সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
অভিযোগ ওটেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সেক্রেটারি সাইফুদ্দীন আহমেদ দুলাল প্রধানের যোগসাজসে নিজের গর্ভধারণী বৃদ্ধা মায়ের কাছ থেকে জালজালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃজন করে বাড়ি থেকে মাকে বের দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের এক সন্তান। ভূমিহীন হয়ে যখন প্রশাসনের সহযোগীতা চেয়ে দুলাল প্রধানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন অসহায় বৃদ্ধা মা, তখন সেই কুলাঙ্গার সন্তান দুলাল প্রধানকে বাঁচাতে নিজের মায়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছে।
নিজের মায়ের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে ও নিজের বন্ধুর পক্ষে সাফাই গাইলেন সন্তান। এই সন্তান ও দুলাল প্রধানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জের সুযোগ্য পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।
জানাগেছে, বন্দর নবীগঞ্জ রসুলবাগ এলাকার মৃত গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে তানভির আহম্মেদ সোহেল সংবাদ সম্মেলন করেছে। ২৬ এপ্রিল শুক্রবার সকালে বন্দর প্রেসক্লাবে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সন্তান তানভির আহমেদ সোহেল মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে বলেন, আমার মায়ের করা অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাদের পারিবারিক জমি জমা নিয়ে নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। এ নিয়ে আদালতে দেওয়ানী মামলা চলমান। আদালত যে রায় দিবে তা আমি মেনে নেব। আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। আর আমাদের জমি আমার নামে নয় এর পাওয়ার দেয়া আছে আমার বড় ভাই জাপান প্রবাসী শফিউর রহমান ভেনটির নামে।
সোহেলের আরও দাবি করেন, আমার মা আমার নামে ১শতক জমিও দেয়নি বা আমি কোন দলিল করে নেইনি। তারপরেও কতিপয় ইন্ধনদাতাদের প্ররোচনায় আমার মা আমার ও আমার বন্ধু কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহাম্মেদ দুলাল প্রধানকে জড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা কথা বলে সাংবাদিকদের কাছ থেকে সহমর্মিতা নেয়ার চেষ্টা করেছে মাত্র। আমার ধারণা কোন অপশক্তি বা জামাত-বিএনপির কোন লোকের প্ররোচনায় কথিত সংবাদ সম্মেলন করেছে। যাতে কাউন্সিলর দুলাল প্রধানকে হেয় করা যায়।
তিনি আরও বলেন, আমার চাচাতো বোন শারমিনকে জড়িয়ে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়েকে জড়িয়ে কিছু মিথ্যা রটনা রটিয়ে যা অনেকটা নোংরামি। আর আমি নাসিক ২৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আর কাউন্সিলর দুলাল ২৩ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর সে আমাদের পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপও করেনি। আমি মনে করি আমার মাকে দিয়ে কতিপয় ইন্ধনদাতা প্রশাসনকে দিয়ে হয়রানি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি মিথ্যাচারের নিন্দা জানাই।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন- তারভীর আহম্মেদ সোহেল, তার ভগ্নিপতি আনোয়ার হোসেন, স্ত্রী সায়মা আহম্মেদ, চাচাতো বোন শারমীন আমীর ও চাচা রাশেদুল কবির।
অন্যদিকে এর আগের দিন বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দরে এক বিধবা নারীর জমি দখলের অভিযোগ ওঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দীন আহমেদ দুলাল প্রধানের বিরুদ্ধে। জমি দখলের অভিযোগ তুলে ওই ভুক্তভোগীরা ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ওই বিধবা নারীর সন্তান এই তানভীর।
সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দুলাল প্রধান ওই ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা বিধবা নারী ও মানসিক প্রতিবন্দী ছোট ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের জমিটিও দখল করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। বিধবা ফরিদা বেগম বন্দর থানার সামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ রোড রওশোন বাগ, নবীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এবং মৃত গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ভুক্তভোগীর বড় মেয়ে মুন ইসলাম শাকিল, ছোট ছেলে মানসিক প্রতিবন্দি মোস্তাফিজুর রহমান ও ছেলে সাব্বির হিমেলের স্ত্রী রুমা।
সংবাদ সম্মেলনে ফরিদা বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমার চার ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করে আসছিলাম। কিন্তু আমার তৃতীয় ছেলে তানভীর আহমেদ সোহেল একদিন হঠাৎ ২০১২ সালে আমাকে এসে বলে যে তার ও আমার বড় ছেলে শফিউর রহমান ডেনটির (বর্তমানে জাপানে অবস্থানরত) সম্পত্তি আমার ও আমার অন্যান্য সন্তানদের নামে লিখে দেওয়ার কথা বলে সকলের কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয়। এমনকি ওই দলিলে কি লেখা আছে তা আমাদের বুঝতেও দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার ২ বছর পরে জানতে পারি কাউন্সিলর দুলালের শেল্টারে সম্পত্তি আমাদের নামে না দিয়ে উল্টো প্রতারণার মাধ্যমে আমার বড় ছেলে শফিউর রহমান ডেনটির নামে লিখিয়ে নেয়। পরে আমার তৃতীয় ছেলে তানভীর আহমেদ সোহেলের নামে ওই সম্পত্তি লিখিয়ে নেয়া হয়।
বিধবা বৃদ্ধা মাকে নিজ স্বামীর ঘর থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, বাড়িতে প্রবেশ করতে দেয় না ছেলে সোহেল। ঢুকতে চাইলে আমার ছেলের স্ত্রী (সোহেলের) সায়মা আহমেদ আমাকে বলে তোর হাত পা কেটে দেব, আর এই ঘরে ঢুকতে গেলে হাত পা কেটে গুম করে ফেলবো।
‘বর্তমানে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েই সোহেলের ব্যবসায়ীক পার্টনার নাসিক ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধান ও শারমিন আমিরের সহযোগীতায় সম্পত্তি বিক্রি করতে শুরু করে। এছাড়াও র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে পুতুল, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ এদের নামপরিচয় বিক্রি করে আমাকে নানাভাবে হুমকি ও হয়রানী করছে তারা। এদের পরিচয় দিয়ে আমার দ্বিতীয় ছেলে সাব্বির আহমেদ হিমেল এর নামে বন্দর থানায় একের পর এক মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করে।
তিনি আরও বলেন, আমার তৃতীয় ছেলে তানভীর আহমেদ সোহেলের স্ত্রী সায়মা আহমেদ আমার দেবরের মেয়ে শারমিন আমির এবং কাউন্সিলর দুলাল প্রধান প্রভাব বিস্তার করে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখায় এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। তাদের এরূপ কর্মকান্ড দেখে সম্পত্তি ফিরে পেতে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করা হয়। আমি এখন বাঁচতে চাই।