সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোার ডটকম:
অচিরেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বিএনপি- এমন বিষয়টিকে স্রেফ গুজব বলেই মনে করছেন বর্তমান কমিটির অধিকাংশ নেতারা। মুলত মহানগর বিএনপির অপর একটি অংশের নেতারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন নতুন করে কমিটি নিয়ে আসতে। একই সঙ্গে তাদের মনোবাসনাও নতুন কমিটি। বলা যায় একপক্ষ চেষ্টায় আছেন নতুন কমিটি আনার, অপরপক্ষ চেষ্টায় আছেন এই কমিটি বহাল রাখার। কিন্তু কমিটি এখনি হয়ে যাচ্ছে সেটা হলফ করে বলা যাচ্ছেনা। আপাতদৃষ্টে নেতাকর্মীরা মনে করছেন এই কমিটি আরো কিছুদিন টিকে থাকবে।
নেতাকর্মীরা জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু নিজ দলের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হওয়ার পর থেকে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। সেই গুঞ্জন আরো বেশি ডাল পালা মেলে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট আবুল কালামকে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতারা কেন্দ্রীয় কর্যালয়ে ডেকে নেয়া হয়েছে বলে খবর বের হওয়ার পর। নতুন করে রাজনীতির মাঠেও সরব হয়েছেন আবুল কালাম। তবে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার কোনো কারন কিংবা ভেঙ্গে দেয়ার মত কোনো লক্ষন আপাতত দেখা যাচ্ছেনা।
নেতাকর্মীদের সূত্রে, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটির সম্মেলন না হলেও এর আওতাধীন প্রতিটা থানা ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু। যা গত তিন দশকে কোনো কমিটি পারেনি। যদিও আহ্বায়ক কমিটির দুই বছর পেরিয়ে গেছে গত মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর। নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে যাচ্ছে এমন গুঞ্জনে সরব হয়ে ওঠেছেন আবুল কালাম অনুগামী বিএনপির নেতারা। একই সঙ্গে যেসব নেতাকর্মীরা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ছিলেন তারাও নতুন কমিটির আশায় বুক বেধে আছেন। যদিও নতুন কমিটি গঠনের কোনো আভাস ইতিমধ্যে কেন্দ্র থেকে পায়নি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মহানগর কমিটি ভঙ্গে দেয়া মত কোনো কারণ দেখছেনা কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই কমিটিই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। তবে এই কমিটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাগাদ সময় পর্যন্ত বহাল থাকবে কিনা সেটা বলা কঠিন। তবে আপাতত কপিটি ভাঙ্গছেনা সেটা বলা যায়। আবার অনেকে মনে করছেন, যেহেতু কমিটির মেয়াদ দুই বছর পেরিয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে নতুন কমিটি হওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু গত জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সাখাওয়াত ও টিপুর আন্দোলনে সংগ্রামে কঠোর ভুমিকা রাখার বিষয়টি এবং টিপু দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। একইভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনেও তাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতই। ফলে তাদের কমিটি আরো কিছুদিন বহাল রাখাটাও তাদের প্রতি সুবিচার মনে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা।
এর আগে ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বররে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৪১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির অনুমোদন দেন। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করা হয় অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে। কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদে অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবীর, আবদুস সবুর সেন্টু, হাজী নূর উদ্দিন, আতাউর রহমান মুকুল, মনির হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন আনু, ফতেহ মো. রেজা রিপন, এমএইচ মামুন ও আবুল কাউসার আশা।
সদস্য হিসেবে আছেন, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম, হাজী ফারুক হোসেন, আওলাদ হোসেন, শওকত হাশেম শকু, হাসান আহমেদ, মাহাবুব উল্লাহ তপন, মাসুদ রানা, ডা. মজিবর রহমান, মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু, রাশিদা জামাল, অ্যাডভোটেক এইচ এম আনোয়ার হোসেন, হান্নান সরকার, অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, হাবিবুর রহমান দুলাল, হাবিবুর রহমান মিঠু, মনোয়ার হোসেন শোখন, মো. বরকত উল্লাহ, মো. আলমগীর হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা, শহিদুল ইসলাম রিপন, আমিনুল ইসলাম মিঠু, ফারুক আহমেদ রিপন, মাহমুদুর রহমান, অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলু, শাখাওয়াতুল ইসলাম রানা, মো. ফারুক হোসেন, কামরুল হাসান সাউদ চুন্নু, হুমায়ূন কবীর ও শাহিন আহম্মেদ।
কমিটি গঠনের পর বেশকজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য পদত্যাগ করেন। গত জাতীয় নির্বাচনে আতাউর রহমান মুকুল সহ আরো বেশকজন সদস্যকে বহিষ্কার করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এইচএম মামুন ও সদস্য মাহমুদুর রহমান মৃত্যুবরণ করেছেন।
এর আগে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এটিএম কামাল। আংশিক কমিটি ঘোষণার পৌনে ৩ বছর পর ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়েছিল। ২০২১ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের পক্ষে কাজ করার দায়ে এটিএম কামালকেও বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।