সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভেকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান। এ পদটি যেনো আনোয়ার প্রধানেরই একমাত্র প্রাপ্য এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনিই একমাত্র যোগ্য। কারন দলের কঠিন সময়ে আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তিনি একই পদে প্রার্থী হয়েছিলেন ক’বার। নির্বাচন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। দলের পক্ষে অটুট থাকায় নির্বাচনের দিন কোর্টপাড়া থেকে তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে অপহরণ করে অজ্ঞাতস্থানে দিনভর জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। কোর্টের বাহিরের রাজনীতিতেও হামলা মামলা জেল-জুলুম ছিল যেনো তার নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। মাসের পর মাস জেল খেটেছেন। কোর্টপাড়ায় বিএনপির রাজনীতিকে সচল রাখতে অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। যখন ব্যানার ধরতে সাহস পেতোনা বিএনপির শীর্ষ আইনজীবী নেতারা, তখনো পিছু হটেনি আনোয়ার প্রধান। মানসিক শারীরিক অর্থনৈতিকভাবেও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দলের ঝাণ্ডা ধরেছিলেন পাহাড় হয়ে।
আদালত সূত্র জানায়, সর্বপ্রথম আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আপ্যায়ণ সম্পাদক পদে নির্বাচন করেছিলেন এইচএম আনোয়ার প্রধান। সে সময় নির্বাচনে তিনি ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিলেন। সেই নির্বাচনে তিনি প্রথমবারই দাঁড়িয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হোন। নির্বাচিত হয়ে তিনি সফলতার সাথে দায়িত্বও পালন করেন। পাশাপাশি আদালতপাড়ার রাজনীতিতে তিনি সামনের সারিতে আসতে থাকেন। সরকারি দলের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে নিজ দলের প্যানেলের পক্ষে অবস্থান নেন তিনি। যে কারনে পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ভোটের দিন নির্বাচনে আনোয়ার প্রধানকে বড় বাধা মনে করতো সরকারি দল। যার ফলশ্রুতিতে নির্বাচনের দিন আনোয়ার প্রধানকে সকাল বেলাতেই কোর্টছাড়া করা হতো। আওয়ামীলীগের বহিরাগত লোকজন কোর্টে এসে তার বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যেতো অজ্ঞাত স্থানে। তারপর রাতের বেলা ছেড়ে দিতো।
পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে এমন কঠিন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়ায় যে, বিএনপি প্যানেল থেকে কেউ প্রার্থী হতেও সাহস পেতোনা। অনেককে ডেকে ডেকে এনে দলের শীর্ষ নেতারা নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে প্রার্থী করতো। নির্বাচন আসলে বিএনপির অনেক সিনিয়র আইনজীবীরা আড়ালে চেলে যেতেন। নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য অনেকের পেছনে ঘুরলেও তারা নির্বাচন করতে চাইতো না। কিন্তু সরকার হুমায়ুন কবির, আনোয়ার প্রধানও যেকোনো কঠিন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকতেন। হুমায়ুন কবিে সব সময় বলতেন আমি প্রার্থী হিসেবে প্রস্তুতি আছি। যে কেউ না দাঁড়ালেও দলের হাল ধরবো আমি। একাধিকবার আনোয়ার প্রধানও হুমকি ধমকি ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন একইভাবে। ভোটের দিন কিলঘুষি ধাক্কা খেলেও নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি। ২০২১ সালে বহিরাহতরাতো কোর্টে ঢুকে বিএনপির আইনজীবীদের পিটিয়েছেন।
২০২২ সালের নির্বাচনের পূর্বে ওই বছরের ১৩ জানুয়ারী ফতুল্লা থানা মডেল পুলিশ আনোয়ার প্রধানকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। রাত একটার দিকে তার বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। সমিতির ভোটের মাত্র সপ্তাহ খানিক পূর্বে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে আদালতপাড়ায় বিএনপি ও জামাতপন্থী আইনজীবীরা চরম আতংকিত হয়ে ওঠেন।
অন্যদিকে আদালতপাড়ার বাহিরের রাজনীতিতেও সচল ছিলেন আনোয়ার প্রধান। যেখানে রাজপথে তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে জেল খেটেছেন, পুলিশের হামলা মামলা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নাজেহাল হয়েছেন বহুবার। তবুও তিনি রাজপথ ছাড়েননি। ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী সিলেট সফরে যাওয়ার সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হোন আনোয়ার প্রধান। পরবর্তীতে তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। তাকে রিমাণ্ডেও নেয়া হয়।
গত বছর ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই চিটাগাংরোড এলাকায় পুলিশের হাতে বেদম মারধরের শিকার হোন আনোয়ার প্রধান। সেদিন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে পুলিশি নির্যাতন থেকে বাঁচাতে তাকে জাপ্টে ধরে থাকেন এবং পুলিশের লাঠিতে পিটুনি খান, পরে গ্রেপ্তারও হোন। তখনো তিনি দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন।
আনোয়ার প্রধান ছাত্রদলের রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতিতে আসেন। পরবর্তীতে আইন কলেজে লেখাপড়াকালেও অিাইন ছাত্র হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে সচল ছিলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। এসব কারনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকলেও সকলে আনোয়ার প্রধানকে সমর্থন করেছেন। বিএনপি প্যানেল থেকে তাকে মনোনিত করা হলে তিনি গত ২৫ আগস্ট সমিতির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হোন।