উস্কানীদাতা মেয়র আইভীকে সতর্ক করেছি মাত্র, রাব্বী নিজেই ‍ঋণখেলাপী: টিপু

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জেলা আওয়ামীলীগগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিনা হায়াত আইভীর নিজ বাসভবন হোয়াইট হাউজের বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর দেয়া বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বী। তবে রাব্বীর কাউন্টার বক্তব্য দেয়ার বিষয়ে রহস্য দেখছেন আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

তিনি সান নারায়ণগঞ্জকে বলেছেন, আমি রাজনীতিবিদ। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দিব সেটাই স্বাভাবিক। আমার বক্তব্যের কাউন্টার দিলে দিতে পারতেন মেয়র আইভী নিজে। কিন্তু মেয়র আইভী নিজে জবাব না দিতে পেরে তার কাছ থেকে সুবিধাভোগী রফিউর রাব্বীকে দিয়ে পাল্টা বক্তব্য দেয়ালেন। জবাব দেয়ার মুখ তো মেয়র আইভীর নেই। তিনি দুর্নীতি করেছেন। স্বৈরাচারী সরকারের অংশীদার তিনি। যে কারনে ছাত্র জনতাকে নির্বিচারে গুলি করে মারার সময় তিনি প্রতিবাদ করেননি।

টিপু আরো বলেন, আমার বক্তব্য স্পষ্ট যে আইভীর বাড়ির ইট খুলে আনবো সেভাবে বলিনি কথাটা। বলেছি যদি তিনি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেন তাহলে আমরা নির্দেশ দিলে আইভীর বাড়ির ইটও থাকবে না। এটা তার বাড়ির ইট খুলে আনবো সে রকম না। বরং আমরা আইভীকে সতর্ক করেছি মাত্র। এ কারনেই সতর্ক করেছি যে, যেখানে পুরো নারায়ণগঞ্জে আমরা শান্তির জন্য দিন রাত কাজ করছি, সেখানে তিনি কিভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য আওয়ামীলীগের অফিসে গিয়ে ৫/৬জন লোক নিয়ে কর্মসূচি পালন করলেন? শত শত ছাত্র জনতার শরীরের রক্তে এখনো দেশ লাল হয়ে আছে, সেখানে তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উস্কানী দিলেন। আমরা সে কারনেই উনাকে সতর্ক করেছি, কারন ছাত্র জনতা এখনো তাদের ভাইদের রক্তাক্ত লাশের রক্তের গন্ধ পান। যদি ছাত্র জনতা উনার উপর ক্ষেপে যান তাহলে উনি তো বাড়িতেই থাকতে পারবেন না। সেজন্য বলেছি আপনি উস্কানী দিয়েন না।

রফিউর রাব্বী আমার বক্তব্যের পাল্টা জবাব কেন দিব? এমন প্রশ্ন রেখে টিপু বলেন, রফিউর রাব্বী নিজেই ঋণখেলাপী। মেয়র আইভীর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় সুবিধা নিয়েছে, যে কারনে সে আমাদের বক্তব্যের জবাব সে দিয়েছে। মেয়র আইভীকে খুশি করার জন্যই রাব্বী আমাদের বক্তব্যকে ভিন্ন দিকে নেয়ার জন্য এমন বক্তব্য দিয়েছেন। টাকা পয়সা দিয়ে আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে কেনার মত কেই নেই।

এদিকে জানাগেছে, সেলিনা হায়াত আইভী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেছিলেন, যদি নির্দেশ দেই তাহলে আপনার বাড়ি হোয়াইট হাইজের ইটও থাকবে না। টিপুর এমন বক্তব্যের পর মেয়র আইভীর পক্ষে দাঁড়িয়ে গেলেন রফিউর রাব্বী। অনেকে বলছেন, রাব্বী বিগত ১৫ বছর ধরে মেয়রআিইভীর দ্বারা বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগীদের একজন।

রফিউর রাব্বী টিপুর বক্তব্যের জেরে বলেন, ‘বিএনপির একজন বলেছেন, একজনের বাড়ির ইট খুলে আনবেন। ইট খুলে আনার হুমকি আপনি দিবেন কেন? যদি কেউ অপরাধী, দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে থাকে তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনকে অভিযোগ করুন। বাড়ির ইট খুলে নেয়ার অধিকার আপনাদের কে দিল? বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করতে যাবেন না। আপনাদের অনেকে শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানের সাথে ছিলেন। আপনাদের অনেকে শামীম ওসমানের কাছ থেকে ২-৪ কোটি এনেছেন। আবার সংবাদমাধ্যমে তা বলেছেনও। আমরা এটি সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি।’

১৬ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর চাষাড়া শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক জোটের এক সাংস্কৃতিক সমাবেশে রাব্বী এসব কথা বলেন।

এর আগে গত ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সমাবেশে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর হোয়াইট হাইজ নিয়ে উপরোক্ত বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিএনপি নেতা টিপু বলেন, সব পালিয়ে গিয়েছে, আর আপনি দেওভোগে এখনও বসে আছেন৷ আমরা যদি নির্দেশ দেই তাহলে আপনার ওই হোয়াইট হাউজের একটি ইটও থাকবে না। অতএব আপনি সাবধান হয়ে যান। আপনি আর এক পাও আগাবেন না।’ আইভী বিএনপির কার্যালয় দখল করেছেন বলে অভিযোগ করে টিপু বলেছিলেন, আপনি বিএনপির অফিস দখল করেছেন। কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নারায়ণগঞ্জে সিটি কর্পোরেশনের নামে অনেক দুর্নীতি করেছেন। আমরা চাই না বাংলাদেশের সুষ্ঠু ধারার নির্বাচনের আগে কোন সন্ত্রাসী, খুনি হাসিনার প্রেতাত্মা এদেশে থাকুক।’

এদিকে রফিউর রাব্বী আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের এসপি নিজেকে ছাত্রলীগের ক্যাডার বলে প্রকাশ্যে পরিচয় দিয়েছেন। আপনারা মানুষের টাকায় বেতন নেন আর বলেন, ছাত্রলীগের ক্যাডার! আজমেরী ওসমানের বাহিনী এখন বিএনপির জাকির খানের দলের সাথে ভিড়েছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথেও ভিড়েছে। সতর্ক হতে হবে।’

রাব্বি বলেন, ‘পদত্যাগের পর এরশাদ দেশ ছাড়ে পালায়নি। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের জন্য তাকে পালাতে হয়েছে। বিএনপি গত ১৫ বছর কতটা নিগৃহীত হয়েছে, আমরা দেখেছি। বাড়িতে থাকতে পারেননি, কারো কারো বিরুদ্ধে শতাধিক মামলাও হয়েছে। আমরা এর বিরোধীতা করেছি, করবো। এর থেকে আমরা বের হতে চাই। আমরা চাই না হাসিনা রেজিমের (হাসিনাতন্ত্রের) মতো আর কোনো রেজিম (তন্ত্র) এ দেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক।’

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন খেলাঘর আসরের জেলা সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে, কবিতা গান পরিবেশন করে চন্দ্রবিন্দু শিশু মন কেন্দ্র, ‘যোদ্ধা’ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও গঙ্গাফড়িং এর শিশু সংগঠকরা।