সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে দেশের অন্যতম দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ দেখা যাচ্ছে আদালতপাড়ায়। বিএনপি নেতাকর্মীরা পূর্বের নাশকতার মামলায় আদালতে নিয়মিতই দিচ্ছেন হাজিরা। আর আওয়ামীলীগের বেশকজন নেতা যখন চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তখন তাদের হচ্ছে নিয়মিত রিমা- শুনানি ও জামিনের আবেদন শুনানি। এসব আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের জামিন করাতেও আদালতপাড়ায় নিয়মিত দেখা যাচ্ছে আইনজীবীদের পিছনে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাদের দৌড়ঝাঁপ। বিএনপি নেতাকর্মীরা হাজিরা দিতে দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কিন্তু সরকারি দলের নেতাকর্মীরা যখন মামলায় জড়িয়েছেন তখন তাদের পিছনে দৌড়াতে হচ্ছে সরকারি দলের নেতাদেরও। আবার রিমান্ড শুনানি ও জামিনের শুনানি নিয়ে বেশ বিপর্যন্ত সরকারি দলের নেতারা।
৭ মে মঙ্গলবারও নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় ফতুল্লার যুবলীগ নেতা আজমত উল্লাহ ও আওয়ামীলীগ নেতা গিয়াসউদ্দীন ওরফে গেসু সহ ২৪ জন নেতাকর্মীকে। সম্প্রতি ফতুল্লায় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মামলায় এসব নেতাকর্মীরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। মঙ্গলবার জামিন শুনানি নির্ধারিত না থাকায় বুধবার জামিন শুনানির দিন ধার্র্য্য করেছেন আদালত। এদিন ফতুল্লা স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক শীর্ষ নেতাকেও দেখা গেল আসামি হওয়া এসব নেতাকর্মীদের সঙ্গে আদালতপাড়ায়। একইদিন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নালের একটি মামলায় জামিনের শুনানি হয়। যার শুনানি পরবর্তী তারিখ ধার্য্য করা হয়।
সূত্রে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার আলোচিত সন্ত্রাসী শাহআলম গাজী ওরফে টেনু গাজীকে একটি মারধরের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০ জানুয়ারি ফতুল্লা কুতুবপুরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী মীর হোসেন মিরুকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পৃথক দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মীরু কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শহরের নিতাইগঞ্জ এলাকায় মসজিদের টাকা আত্মসাত নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ১৮নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর কবির হোসাইন ও সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে ওই দুই নেতা সহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে পাঠায় পুুলিশ। যার মধ্যে কামরুল হাসান মুন্না মহানগর শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক। আদালতে তারা সমঝোতার শর্তে জামিন পান। ২০ এপ্রিল ফতুল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুকে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওইদিন তিনটি থানায় বিশেষ অভিযোন চালিয়ে ৩৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চুন্নুকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদের ছাড়াতে অনেক আওয়ামীলীগ নেতারা আইনি সহায়তার জন্য আদালতপাড়ায় আইনজীবীদের পিছনে দৌড়াতে দেখা যায়।
গত ১৮ এপ্রিল বন্দর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার ডিস বাবুকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে জেল গেটের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করার নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তারের পর ২১ এপ্রিল ফতুল্লা মডেল থানায় ডিস বাবুর বিরুদ্ধে আরও দুটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন মোক্তার হোসেন ও কুসুম নামে ক্যাবল ব্যবসায়ী। কাউন্সিলর বাবুর জন্য আদালতপাড়ায় অনেক সরকারি দলের নেতাকর্মীদের নিয়মিত দেখা যায়। তিনি এখনও কারাগারে রয়েছেন।
এছাড়াও সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন দেওভোগ এলাকার সবুজ নামের একজন যুবক। নিখোঁজ সাদমান সাকির ঘটনায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সবুজ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সেলিম আহমেদ দিনারের ছোট ভাই। দিনার হলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাতের সঙ্গে রাজনীতিতে জড়িত। আদালতপাড়ায় জিএম আরাফাতকেও দেখা গেছে সবুজ গ্রেপ্তারের পর।
২২ এপ্রিল একটি চাঁদাবাজি মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য জয়নাল আবেদীন ওরফে আল জয়নাল। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবদুল কাদিরের আপন বিয়াই। বিয়াই জয়নালের পক্ষে আইনজীবীদের দ্বারস্থ হচ্ছেন নিয়মিত আব্দুল কাদির।
২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে সিদ্ধিরগঞ্জ যুবলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আগের দিন রাতে এক কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন মডার্ণ অব কোম্পানী নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ল্যান্ড এক্সিকিউটিভ আজমত আলীা।
আবার গত ২০ এপ্রিল ফতুল্লার ভূইগড়ে রূপায়ন টাউনে হামলার ঘটনায় দুটি মামলায় আসামী হয়েছেন জেলা কৃষকলীগের সভাপতি নাজিম উদ্দীন ভূঁইয়া। নাজিম উদ্দীন ভূঁইয়া নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে একাধিক ভূমিদূস্যতা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ ওঠেছিল। তিনি আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন বলে জানাগেল।
এদের মধ্যে অনেক নেতাকর্মীরা এখনও জামিন পাননি। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। একদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিদিন হাজিরা দিচ্ছেন। অন্যদিকে সরকার দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলায় আমাসি হয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাড়াচ্ছেন। আবার এসব নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করতেও দলীয় নেতাকর্মী হিসেবে তাদের পাশে দাড়াতে আইনি সহায়তার জন্য আইনজীবীদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন। ফলে নারায়ণগঞ্জের দুটি শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আনাগোনা এখন আদালতপাড়ায়।