সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, আমরা একটা কথা বলতে চাই। ২০১৪-১৮ সালের মতো নির্বাচনের কথা চিন্তা করেও কল্পনা করে নিজেদের ঘুম হারাম কইরেন না। বাংলার মাটিতে ২০১৪-১৮ সালের মতো নির্বাচন আর কোনদিন হবে না। কারন এসেছে শেখ হাসিনার অধীনে আর কোন নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা আপনি যেই হোন আপনাকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। জনগণের কাতারে আসতে হবে এবং নিরপেক্ষ নির্দেশ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। যদি দেশের মানুষ আপনাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে তাহলে আমাদের কোন আপত্তি থাকবে না। যে কথা শুনছি বাংলাদেশের ৯০% মানুষই আপনাকে পদত্যাগ চায়। আওয়ামী লীগের ৭০ ভাগ মানুষ চায় এই সরকার আর না থাকুক।
তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের মন্ত্রী-এমপিরা দেশকে লুটেপুটে কোটি কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। আজকে দেশের পরিবর্তনের হাওয়া বইছে বলে অনেক মন্ত্রী এমপিরা তাদের পরিবারদেরকে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অনেকে আবার বিদেশের ভিসা সংগ্রহ করতে শুরু করে দিয়েছে। সময় মতন উড়াল দেওয়ার জন্য। আপনাদের উড়াল দিতে দেওয়া হবে না। আপনাদেরকে আটকে রাখা হবে এবং এই বাংলার মাটিতে আপনাদের দুর্নীতির বিচার করা হবে। গুম, খুন ও হত্যার বিচার করা হবে। প্রশাসন দিয়ে ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে নির্যাতন করান। এই প্রশাসনই আপনাদেরকে একদিন গ্রেফতার করবে। এবং এই প্রশাসনে আপনাদের বিচার করবে ইনশাআল্লাহ।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপি’র আওতাধীন ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এড. সাখাওয়াত হোসেন খান এসব কথা বলেন। শনিবার (২০ মে) বিকেল মহানগরীর নন্দীপাড়া এলাকায় এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ১৫ বছর যাবত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের উপর জবর দখল করে ক্ষমতায় বসে আছে। আজকে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে সেই ৭৪ সালের মতন সেই তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আজকে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আজকে মানুষ বাজারে গেলে কাঁদে। আজকে মানুষকে আর অন্য কোন কাজ করে কাঁদাতে হয় না। দ্রব্যমূল্যের দাম দেখলে মানুষ এমনিতেই কাঁদে। দেশের কোটি কোটি মানুষের সাথে এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আমাদের মতো বেশি দাম দিয়ে দ্রব্যমূল্য কিনতে হচ্ছে। অন্তত খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদেরকে বলে এই মিয়া আপনারা কি করছেন দেশের এই যে অবস্থা তা কতদিন চলবে। আওয়ামী লীগকে লুটেপুটে সারা বাংলাদেশে ধনী দুই লাখ লোক। এর বাইরে যারা আছে তারা তো দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তাতে নিষ্পেষিত।
তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্য করে বলেন, বিগত ১৪ বছর যা হয়েছে তা আর আমরা পিছনে তাকাতে চাই না। আমরা চাই প্রশাসন আগামীতে আমাদের পক্ষে কাজ করার প্রয়োজন নেই, আমরা চাই আপনারা আজকে থেকে নিরপেক্ষ হয়ে যায়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে যান। দেশের আইন অনুযায়ী যে দায়িত্ব আপনাদের দেওয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে পালন করুন। দেশের আইন অনুযায়ী বিরোধী দলকে মিটিং মিছিল করার যে আইন সংবিধানে বলা হয়েছে সেই অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে দিন। যদি রাষ্ট্রবিরোধী কোন কিছু করি তাহলে আমাদেরকে ধরবেন। ইতিপূর্বে অনেক পুলিশ অফিসার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। আমরা ঘটনা জানিও না তারপর বিএনপির শত শত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সেই মামলাগুলোর একটি নাম দিয়েছে গায়েবী মামলা। এই গায়েবি মামলা দিয়ে ইতিপূর্ব বিএনপি নেতা কর্মীদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও পারবেনা। আপনারা প্রশাসন আইনের পক্ষে কাজ করুন সরকারের পক্ষে না। আপনারা সরকারের হুকুম পালন করবেন কিন্তু অবৈধ কোন আদেশ পালন করবেন না। ওই খুনের মামলার আসামি কর্নেল তারেক সাঈদ, রানা ও আরিফ অবৈধ আদেশ পালন করার কারণে তাদের সাজা হয়েছে। আজকে যারা অবৈধ আদেশ পালন করবেন ভবিষ্যতে তাদেরও এরকম সাজা হতে পারে। সুতরাং সাবধান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে গণজাগরণ শুরু হয়ে গেছে। বিশ্ব বিবেক জেগে উঠেছে। এ সরকারের সকল অবৈধ কর্মকান্ড বিদেশীদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা বিদেশ গিয়েছিল আপনারা দেখেছেন প্রবাসীরা তাকে কিভাবে আপ্যায়ন করেছিলেন। আমাদেরও কিন্তু লজ্জা হয়, আমাদের কিন্তু কষ্ট হয়। কারণ তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার সাথে যে আচরণগুলো করা হয়েছে সেটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে করা হয়নি। দেশের মানুষের প্রতি যে অবিচার নির্যাতন করা হয়েছে, হত্যা, গুন ও খুন করা হয়েছে এটার জন্যই তার বিরুদ্ধে এই অবস্থা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানকে আমরা কথা দিয়েছি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপিকে সারা বাংলাদেশের মধ্যে একটি মডেল মহানগরী হিসাবে গড়ে তুলবো। আগামীতে যে আন্দোলন সংগ্রাম হবে, মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এবং হাসিনা সরকার পতনের জন্য যে আন্দোলন হবে সেই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সারাদেশের চেয়ে বেশি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। এবং আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করবো। সে প্রতিশ্রুতি কিন্তু আমরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দিয়েছিলাম। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভবিষ্যৎ কান্ডারী জননেতা তারেক রহমান আন্দোলনের ডাক দিবেন। সে আন্দোলনের সবাইকে শরিক হতে হবে। একটা কথা বলতে চাই প্রতিদিন না মরে একদিন মরবো। আমার এই দেশকে এই স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করবো। এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। দেশের মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব। এমন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করবে ইনশাআল্লাহ।
সম্মেলন শেষে হাজী মনির হোসেনকে সভাপতি ও হারুনুর রশিদ রানাকে সাধারণ সম্পাদক এবং শওকত হোসেনকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি ঘোষণা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু।
মহানগর ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সমন্বয়ক হাজী মনির হোসেনের সভাপতিত্বে ও সহ- সমন্বয়ক হারুনুর রশিদ রানার সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এড. জাকির হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আহ্বায়ক এড. সরকার হুমায়ূন কবির, যুগ্ম আহ্বায়ক মনির হোসেন খান, যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন আনু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ রেজা রিপন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এড. রফিক আহমেদ,নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির আহ্বায়ক মাসুদ রানা, সদস্য সচিব এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান।
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান, মাকিত মোস্তাকিম শিপলু, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সেলিম আহমেদ, মহানগর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ফারুক হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, মহানগর ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ মামুন প্রমুখ।