সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলা পরিষদের গত নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারতেন বলেও মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, তিনি চাইলে বন্দর উপজেলার প্রতিটা বুথ দখল করে ইলেকশন করা যাইতো। এদিকে বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ২৭ জুলাই। এ সামনের নির্বাচন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, আমি চাইলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল করে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পারতাম।আমরা নির্বাচনে ভোট দখল করি নাই। আমি চাইলে সেলিম ওসমানের কথায় সারা নারায়ণগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, কেউ বাকি থাকতো না, প্রত্যেকটা বুথ দখল করেই ইলেকশন করা যাইতো।
সূত্রেমতে, বন্দর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন এই ইউপির চেয়ারম্যান ছিলেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিতে মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এবার মুছাপুর ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাঁর ছেলে মাহমুদুল হাসান শুভ। মনোনয়নপত্র কিনেছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের স্ত্রীও।
এ নিয়ে ৯ জুলাই মঙ্গলবার বন্দর ইউনিয়নের একটি পার্কে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় ক্ষোভ ঝারেন সেলিম ওসমান। এই সময় মুছাপুর ইউপি নির্বাচনে প্রশাসনের কাউকে ‘নাক গলাতে’ নিষেধও করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান বলেন, ‘প্রশাসনকে অনুরোধ করবো, এই নির্বাচনের মধ্যে কোনো অবস্থায় নাক গলাতে আসবেন না। সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করবো, প্রতিটি কেন্দ্রে যতক্ষণ ভোট হবে ততক্ষণ ক্যামেরা চলবে। প্রয়োজনে ভেতরে বাইরে দুই জায়গায়ই ক্যামেরা চলবে। নির্বাচন করবেন নাকি ছাইড়া দিবেন? ছাইড়া দিলে ছাইড়া দেন।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বন্ধ করার জন্য ইতোমধ্যে কয়েকটা মামলা হাইকোর্টে পেশ করা হইছে। আমি ধৈর্য ধারণ করতে অনুরোধ করছি। এবং মাকসুদকেও অনুরোধ করছি, শান্তি ফিরিয়ে আনো। অশান্তি করবা, কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বের করে নিয়ে আইসো না। যতক্ষণ আমার জীবন চলবে ততক্ষণ আমার পাঁচটা ইউনিয়নের উন্নয়ন চলবে। আমার শত্রু থাকলেও চলবে। মানুষের কল্যাণের জন্য কেউ জনপ্রতিনিধি হইলে আমি তার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে রাজি আছি। গতবারের উপজেলা নির্বাচনে (বন্দর উপজেলা) কিন্তু পয়সার খেলা হইছে। আমরা দুধ খাই না। কে কত টাকা কোথায় খরচ করেছে, কোন মসজিদে কত টাকা দিয়েছে, কার কত টাকা ডিক্লারেশন ছিল…সময় কথা বলবে’।
মুছাপুর ইউপি নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এত হৈ-চৈ করে কেন নির্বাচন করবেন? এখানে তিনজন ক্যান্ডিডেট আছে আর ওদের বাড়ির তিনজন ক্যান্ডিডেট আছে। মুছাপুরবাসী আপনারা যদি সমর্থন না দেন তাহলে এরা কেন নির্বাচন করতে যাবে? পয়সার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নমিনেশন পেপার কিনতে যাওয়ার সময় পাহারা দেওয়া হয়েছে। আমরা তো এখনও কিছু বলি নাই। মুছাপুরের সবাই আমার আপন মানুষ, ভয় থাকলে নির্বাচন করার দরকার নাই। নাহলে ওই চেয়ারম্যানের কথাই ঠিক থাকুক, বাপে-পুতেই মুছাপুর চালাক। আপনারা সিদ্ধান্ত দিলে নির্বাচন হবে, অন্যথায় নির্বাচন হবে না। আমি তাহলে পাঁচটা ইউনিয়ন না, চারটা ইউনিয়ন নিয়ে কাজ করবো।’
মাকসুদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘১২ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে এই নির্বাচনে খরচ করা হয়েছে। এই টাকাটা আসলো কোথা থেকে? এখন ছেলেকে নামানো হইছে। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানকে রিকোয়েস্ট করবো, পরিবারতন্ত্র তৈরি কইরেন না, আপনি বিপদে পড়ে যাইবেন। আপনার পোলা এত ভালো না। আপনারে বেঁইচা ফেলবে। আইন অনুযায়ী নির্বাচন করেন। পয়সা দিয়ে ওকে কিনবেন তাকে কিনবেন? কেনার দিন শেষ। মনে রাখবেন, লাঠির কাছে এমএ পাশ নাই। মাইরের উপর ওষুধ নাই।’
সেলিম ওসমান বলেন, ‘আপনি আপনার ছেলে, বউ, শালারে (শ্যালক) দিছেন। বন্দরের মানুষ এত বোকা না আর সেলিম ওসমানও বোকা না। খোঁচাইয়েন না, কেইচ্চা (কেঁচো) বাইর হইছে, সাপ এখনও বের হয় নাই। আগামীকাল সময় আছে উইথড্রো করার। অনুরোধ করলাম, নির্বাচন বন্ধ করেন। এই নির্বাচনের ঝঞ্ঝাট না করে এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনেন।’