সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের পর থেকে বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে একের পর এক সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে। এবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সীমানা নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে এ নিয়ে যে কোন সময় দেখা দিতে পারে ছাত্রদলের দুটি কমিটির মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনা।
জানাগেছে, ২০০৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের মুল এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জের ১নং থেকে ১০নং ওয়ার্ড পর্যন্ত জেলা বিএনপির আওতাধীন রাখা হয়। ওই সময় কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা বিভাগের দায়িত্বে থাকা শাহজাহান মিয়া বলেছিলেন, ‘মুলত নারায়ণগঞ্জ-৫ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন ভিত্তিক হিসেবে করে নির্বাচনের সুবিধার্থে এভাবে কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ এ বিষয়ে অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে বিরোধ সৃষ্টি হলে ওই বছরের ২০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এক চিঠিতে জানান, ‘জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি যেভাবে গঠিত হয়েছে সেভাবেই অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠন পরিচালিত হবে।’ কিন্তু কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের অনেকগুলো সংগঠন কেন্দ্রীয় নীতি অনুুসরণ করেনি।
এখানে মুল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে। কদমরসূল পৌর এলাকাটিই মুলত সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এর বাহিরে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। ২০১২ সালে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল ও জেলা যুবদলের কমিটি গঠনের পর তাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বন্দর উপজেলার ওই ৫টি ইউনিয়ন জেলা যুবদলের আওতাধীন দাবি করে বন্দর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দীন শিশির একটি ব্যানার নিয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির এক কর্মসূচি পালন করতে গেলে ঢাকার কমলাপুরে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন।
পরবর্তীতে ওই ৫টি ইউনিয়ন জেলা যুবদল তাদের অবস্থা থেকে সরে গিয়ে মহানগর যুবদলকে সুযোগ করে দেয়। যার ফলে মহানগর যুবদল সেখানে বন্দর থানা যুবদল ও বন্দর উপজেলা যুবদল নামে দুটি কমিটি গঠন করেন। এ নিয়ে জেলা ও মহানগর যুবদলের নেতারা ওই ৫টি ইউনিয়ন নিজেদের দাবি করছেন। তবে অটল রয়েছেন মহানগর যুবদলও। ফলে যুবদলের মাঝেও বিরোধ রয়েছে। বন্দরের ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকে অনেক নেতাদের জেলা যুবদলের কমিটিতেও রাখা হয়েছে আবার মহানগর যুবদলের কমিটিতেও রাখা হয়েছে।
এদিকে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মুলদলের নীতি অনুসরণ করা হলেও ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সেটা মানা হয়নি। সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকাটি মহানগর ছাত্রদলের সঙ্গে রেখেই মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। আবার বন্দরের ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকেও মহানগর ছাত্রদলের কমিটিতে অনেক নেতাদের রাখা হয়। ফলে জেলা ও মহানগর যুবদলও বন্দরের ওই ৫টি ইউনিয়ন দাবি করছেন। সেখানে কমিটি গঠনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, যেহেতু সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ১০টি ওয়ার্ড জেলা বিএনপির আওতাধীন রাখা হয়েছে এবং সেই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা মহানগর ছাত্রদলের কমিটিতে রাখা হয়েছে তাই বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের বাহিরের ৫টি ইউনিয়নে জেলা ছাত্রদল কমিটি গঠন করবে। মহানগর ছাত্রদল শুধুমাত্র মহানগরীতেই কমিটি গঠন করবে। আমরা ইতিমধ্যে বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে কমিটি গঠনের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি।
তবে এ বিষয়ে মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ বলেন, যেখানে মহানগর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে কাজ করছে, সেখানে মহানগর ছাত্রদলের বেলায় কেন ভিন্ন হবে? আমরাই বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে কমিটি গঠন করব। তাছাড়া ওই ৫টি ইউনিয়ন থেকে প্রায় ২৫ জন নেতাকে মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রাখা হয়েছে। তাহলে তারা কোথায় রাজনীতি করবে? সুতরাং তাদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে হলেও বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন মহানগরীর আওতাধীনই থাকবে। এখানে বিরোধ সৃষ্টি হলে আমাদের কিছু করার নেই। তারা পারলে সেখানে গঠন করুক। ৫টি ইউনিয়ন মহানগরীতে রাখতে আমাদের যত ধরণের চেষ্টা আছে আমরা কবরই।’