সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে আবারো হটাত করে উৎপাত শুরু করেছে বিএনপির নামে শতাধিক ভূঁইফোড় সংগঠন। নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এসব ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো কমিটি গঠনের নামে নতুন করে ধান্দাবাজিতে মেতে ওঠেছে। এসব সংগঠনের কারা করছে তার কোনো হদিস নেই। প্রতিটা নির্বাচনের পূর্বে এসব ভূঁইফোড় সংগঠনগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ৫ আগস্টের পর শতাধিক ভুঁইফোড় সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে নতুন করে। ফতুল্লার যুবলীগ নেতা শরীফ হোসেনকেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক করা হয়। তাকে পুলিশ ইতিমধ্যে একটি মামলায় গ্রেপ্তারও করেছে। সে আজমেরী ওসমানেরও হোন্ডা বাহিনীর ক্যাডারও ছিল।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে জিয়া পরিষদ, তারেক জিয়া পরিষদ, কোকো পরিষদ ও তরুণ দল নামে বেশক’টি ভূঁইফোড় সংগঠন। কমিটি গঠনের নামে চাঁদাবাজিতে মেতে ওঠেছে ভূঁইফোড় সংগঠনের নেতারা। আওয়ামীঘেষা ও পতিত সরকারের দালালদের এসব সংগঠনে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে।
এসব বিষয়ে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূঁইয়া তার ফেসবুকে লিখেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভূঁইফোড় নেতাদের দিয়ে বিভিন্ন ভূঁইফোড় সংগঠনের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এটি দলের জন্য বিব্রতকর। যারা এ সমস্ত সংগঠনের কমিটিতে আছেন তাদের অনেকে স্বৈরাচারের দোসর ছিলেন।
এদিকে অভিযোগ ওঠেছে, এসব ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো কমিটি গঠনের নামে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে অতীতে সম্পৃক্ত ছিল এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে বসিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, অনেকে পকেট ভারি করছেন। কেউ কেউ নতুন করে বিএনপির নেতাকর্মী তৈরি করছে এসব ভুঁইফোড় সংগঠনের মাধ্যমে। এসব কর্মকান্ডে বিএনপিরই এক শ্রেণির লোকজন জড়িত রয়েছে। যারা কিছ অর্থের লোভে এসব ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোর কমিটি দিয়ে লাভবান হওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন।
এসব কারনে গত নির্বাচনের পূর্বেও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ শতাধিক ভুইফোড় সংগঠনগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। এসব সংগঠনগুলো বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারক রহমান ও তার ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকার নাম ব্যবহার করে গড়ে ওঠেছে। এসব সংগঠনগুলোকে বিএনপি কোনো অনুমোদন দেয়নি। এসব ভূঁইফোড় সংগঠনের নামে বিভিন্ন স্থান থেকে ধান্ধাবাজি চাঁদাবাজির অভিযোগের কারনে গণমাধ্যসে রুহুল কবির রিজভী বিএনপির সংগঠনগুলোর নাম নিশ্চিত করে বলেছিলেন, অনুমোদিক সংগঠনের বাহিরে বাকিসব সংগঠনকে ভুোইফোড় হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন।
গণমাধ্যমে রিজভী জানিয়েছিলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রে ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন রয়েছে। এর বাইরে আর কোনো সংগঠনের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা নেই বলে সাফ জানান। দলীয় অনুমোদিত ১১টি সংগঠন হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস), জাতীয়তাবাদী কৃষক দল, জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দল ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দল।
দেখা যায়, জিয়া পরিষদ, তারেক জিয়া পরিষদ, কোকো পরিষদ, জাতীয়তাবাদী তরুণ দল, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল, সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ, জিয়া সেনা, স্বদেশ জাগরণ পরিষদ, দেশনেত্রী সাংস্কৃতিক পরিষদ, দেশপ্রেমিক ফোরাম, জিয়া স্মৃতি সংসদ, জিয়া নাগরিক ফোরাম, জিয়া আদর্শ একাডেমী, তৃণমূল দল, জিয়া পরিষদ, জিয়া ব্রিগেড, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সেবা দল, জাতীয়তাবাদী বন্ধুদল, জাতীয়তাবাদী সংগ্রামী দল, প্রতিবাদী নাগরিক দল, জাতীয়তাবাদী চালক দল, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক যুব দল, যুব মহিলা দল, খালেদা জিয়া মুক্তি পরিষদ, তারেক রহমান মুক্তি পরিষদ, তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ, শহীদ জিয়াউর রহমান আদর্শ বাস্তবায়ন পরিষদ, জাতীয়তাবাদী কৃষি আন্দোলন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক একাডেমী, সম্মিলিত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সাইবার দল, জিয়ার সেনা, স্বদেশ জাগরণ, দেশনেত্রী সাংস্কৃতিক, দেশপ্রেমিক ফোরাম, জিয়া স্মৃতি সংসদ, চেতনায় ৭১, সচেতন নাগরিক, চেতনায় মুক্তিযোদ্ধা, আমরা-৭১, জাগ্রত জনতা ফোরাম, আমাদের কথা নাগরিক পরিষদ, গণমুক্তি আন্দোলন পরিষদ, বাসাস, নাগরিক অধিকার সোসাইটি, গণতান্ত্রিক ঐক্য ফোরাম, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট সমন্বয়কারী, প্রজন্ম একাডেমী, নাগরিক সংসদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলন, ভয়েস অব বাংলাদেশ, সুশীল ফোরাম, নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, চিরন্তন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ লেবার, হৃদয়ে বাংলাদশ, বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম জিয়া পরিষদ, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, জিয়া ব্রিগড, জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস), তৃতীয় স্বর, দেশপ্রেমিক যুবশক্তি, দেশপ্রেমিক যুব শক্তি, নাগরিক ফোরাম, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক জোট, সচেতন নাগরিক পরিষদ, গ্রুপ-৯, স্বাধীনতা ফোরাম, আমরা ঢাকাবাসী, বাংলাদেশ সচেতন যুব সমাজ, সচেতন দেশপ্রেমিক ফোরাম, জিয়া নাগরিক সংসদ, সামাজিক আন্দোলন সংস্থা, নর্থ বেঙ্গল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল গণতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, সচেতন যুব সমাজ, স্বদেশ মঞ্চ, জাতীয়তাবাদী নবীন দল, জাতীয়তাবাদী যুব ঐক্য দল, জাতীয়তাবাদী প্রযুক্তি দল, তারেক পরিষদ, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন, শহীদ জিয়া ছাত্র পরিষদ, জিয়া সমাজকল্যাণ পরিষদ, শহীদ জিয়ার আদর্শ দল, জাতীয়তাবাদী তরুণ প্রজন্ম দল, জিয়া সাইবার ফোর্স, আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি পরিষদসহ প্রায় শতাধিক সংগঠন বিএনপির নাম ব্যবহার করে সারাদেশে উৎপাত শুরু করে। নারায়ণগঞ্জেও এর ব্যতিক্রম নয়।