ছড়া-কবিতা কিংবা শিশুতোষ ছড়ানাট্য গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ নিবন্ধ…এককথায় অজস্র সৃষ্টিশীল কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে থেকে তিলে তিলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সংস্কৃতি অঙ্গনজুড়ে। কর্মময় জীবনে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাংবাদিকতাকে। এছাড়াও নিয়মিত তৈরি করে যাচ্ছেন নিজের লেখা সব নাটক ও টেলিফিল্ম। যা নিয়মিত প্রচার হয়ে আসছে এটিএন বাংলাসহ বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে। তিনি মূলতঃ ছড়াচর্চার মাধ্য দিয়েই জীবনকে সাজাতে চেয়েছেন। তারপরও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে ছড়া থেকে দীর্ঘদিন আড়াল করে রেখেছেন নিজেকে। অথচ তারই সমসাময়িক
ছড়াকারগণ ইতোমধ্যেই যার যার অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন শক্ত আসনে। একজন তরুন লেখককে সামনে অগ্রসর হওয়ার পেছনে যে উৎসাহ বা উদ্দীপনার প্রয়োজন হয়,তার কোনটাই ছিল না এ মানুষটিকে জাগিয়ে তোলার জন্যে। নিজ থেকে একেবারেই নিরপেক্ষ গতিতে একলা পথ চলেছেন দীর্ঘ পথ। পালন করেছেন অভিভাবকের দায়িত্বও। অভিভাবক মানেই হচ্ছে গ্রাম বা শহর থেকে তারুণ্যদ্বীপ্ত অসংখ্য মেধাবীদের খুঁজে বের করে ক্রমাগতই শিল্পী হিসেবে তৈরি করে চলছেন আপন প্রচেষ্টায়। যে কারণে নতুনদের কাছে সাব্বির আহমেদ সেন্টু হচ্ছেন একজন শ্রদ্ধা আর সম্মানের মানুষ। সম্প্রতি আশির দশকের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়
প্রকাশিত তার ছড়ার কালেকশানগুলো দেখে আমি নিজেকেও অবাক হয়ে উঠি। কী নেই তার সংগ্রাহে। সাহিত্যের সব শাখাতেই তার রয়েছে সমান বিচরণ। সাব্বির আহমেদ সেন্টু আসলেই ব্যাতিক্রম এক গুণী লেখকই বলা যায়। হাসিখুশি আর প্রাঞ্জলতায় ভরপুর একজন নিবেদিত প্রাণ কলম সৈনিক। তিনি এক জীবনে কারো সাথে আপোষ করেননি। অনেক নিন্দুক আছেন যারা বরাবরই তাকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। এখনও ওঁৎ পেতে বসে আছেন তাকে দমিয়ে দেয়ার জন্যে।কিন্তু সাব্বির আহমেদ
সেন্টু দমিবার পাত্র নন, যে কারণে নিজের জীবনীশক্তিকে উজ্জীবিত রেখেই তিনি তার কর্মে ডুবে আছেন শক্ত আসন গেড়েই।যে কারণে তাকে নিয়ে আমার আজকের এই মূল্যায়ন। সে অর্থে অন্তত নিরপেক্ষতার সাথেই আমি তার পুর্নাঙ্গ পেশ করছি।

সাব্বির আহমেদ সেন্টু। জন্ম-১৯আক্টোবর নারায়নগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে নানীর বাড়িতে। পিতা- মরহুম হাজী সালাহউদ্দি আহমেদ ও
মাতা-মরহুমা শাহিন আরা বেগম। স্থায়ী ঠিকানা- ১২৭/৫ কেনএন সেন রোড (সরদার বাড়ি) বন্দর,নারায়ণগঞ্জ। তিনি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলায় প্রায় ৬৫ টির শিশুতোষ নাটকসহ অসংখ্য ছড়া-কবিতার প্যাকেজভিত্তিক অনুষ্ঠানও প্রচার করে আসছেন। শিশুতোষ চলচ্চিত্রের জন্যে ইতোমধ্যেই তিনি অর্জন করেছেন মাদার
তেরেসা স্বর্ণপদক ছাড়াও সাংবাদিকতায় ও সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায়ও তিনি প্রায় শতাধিক সম্মাননা পদক অর্জন করেন। অতি সম্প্রতি সরকারি অনুদানে
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র ব্যবস্থাপনায় ‘‘উত্তরণ’’নামক একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ তার লেখা ও পরিচালনায় হয়েছে যথাশীঘ্রই এটি প্রচারিত হবে। দৈনিক বিজয় পত্রিকার সম্পাদক ও চ্যানেল জিরোর কর্ণধার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। ১৯৯৩ সালে তার প্রথম কবিতা গ্রন্থ ‘শতাব্দীর শ্লোগান ১৪০০’ ও ১৯৯৭ সালে শিশুতোষ গ্রন্থ ‘স্নেহের নক্ষত্র’ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তিনি আলোচনায় চলে আসেন।

