সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলো যেভাবে গঠিত হচ্ছে তাতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের পরিবার আত্মীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী ও ২০০১-২০০৬ সালে সরকারি দলের ক্ষমতায় দাবিয়ে বেড়ানো লোকজনের জেলা বিএনপি হতে আর বেশিদিন বাকি নেই। ২০০৮ সাল থেকে যারা এতদিন রাজপথে ঘাম ঝড়িয়েছেন, আন্দোলন সংগ্রাম করে হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সেইসব নেতাকর্মীদের ভাগ্য এখন বিলিন হয়ে যাচ্ছে গিয়াসের রাতের আধারে গণহারে কমিটি গঠনের মাধ্যমে। প্রতিদিনই জেলা বিএনপির আওতাধীন কোনো না থানার ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো গঠিত হচ্ছে।
এসব কমিটি গঠনে মানা হচ্ছেনা কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনা। জেলা বিএনপির আহ্বায়কের একক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তেই হচ্ছে এসব কমিটিগুলো। জেলা কমিটির অন্যদের তোয়াক্কাও করছেন না তিনি। এসব কারনে তৃণমুল নেতাকর্মীরা অভিযোেগ করছেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিকে পরিবারতন্ত্রে রূপ দিয়েছেন তিনি। একক সিদ্ধান্তে যাচ্ছেতাই করায় সেটাকে নেতাকর্মীরা বলছেন গিয়াসের স্বৈরাচারী মনোভাব। ২০০১ সালে গিয়াস এমপি থাকাকালীন সময়ে যারা তার সাথে ছিলেন তাদেরকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে এনে রাজপথের কর্মীদের বিএনপি থেকে বিতারিত করার চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সিংহভাগ কর্তৃত্ব গিয়াসের দুই ছেলের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। এসব কারনে জেলা কমিটির অন্যান্য যুগ্ম আহ্বায়কদের ভেতরেও চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোনো সময় এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতেও পারে।
জানাগেছে, গত বছরের ১৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনকে আহ্বায়ক, অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নেতৃত্বে পরিবর্তনে নানা ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছিলো। যে কারনে গিয়াসউদ্দীনকে নেতৃত্বে আনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছিলেন। তাদের প্রত্যাশা ছিলো গিয়াস জেলা বিএনপিকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাবেন। নিজ ব্যক্তির চেয়ে দলকে বড় করে দেখবেন।
এমন প্রত্যাশা নিয়ে কমিটি গঠনের পর গিয়াসের উপর রীতিমত নেতাকর্মীরা হুমরি খেয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সচারাচর ভুলের গণ্ডি থেকে বের হতে পারলেন না গিয়াসও। অতীতে নেতৃত্ব পাওয়া নেতাদের মতই ভুল করছেন। প্রথমেই জেলা বিএনপির কমিটির সকলের সঙ্গে কোনো ধরণের পরামর্শ ব্যতিরেকেই কলমের এক খোচায় জেলায় বিএনপির ৫টি কমিটি অনুমোদন করে দেন গিয়াসউদ্দীন ও গোলাম ফারুক খোকন। এরপর থেকে জেলা বিএনপির আওতাধীন বিভিন্ন থানার পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও সক্রিয়দের মাইনাস করে কমিটি গঠনের হিরিক পড়েছে।
মুলত এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে গিয়াস ও নারায়ণগঞ্জ-১(রূপগঞ্জ) আসনে মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার জন্য বিএনপির মনোনয়ন লড়াইয়ে আসন দুটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই ৫টি কমিটি রাতের আধারে ঘোষণা করে দিয়েছেন তারা দুজন। কমিটিগুলো থেকে তাদের বিরোধী বলয়ে রাজনীতি করে আসা কিংবা অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশিদের সঙ্গে রাজনীতি করে আসা নেতাদের সরাসরি মাইনাস করা হয়েছে ন্যাক্কারজনকভাবে। বিগত ১৫টি বছরেও যাদেরকে রাজপথের একটি মিছিলে দেখা মিলেনি তাদের হাতে থানা/উপজেলা/ পৌরসভা কমিটির নেতৃত্ব তুলে দিয়েছেন।
ভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, জেলার আড়াইহাজার ও সোনারগাঁও উপজেলা কমিটিতেও আচর দিতে যাচ্ছেন গিয়াস ও খোকন। আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম আজাদ ও সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান বলয়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন আতংকে। কারন ফতুল্লা থেকে মুহাম্মদ শাহআলম অনুগামীদের, রূপগঞ্জ থেকে কাজী মনির অনুগামীদের ও সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে মামুন-রবির অনুগামী নেতাদের রীতিমত বিএনপির কমিটি থেকে বিতারিত করা হয়েছে নতুন কমিটি গঠনের মাধ্যমে।
ঘটনা সূত্রে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অধীনস্থ পাঁচটি ইউনিট কমিটি ঘোষণা করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন। যদিও জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের সময় শর্ত ছিলো কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহামুদের স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে কমিটি গঠনে। যে কারণে গণমাধ্যমের কাছে কমিটিগুলো অবৈধ দাবি করছেন মামুন মাহমুদ। কমিটি গঠনে তাকে জানানোও হয়নি। জেলা বিএনপির আওতাধীন ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলা ও রূপগঞ্জের কাঞ্চন ও তারাব পৌরসভা বিএনপির কমিটি অনুমোদন করা হয়। যদিও এসব কমিটি নিয়ম মাফিক হয়নি দাবি করে আসছেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহামুদ। কারন কমিটিতে শর্ত ছিলো কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মামুন মাহামুদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। কিন্তু এসব কমিটি গঠনে তার কোনো অনুমোদন নাই।