আড়াইহাজারে তালাক দেয়ায় স্ত্রীর শরীরে এসিড নিক্ষেপ, সাবেক স্বামী গ্রেপ্তার

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সংগঠিত ঘুমন্ত স্ত্রী ও ৬ বছরের মেয়ের উপর সিরিঞ্জ দিয়ে এসিড নিক্ষেপের নৃশংস ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী খোকনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য জানান র‌্যাব-১১ এর উপ-অধিনায়ক সানরিয়া চৌধুরী।

তিনি আরো বলেন, গত ২৩ জুন রাত অনুমান সোয়া ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ঘুমন্ত মা ও শিশুর উপর এসিড নিক্ষেপের মতো একটি নৃশংস ঘটনা ঘটে, যা নারায়ণগঞ্জ সহ সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। উক্ত ঘটনার এজাহার বিশ্লেষণে জানা যায় যে, ভিকটিম মোর্শেদার ১ম স্বামী কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত হওয়ার পর তার কন্যা সন্তান অপর ভিকটিম মারিয়া (৬) সহ মোর্শেদার মায়ের বাড়িতে বসবাস করত। গত ৫ মাস পূর্বে মোর্শেদার সাথে অত্র মামলার প্রধান অভিযুক্ত খোকনের ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়।

উল্লেখ্য যে, গ্রেপ্তারকৃত আসামীর এটি তৃতীয় বিয়ে। বিয়ের পর থেকে শিশু মারিয়াকে তার নানির বাড়িতে রেখে আসার জন্য চাপ দেয় মোর্শেদার স্বামী। এতে রাজি না হওয়ায় মোর্শেদার স্বামী তাকে প্রায়ই নির্যাতন করত। এরই জের ধরে বিয়ের ৩ মাস পর গ্রেপ্তারকৃত আসামী খোকন মোর্শেদাকে মারপিট করে তার মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকে মোর্শেদা তার সন্তান মারিয়া সহ তার মায়ের বাড়িতে বসবাস করত।

গত ২৩ জুন রাত সোয়া ৯টার সময় মোর্শেদা তার সন্তান মারিয়া সহ নিজ শয়ণকক্ষে শুয়ে থাকাবস্থায় গ্রেপ্তারকৃত আসামী খোকন তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জন আসামীকে নিয়ে তার স্ত্রী ও শিশু মারিয়ার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ভিকটিমদ্বয়ের মুখমন্ডল বিকৃত করার হীন উদ্দেশ্যে উক্ত তারিখ রাতে ভিকটিমদ্বয়ের শয়ণকক্ষের খোলা জানালার নিকট উপস্থিত হয়। তখন তাদের উপস্থিতির শব্দে ভিকটিম মোর্শেদা জানালার দিকে তাকিয়ে ঘরের বৈদ্যুতিক আলোতে গ্রেপ্তারকৃত আসামী সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীদের দেখে চিৎকার দিলে, গ্রেপ্তারকৃত আসামী খোকন তার হাতে থাকা সিরিঞ্জ দিয়ে জানালার পাশ হতে ভিকটিম মোর্শেদার ডান পায়ের উরুতে ও ভিকটিম এর কন্যা সন্তান মারিয়ার মুখে নৃশংসভাবে এসিড নিক্ষেপ করে ঝলসে দেয়।

তখন তাদের আর্ত-চিৎকারে মোর্শেদার মা সহ আশেপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে, মোর্শেদা জানায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামী খোকন (৫৫) তার সঙ্গীয় অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামীদের সহায়তায় তাদেরকে এসিড নিক্ষেপ করেছে। উক্ত বিষয়ে অবগত হয়ে ভিকটিমদ্বয়ের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় তাদেরকে জখমপ্রাপ্ত অবস্থায় আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে ভিকটিমদ্বয়কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। বর্তমানে তারা উক্ত হাসপাতালে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছ। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ভিকটিমের মা সাহেদা বেগম (৬৫) বাদী হয়ে গত ৪ জুলাই এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ এর ৫(ক)/৫(খ)/৭ ধারায় আড়াইহাজার থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন।

৩। পাশবিক এই ঘটনা সংক্রান্তে র‌্যাব-১১, সদর কোম্পানি এর গোয়েন্দা টীম যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে ছায়া তদন্ত শুরু করে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক প্রধান আসামী খোকনকে সনাক্ত ও তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে ৬ জুলাই দিবাগত রাতে কুমিল্লা জেলার তিতাস থানাধীন রায়পুর পুরান বাতাকান্দি এলাকা হতে আসামীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।