সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একটি প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। যে কর্মসূচিতে সর্বসাকুল্যে মাত্র ২১ জন আইনজীবী উপস্থিত হয়েছিলেন। এর মধ্যে এক ঘন্টার এই কর্মসূচিতে অনেক আইনজীবীরা ছিলেন ওঠো আর বসো এবং আসা যাওয়ার মাঝেই।
এই কর্মসূচিতে বসেছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম। অনেকটা মেলা দেখতে এসে কলার বেচার মত হয়েছে তার বিষয়টি। তিনি এসেছিলেন মামলায় হাজিরা দিতে, হাজিরা শেষে অনশনে তিনি বসছেন। যার ফলে তার অনুগামী আইনজীবীদের নিয়ে মোট ২১ জন আইনজীবীর অনশন কর্মসূচি পালিত হলো নারায়ণগঞ্জে। অনেক আইনজীবীদের ডেকে ডেকে অনশনে বসানো হয়েছে। অনেককেই ডাকা হলেও তারা বসতে চায়নি। নানা অজুহাতে এড়িয়ে গেছেন কর্মসূচি। অনেকেই চুক্ষূলজ্জায় এসে বসেছিলেন।
জানাগেছে, কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে প্রতীকী অনশন করেছেন বিএনপির আইনজীবীরা। ২৩এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুর ১২ থেকে ১টা পর্যন্ত গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
এতে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, প্রধান বক্তা বিএনপির সাবেক এমপি মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ খান ভাষানী ভূঁইয়া ও মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুুফ খান টিপু সহ অন্যান্য আইনজীবীগণ।
এই কর্মসূচিতে বিএনপির সিংহভাগ আইনজীবীদের অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। বেশকজন শীর্ষ আইনজীবী নেতাও ওই কর্মসূচিতে ছিলেন না। যে কারনে তাদের অনুপুস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। তবে এর কারন হিসেবে জানাগেছে, তৈমূর আলম খন্দকার এই কর্মসূচির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ আইনজীবীদের সঙ্গে কোন রকম পূর্ব আলোচনা করেননি। এমনকি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারেও এই কর্মসূচিটি পালিত হয়নি।
জানাগেছে, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলন নামের সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দুই নেতা গত সুপ্রীম কোর্ট বার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের বিরোধীতা করেছিলেন এই সংগঠনের নেতারা। যার ফলে কেন্দ্রীয় নেতারা এ ভূইফোড় সংগঠনের নেতাদের প্রতি চরম ক্ষুব্দ। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন, যেখানে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এক বছরের বেশি সময় ধরে জেলে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেখানে সেই শেখ হাসিনা তৈমূর আলম খন্দকারের প্রসংশা করছেন। তাই আমরা তৈমূর আলম খন্দকারকে নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছি যে, আসলে তিনি কি করতে চাচ্ছেন?
দেড় বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ২৮৮ জনের একটি কমিটি ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দীন খোকন। ওই কমিটির বিরোধীতা করে ২১ সদস্যের আরেকটি পাল্টা কিিমট ঘোষণা করেছিলেন বিদ্রোহী আইনজীবী নেতারা। এমনকি তারা ১৪৪ জনের পদত্যাগ করেছিল তার স্বাক্ষর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন যার মুলত তৈমূর আলম খন্দকারের অনুগামী হিসেবে দাবি করেছিলেন। যদিও পরবর্তীতে অনেকেই বলেছিলেন তাদের কাছ থেকে চেয়ে চেয়ে স্বাক্ষর আদায় করা হয়েছিল। তৈমূর বলয়ের দাবি অনুযায়ী সেই ১৪৪ জনের মধ্যে মাত্র ২১ জনের কর্মসূচি পালিত হলো নারায়ণগঞ্জে। যেখানে মাত্র ৪৪ জনকেও দেখা গেল না।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটিতে স্থান পেয়েছেন ১৯ জন আইনজীবী যাদের মধ্যে ১৫ জনই নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সদস্য। এখানে রয়েছে জাতীয়তাবাদী যুব আইনজীবী ফোরামের দুটি কমিটি। রয়েছে শহীদ জিয়া আইনজীবী পরিষদের জেলা কমিটিও। রয়েছে আইন ছাত্র ফোরামের কমিটি।
কিন্তু এত সব কমিটি ও নেতা থাকতে কেন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির প্রতীকী অনশণ কর্মসূচিতে মাত্র ২১ জন আইনজীবী? এমন প্রশ্ন খুজতে একজন শীর্ষ আইনজীবী নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি কিংবা কেন্দ্রীয় আইনজীবী ফোরামের কোন ঘোষিত কর্মসূচি ছিল না। এটা তৈমূর আলম খন্দকার তার নিজ উদ্যোগে পালন করেছেন, যেখানে জেলার শীর্ষ আইনজীবী ফোরামের নেতারা কিংবা বিএনপির আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে কোন রকম পূর্ব আলোচনা করা হয়নি। আইনজীবীরা অবগতও ছিল না। হুট করে একটি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলেই সফল হয়ে যায় না।
জেলা বিএনপির কমিটিতে শীর্ষ পদে ঠাঁই পাওয়া একজন শীর্ষ নেতা বলেন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে যোগাযোগ করেছি তারা বলেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপি কিংবা কেন্দ্রীয় ফোরামের কোন কর্মসূচি নেই। এখন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে তৈমূর আলম খন্দকার তিনি কর্মসূচি পালন করেছেন। এ বিষয়েও আমরা জানতাম না। জেলার শীর্ষ আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে কোন আলোচনা করা হয়নি এ বিষয়ে। দুপুরের পরে শুনেছি আদালতপাড়ায় গুটিকয়েজন আইনজীবীদের নিয়ে তৈমূর সাহেব কোন রকম একটি ব্যানারে প্রতীকী অনশন করেছেন।
শহীদ জিয়া আইনজীবী পরিষদের জেলা কমিটির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, এমন কর্মসূচির বিষয়ে আমরা জানি না। দেখেছিলাম। কেন্দ্রীয় কিংবা জেলারও কোন কর্মসূচি ছিল না। কর্মসূচি পালনের আগেও আমরা জানি না। একজন চেয়ারপারসনের অনুুষ্ঠানে যদি মাত্র ২১ জন আইনজীবী উপস্থিত হন তাহলে সেটা লজ্জাজনক। কারন নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় কয়েকশত আইনজীবী বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।