সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বেশ গুরুত্বপুর্ণ হয়ে ওঠেছে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) সংসদীয় আসনটি। এখানে নৌকা ও লাঙ্গলের লড়াই বেশ জমে ওঠেছে। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সংখ্যা জাতীয় পার্টির তুলনায় বেশি হলেও সাধারণ ভোটাররা ঝুকে আছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের দিকে। অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে ভোট আদায় করার চেষ্টা করতে গিয়ে দিনকে দিন নৌকার পক্ষে কমছে জনসমর্থন। নির্বাচনী আচরণবিধি একের পর এক লংঘন করার দায়ে নির্বাচন কমিশনের কঠোর হস্তক্ষেপে আরো বেকায়দায় পড়ে যাচ্ছে নৌকা। সেই সুযোগে দিনকে দিন চাঙ্গা হয়ে ওঠেছে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল।
জানাগেছে, প্রচারণার শুরুতেই নৌকার প্রার্থী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান সহ আরো ৮জন ইউপি চেয়ারম্যানকে শোকজ করেছেন নারায়ণগঞ্জের বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মোহসিনা ইসলাম। সোনারগাঁও পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলরের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় সোনারগাঁও পৌর যুবলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম আসাদকে থানা পুলিশ আটক করলেও অনেক চেষ্টা তদবির করেও থানা থেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয় নৌকার লোকজন। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হয়।
সবশেষ আচরণবিধি লংঘনের দায়ে জরিমানা করেছে মোবাইল কোর্ট। সব মিলিয়ে নৌকার পক্ষে ত্রাহি অবস্থা বিরাজ করছে। চেয়ারম্যানদের শোকজের পর তারাও নৌকার পক্ষ থেকে পিছু হটেছেন। এসব ইউপি চেয়ারম্যানেরা নামকাওয়াস্তে নৌকার প্রার্থী কায়সার হাসনাতকে নিয়ে উঠান বৈঠক করেই তাদের দায়িত্ব শেষ করছেন। কিন্তু ভোট আদায়ে তাদের মুল কাজটি করছেন না। অন্যদিকে এমপি খোকা ও তার লোকজন যাচ্ছেন ঘরে ঘরে ভোট প্রার্থনায়।
জানাগেছে, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের পক্ষে আচরণবিধি লংঘণ করে প্রচারণা চালেনোর দায়ে জরিমানা করেছে মোবাইল কোর্ট। ২৮ ডিসেম্বর আচরণবিধি লংঘণ করে ভুড়িভোজের আয়োজন করায় আয়োজনকারী হারুন অর রশীদকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সোনারগাঁ উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের মনারবাগ এলাকার জামানের বাড়িতে নৌকা সমর্থিত নেতাকর্মীদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করায় ওই বাড়ির বাসিন্দা ও অনুষ্ঠানের আয়োজক ব্যবসায়ী বৈদ্যেরবাজার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (মধু ঠাকুরের বাড়ি) সভাপতি হারুনুর রশীদকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর সোনারগাঁও পৌরসভার সাবেক এক কাউন্সিলরের সঙ্গে পৌর যুবলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম আসাদের মধ্যে হাতাতাতির ঘটনায় যুবলীগ নেতা আসাদ ও কাউন্সিলরকে আটক করে সোনারগাঁ থানা পুলিশ। নৌকার প্রার্থী সহ নৌকার নেতারা থানা থেকে ছাড়াতে জোর তদবির ও লবিং করেও থানাকে আসাদকে ছাড়াতে পারেনি। পরে দুজনকেই গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করে পুলিশ।
এর আগে নির্বাচনের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছেন এখানকার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত। নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত, উপজেলা আওযামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবুসহ উপজেলার আরো ৮জন ইউপি চেয়ারম্যানকে শোকজ করেছেন নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ মোহসিনা ইসলাম।
গত ২০ ডিসেম্বর বুধবার নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মোহসিনা ইসলাম স্বাক্ষরিত আলাদা চিঠিতে এই শোকজ করা হয়। চিঠিতে গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে কমিটির সভাপতির কার্যালয়ে সশরীরে অথবা উপযুক্ত কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে সকলকে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। তারা জবাব দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সামসুল ইসলাম ভুঁইয়া।
শোকজ পাওয়া জনপ্রতিনিধিদের রয়েছেন সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুম, বৈদ্দ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকার, সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মোল্লা, কাঁচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু।
নৌকা প্রার্থীর নোটিশে বলা হয়, “১৯ ডিসেম্বর তিনি শতাধিক মোটরসাইকেলসহ হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল করেন; যা যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।” প্রার্থীর এ আচরণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধির ৬(ঘ) ও ৮(ক) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া চেয়ারম্যানদের নোটিশে বলা হয়েছে, “তারা সরকারি গাড়ি নিয়ে, জ্বালানি পুড়িয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীর নির্বাচন সমন্বয়কারী হাফেজ মাহমুদুল আনোয়ার এ বিষয়ে অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।”