সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খান র্যাবের হতে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন যাবত কারাগারে রয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের কয়েকদিন পূর্বে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পলাতক জাকির খানকে র্যাব-১১ ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এর আগে নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানতেন তিনি প্রবাসে আত্মাগোপনে রয়েছেন। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় যুবদলের কর্মী শাওন প্রধান নিহত হোন।
ওই বছর ১৩ সেপ্টেম্বর সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে সদস্য সচিব করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। যে কমিটিতে জাকির খানকে সদস্যও রাখা হয়নি এবং জাকির খানের অনুগামী নেতাদেরকেও কমিটিতে রাখা হয়নি। রহস্য হলো কমিটি ঘোষণার সপ্তাহখানিক পূর্বে জাকির খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখনো তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এবার সেই বিষয়টি খোলাসা করেছেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। বিএনপির এক নেতাই জাকির খানকে র্যাবের কাছে ধরিয়ে দিয়েছে বলে গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলা নিয়ে ৫ এপ্রিল শুক্রবার বাদ জুমা নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমন গোমর ফাঁস করে দেন একেএম শামীম ওসমান।
শামীম ওসমান বলেন, গতকাল সাংবাদিকরা আমাকে ফোন করে বলেছেন জিয়াউর রহমানের নাকি একটি ম্যুরাল ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে সেজন্য বিএনপি এব্যাপারে আমাকে দায়ী করছে। আমি সাংবাদিকের কাছেই বিষয়টি অবহিত হই। আমি এ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতে চাইনি, কারন যারা আমাকে দায়ী করেছেন তাদেরকে আমি এ পর্যায়ের নেতা মনে করি না, কিংবা কথার জবাব দেয়ার প্রয়োজন মনে করি না। জবাব দেয়ার রুচিও আমার নাই। কারন তারা এ রকমই নেতা, বলা উচিত না, তবুও বলে দিচ্ছি, কারন তারা সরকারকে হেল্প করেছে, কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জে একটা গোলাগুলি হয়েছিলো পুলিশের সঙ্গে, সেই ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য ছাত্রদলের সাবেক নেতা যার বাড়ি দেওভোগ, নাম জাকির খান, যারা গতকাল আমাকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে তাদের মধ্যে একজন পুলিশ র্যাবের কাছে জাকির খান কোথায় থাকে সব তথ্য দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে, এই হলো তাদের চরিত্র। এগুলোরে কি নেতার পাল্লায় ধরতে পারি?
প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু গণমাধ্যমে বক্তব্যে শামীম ওসমানকে দায়ী করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, বৃহস্পতিবার তারা (বিএনপির নেতারা) নাকি আমাকে নিয়ে খুব অশ্লীল কথা বলেছে। সাংবাদিকরা বলেছে, নারায়ণগঞ্জে কিছু ঘটলে বিএনপি ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আপনাকে দায়ী করে কেন। আওয়ামী লীগকে দায়ী করে না, আরো এমপি, মন্ত্রী, মেয়র আছে তাদের দায়ী করে না। আমি মনে করি, তারা একারণেই দায়ী করে কারণ ১৬ জুন আমাকে বোমা মেরে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। এরাই ক্ষমতায় আসার পর বায়তুল আমানে গুলি করা হয়েছে।
শামীম ওসমান বলেন, ‘২০১৪ সালেই এটা (চাষাড়া জিয়া হল) ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজউক এটাকে ঝুকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। একারণেই এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২ তারিখে আমাদের মিটিং ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ তারিখে মিটিং হবে সেখানে এমনি এটা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটা তো এমনিই ভাঙা হবে। ৩ তারিখ কেন ভাঙতে যাবো। ওরা হয়তো এটাকে ভেঙেছে অথবা ভেঙে পড়েছে। ওরা (বিএনপি) এটা নিয়ে ইস্যু তৈরি করতে চায়। ওরা চায় না এখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রতিষ্ঠিত হোক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি এখানে একটি মঞ্চ হবে। এখানে ১৯৪৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সকল ইতিহাস ধারণ করা হবে। এখানে বিএনপিরও গর্ববোধ করা উচিত। কারণ তাদের পূর্বপুরুষরাও এখানে অবদান রেখেছে। গতকাল দেখলাম আমাকে দায়ী করা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল তো থাকারই কথা না। পঞ্চম সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্ট জিয়াউর রহমানের শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘তারা (বিএনপি) নাকি ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জনগণ ও আমি তাদের আল্টিমেটামের শক্তি দেখতে চাই। ওরা খুব নোংরা ও অশ্লীল কথা বলেছে। এ সকল অশ্লীল কথা বলে আমার লোকজনকে ফোন করার আগেই তারা বলল ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বললে সেন্ট্রালে আমাদের দাম বাড়ে। ভাই মানে আমি শামীম ওসমান। আমার বিরুদ্ধে কথা বলে বড় নেতা হতে পারলে হোক। আমার আপত্তি নেই। কারা এসব কথা বলেছে আমি তাও জানি না। আমি তাদের বলতে চাই, আপনারা পারবেন না। এটা আমাদের কর্তব্য স্মৃতি রক্ষা করা। এখানে কেউ বাধা দিলে আমরা তাদের প্রতিহত করবো, মানুষ প্রতিহত করবে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগেও কিছু এক্সট্রিম বামপন্থী এটা নিয়ে কথা বলেছিল। আমি এখানে বসে ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়েছি। তারা আর কোনো কথা বলেনি। এখানে জামায়াত ডান বা বাম নেই। এরা একটা গ্রুপ। ওরা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চায়।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙতে চাইলে বহু আগেই ভাঙতাম। দিনের বেলা ভাঙতাম। এর আগেও তো ১৯৮৯ সালে জিয়াউর রহমানকে আটকে দিয়েছি। জীবিত অবস্থায়ই তাকে আটকে দিয়েছি। সুতরাং রাতের বেলা ভাঙার প্রশ্ন আসে না। ওরা এটা করে একটা ইস্যু তৈরি করতে চায় যেন এ কাজটা না হয়। এ ধরনের অশান্তির রাজনীতি করার চেষ্টা যারা করেন তাদের বলতে চাই অন্য এলাকায় গিয়ে এসকল কাজ করুন। নারায়ণগঞ্জের মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে। এমন কিছু করবেন না যেন নারায়ণগঞ্জ অশান্ত হয়ে ওঠে।’
তিনি বলেন, ‘আমার দুই নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব ও ওবায়দুল মোক্তাদির সাহেব, তারা বলেছেন, দ্রুত এ কাজটা করো। আমি আশা করি, আগামী ১৫ আগস্ট এ মঞ্চ আমরা ওপেনিং করবো। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের নিয়েই এটা ৬ দফা ভবন ওপেনিং করবো।’