এছাড়া তিনি অসংখ্য টিভি নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। তিনি বন্দর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ
সম্পাদকসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা নাট্য সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক ও বন্দর থানা প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালণ করছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিল বন্দর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও নিয়োজিত আছেনএই গুণী
মানুষটি। এছাড়া দীর্ঘ দিন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও নারায়ণগঞ্জ সাব-এডিটর ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা
সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পলনে ক্রমাগত ৩ দফাই নিয়োজিত আছেন সাব্বির আহমেদ সেন্টু আমাদের দেশ মাটি আর মানুষের পক্ষে সর্বময় মুক্তিযুদ্ধেও
চেতনাকে বুকে ধারণ করেই অধ্যাবধি টিকে আছেন আর টিকে থাকবেন সংস্কৃতি সাধনায়। এ পৃথিবী তার বাসযোগ্য হোক। আমি সর্বময় তার অগ্রগতি কামনা করে তার লেখা একগুচ্ছ ছড়া-কবিতা দিয়েই শেষ করছি। আশা করি একজন দক্ষ ছড়াকার
হিসেবেও তিনি পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হবেন।

সাব্বির আহমেদ সেন্টু’র একগুচ্ছ ছড়া
০১.
অতীত স্মৃতি

আগের মতো যায় না শোনা
মিষ্টি পাখির রব,
এক নিমিষেই কোথায় যেন
হারিয়ে গেলো সব।

আগের মতো যায় না দেখা
ঘুরতে কলের চাকা,
নকশী কাঁথার মুড়ী দিয়ে
মাটির ঘরে থাকা।

আগের মতো গায়নাতো কেউ
ভাটিয়াল-পল্লীগীতি,
ছোট-বড় কারো মাঝে
নেইকো লজ্জা-ভীতি।

আগের মতো সুষম খাবার
পায় না তো কেউ খেতে,
গল্প হয়না সবাই মিলে
বসে মাদুর পেতে।

০২.
বদলে গেছে

বদলে গেছে আকাশ-বাতাস
বদলে গেছে মাটি,
বদলে গেছে এই দুনিয়ায়
সকল কিছুই খাঁটি।

বদলে গেছে এই জগতে
ন্যায়ের পথে চলা,
বদলে গেছে সবার মাঝে
সত্য কথা বলা।

বদলে গেছে সব মানুষের
সুস্থ্য-সবল মন,
বদলে গেছে ভুবন জুড়ে
সবার আপনজন।

বদলে গেছে সব জিনিসের
দক্ষ কারুকাজ,
বদলে গেছে সবার মনের
সভ্যতা আর লাজ।

০৩
আলতু মিয়ার ফালতু বয়ান

আলতু মিয়ার ফালতু বয়ান
শুনছো নাকি সবে,
আজব শহর ঢাকা নাকি
নয়া লন্ডন হবে।

ব্যাটারীতে উড়বে প্লেন
চলবে সকল গাড়ি,
ঢাকা জুড়ে তৈরি হবে
প্লাষ্টিকের বাড়ি।

ছেলেরা সব পড়বে চুড়ি
কামিজ-সেলোয়ার,
মেয়েরা হবে ক্রিকেট,হকি
ফুটবল খেলোয়াড়।

০৪.
পীর সমাচার

পীর মশাইদের দ্বন্দ্বনীতি
বাড়ছে ধীরে ধীরে,
আসল পীরের মৃত্যু হচ্ছে
নকল পীরের ভীড়ে।

দাঁড়ি-গোঁফের বাহার তাদের
পোশাক পড়েন সাদা,
এছাড়াও দরগাহ গড়ে
বনে যান পীরজাদা।

মধুর বয়ান দেন যতোসব
ওয়াজ-মাহফিলে,
সেই বয়ানে ভক্তকুলের
মস্তিস্ক খায় গিলে!

তারিখ:২৮.০৪.২০২৩ইং

লেখক পরিচিতি: নজরুল ইসলাম শান্তু
ধর্মগঞ্জ এনায়েতনগর ফতুল্লা নারায়ণগঞ্জ।