সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে আগামী ১৩মে সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইফতার পার্টি। বিএনপির আইনজীবীদের এই ইফতার পার্টি নিয়ে শুরু হয়েছে ধু¤্রজাল। কারন ফোরামের পাল্টা কমিটির নেতারা এই ইফতার পার্টিকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। একদিকে ইফতার পার্টিতে যোগদান করতে আইনজীবীদের মোবাইলে ম্যাসেজ করে দাওয়াত পাঠাচ্ছেন আয়োজকরা। অন্যদিকে বেনামে বিএনপির আইনজীবীদের মোবাইলে ওই ইফতার পার্টি বর্জনের অনুরোধ জানিয়ে ম্যাসেজ পাঠানো হচ্ছে। তবে আইনজীবী ফোরামের ব্যানার নিয়েই মুলত এখানে বিরোধ। পাল্টা দুটি কমিটি থাকলেও দুটি কমিটির কোনটি আসল নকল তা নিয়ে বেশ প্রশ্ন ও সংশয় রয়েছে শুরু থেকেই।
৯ মে বৃহস্পতিবার আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীরা জানান, অ্যাডভোকেট কাউসার আলম চৌধুরী টুটুল আগামী সোমবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে অনুষ্ঠিত ইফতার পার্টিতে যোগদান করতে আইনজীবীদের দাওয়াত পাঠাচ্ছেন। অন্যদিকে বেনামে ওই ইফতার পার্টিতে যোগদান না করতে ম্যাসেজ পাঠাচ্ছেন কে বা কারা। ওই ম্যাসেজে লেখা রয়েছে, ‘জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে বিতর্কিত ব্যক্তিদের আহ্বানে ১৩ তারিখের ইফতার মাহফিল বর্জনপূর্বক ফোরাম তথা বিএনপিকে দালাল মুক্ত করার বিপ্লবী আহ্বান রইলো। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বিএনপি জিন্দাবাজ।’
তবে আইনজীবী ফোরামের পাল্টা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সাংবাদিকদের বলেন, আমার মোবাইলেও ১৩ তারিখের ইফতারপার্টি বর্জনের একটি ম্যাসেজ পেয়েছি। যেই পাঠাক। আমরা ওই ইফতারপার্টি বর্জন করেছি। কারন আইনজীবী ফোরামের দাবি করে তারা আইনজীবী ফোরাম ব্যানার ব্যবহার করতে পারেন না। আওয়ামীলীগ থেকে যেখানে দুই কোটি দুই লাখ হিসেবে আখ্যায়িত ব্যক্তিরা এই ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন সেখানে বিএনপির রাজপথের নেতাকর্মীরা যাবে না। আরেকজন রয়েছেন খোরশেদ আলম মোল্লা কোন রাজপথের কর্মী নয়। সে যখন যাকে পারে ব্যবহার করে। খোরশেদ মোল্লা এখনও জেলা জাতীয়পার্টির প্রচার সম্পাদক। আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করেই এখন বিএনপির রাজনীতিতে সে জড়িত। সুতরাং এসব বিতর্কিত ব্যক্তিদের আয়োজনে যেনো সাধারণ আইনজীবীরা না যায় সেজন্যই বর্জনের ঘোষণা দিয়েছি এবং তাদের প্রতি অনুুরোধ জানাই।
তবে এ বিষয়ে আয়োজকদের একজন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা বলেন, ‘কে বা কারো আইনজীবীদের মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে ইফতার মাহফিল বর্জনের অনুরোধ জানালো সেটা আমরা জানি না। আমিও বিষয়টি শুনেছি। বিএনপির সকল আইনজীবীরা ইফতার মাহফিলে যাবেন এবং কেউ বর্জন করেনি করবেও না। আর যেহেতু ম্যাসেজে কারো নাম নেই সেহেতু এটা ধরে নিতে পারি আওয়ামীলীগের কাজ। আর আওয়ামীলীগ তো জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ইফতার মাহফিল বর্জন করবেই।’
জানাগেছে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে আগামী ১৩ মে সোমবার নারায়ণগঞ্জ নতুন কোর্টের উল্টো পাশের্^ একটি চাইনিজ রেস্তোরায় ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন বিএনপির আইনজীবীরা। ওই অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় বিএনপির একজন শীর্ষ নেতাকে প্রধান অতিথি করার প্রক্রিয়াও চলছে। যেখানে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকেও দাওয়াত করা হতে পারে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেল।
আরও জানা গেল, প্রায় দুই বছর পুর্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ২৮৭ জনের একটি কমিটি ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দীন খোকন। এতে সভাপতি করা হয় অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লাকে। এককভাবে তিনি এই কমিটি ঘোষণা করায় শুরুতেই বিতর্ক সৃষ্টি হয় নারায়ণগঞ্জে। কমিটির বাতিল চেয়ে পর দিন আদালতপাড়ায় বিএনপির আইনজীবীদের একাংশের নেতারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এর দুইদিন পর কমিটিতে উপদেষ্টা পদে রাখা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সহ ১৪৪জনের স্বাক্ষর সহ তালিকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে পদত্যাগের কথা জানান একাংশের নেতারা। এর সপ্তাহ খানিক পর ২১ সদস্য বিশিষ্ট ফোরামের পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন অপর অংশের নেতারা। যেখানে সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুইয়া ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভুইয়াকে করা হয়। দুটি কমিটি হলেও পরবর্তীতে ফোরামের ব্যানারে তেমন একটি কর্মসূচি দেখা যায়নি। এমনকি আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও বিএনপির আইনজীবীদের বিরোধ এড়িয়ে চলতে ফোরামের ব্যানারে নির্বাচনী কার্যক্রমও পরিচালিত হয়নি।