বন্দরে বেপরোয়া বিএনপি নেতা ফারুক-চুন্নু: চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আওতাধীন ২৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সাউদ চুন্নুর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। এবার চুন্নুর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাঁদাবাজিতে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।

তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বারর্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য, আয়েশা ইপিএস ইনস্যুলেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল হোসেন বাবু। এই লিখিত অভিযোগের অনুলিপি র‍্যাব-১১, বন্দর থানার ওসি, জেলা শিল্প পুলিশ, জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি বরাবর দাখিল করা হয়।

তিনি লিখিত অভিযোগে জানান, ইদানিং বেশ কিছু লোকজন অবৈধভাবে আমার কারখানায় এসে চাঁদা দাবিসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধমকি দিচ্ছে এবং প্রয়োজনে কারখানায় লুটতরাজ করা হবে বলে হুমকি দিতেছে।

উল্লেখ্য যে, (১) ২৫ নং ওয়ার্ড বিএনপি সেক্রেটারি কামরুল হাসান সাউদ চুন্নু, পিতা- মোহাম্মদ আলী, (২) মোঃ মমিন উল্লাহ সাউদ জুম্মন, পিতা- জাফরউল্লাহ সাউদ (৩) মো: রাব্বি সাউদ, পিতা- মনির হোসেন, (৪) মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পিতা মো: লাভলু মিঞা সর্বসাং লক্ষনখোলা, বন্দর, নারায়ণগঞ্জসহ আরও ১৫/২০ জন মাঝে মধ্যেই আমার কারখানার নিকট এসে অবৈধভাবে মহড়া দিয়ে চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় কারখানা ভাংচুর এবং লুটপাট করবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে এবং আমাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিতেছে।

তিনি অভিযোগে জানান, আমার পিতা মরহুম শহীদুল্লাহ বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নি:স্বার্থভাবে দলের জন্য কাজ করে গেছেন। কিন্তু আমরা (আমি সহ আরও আমার বড় দুই ভাই) স্বক্রিয়ভাবে কোন দল করি না কিন্তু অন্তরে বিএনপি’র আদর্শ লালন করি। আমরা দেশের স্বার্থে এবং এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে ব্যবসা বাণিজ্য করি। আমার অন্য দুই ভাই সাজু এবং রাজু অন্য দুটি কারখানা তত্ত্বাবধায়ন করে থাকেন। কিন্তু এলাকার বিএনপি নামধারী কিছু সন্ত্রাস চাঁদাবাজ গত ০৫-০৮-২০২৪ ইং ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকার পতনের পর হতেই এলাকায় সরব হয়ে উঠেছে। এতে করে দলের ক্ষতিসহ এলাকায় অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। জনমনে নানা ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অভিযোগে আরো উল্লেখ করেন যে, বিগত ২৪-০৯-২০২৪ ইং তারিখ আমার কারখানার সংলগ্ন চায়না ব্যাটারী ফ্যাক্টরীটি ভাঙচুর এবং লুটপাট করে উল্লেখিত কামরুল হাসান সাউদ ওরফে চুন্নু গ্রুপ। পরবর্তীতে বিশাল অংকের চাঁদা আদায় করে উক্ত কারখানা থেকে। সেই চাঁদার টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গত ০১-১১-২০২৪ ইং তাদের বাকবিতন্ডা এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে, যা আমরা লোকমুখে জানতে পারি। কিন্তু উল্লেখিত কামরুল হাসান সাউদ ওরফে চুন্নু আমাকে এবং আমার বড় দুই ভাই সাজু এবং রাজুর বিরুদ্ধে বন্দর থানাসহ বাংলাদেশের আরো কয়েকটি থানায় মামলা দিবে বলে মোবাইলে ও সরাসরি চাঁদা আদায়ের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে। আমার এবং আমার কারখানার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েনপূর্বক নিরাপত্তা নিশ্চিতকররণে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান প্রার্থনা করি।

অন্যদিকে জানাগেছে, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন লক্ষণখোলা এলাকায় চাইনিজদের মালিকানাধীন একটি ব্যাটারি কারখানা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছেন ফারুক হোসেন ও চুন্নু। কারখানা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ফারুক হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান সাউদ চুন্নু দুই দফায় ৫ লাখ ঢাকা করে চাঁদার টাকা গ্রহণ করেন। ডংজিন ব্যাটারী ফ্যাক্টরীর ভেতরে অবস্থিত সিসিটিভির ফুটেজে চাঁদা নেয়ার দৃশ্য রয়েছে। এ সংক্রান্ত খবর স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি।

ওইসব সংবাদে কারখানা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমকগুলোকে জানান, সরকার পরিবর্তনের পর থেকে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির দুই নেতা ফারুক হোসেন এবং চুন্নু সরাসরি এসে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এই অজুহাত তুলে ২০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি করে। অন্যথায় ব্যাটারী কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে আপোষ রফায় গত ১০ অক্টোবর এবং ১৫ অক্টোবর দুই দফায় কারখানার অফিস থেকে ৫ লাখ করে চাঁদা নিয়ে যায় বিএনপির এই দুই নেতা। আদায়কৃত টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ফারুক হোসেনের সাথে কামরুল হাসান সাউদ চুন্নুর বিরোধ বাঁধে। এই বিরোধের জের ধরে গত ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় লক্ষণখোলা মাদ্রাসা স্ট্যান্ড সংলগ্ন চুন্নুর অফিসে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার জের ধরে কামরুল হাসান সাউদ চুন্নু তারই সংগঠনের সভাপতি ফারুক হোসেন, স্থানীয় ব্যবসায়ী সাজু, রাজু, বাবুসহ ১২ জনকে মাদক ব্যবসায়ী বানিয়ে বন্দর থানায় এজাহার দায়ের করেন।

এলাকাবাসী জানায়, ডংজিন ব্যাটারী ফ্যাক্টরী থেকে আদায় করা ১০ লাখ চাঁদাবাজির টাকার বেশির ভাগ অংশই চুন্নু নিজের কাছে রেখে দিলে সভাপতি ফারুক হোসেনের সাথে তার বিরোধ বাঁধে। মামলার এজাহারে স্থানীয় তিন ব্যবসায়ী সাজু, রাজু ও বাবুকে আসামী করে ভিন্নভাবে ফায়দা লুটার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ।