রাজনীতিকেই বিদায় জানালেন সোনারগাঁয়ের কাজী লিটু

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিকেই বিদায় জানালেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ভুমিকা রাখা কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু। শিক্ষা জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে আসেন কাজী নাজমুল ইসলাম লিটু। পরবর্তীতে ইটালি প্রবাসী হোন। আয়েশী জীবন ছেড়ে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার প্রত্যয়ে ২০১৫ সালে দেশে ফিরে রাজনীতিতে সক্রিয় হোন তিনি। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সোনারগাঁও উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্যও প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তিনি। ছিলেন জাতীয়পার্টির অঙ্গ সহযোগী সংগঠন জাতীয় যুব সংহতির সোনারগাঁও উপজেলা শাখার আহ্বায়ক পদে। একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। বর্তমানে তিনি তার পরিবার ও পরিজনকে সময় দিতে চান। সে কারনে তিনি রাজনীতিকেই বিদায় জানানোর ঘোষণা দিয়েছেন। ১৭ অক্টোবর রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি নিজেকে সোনারগাঁও ধ্রুবতারা যুব সংঘের সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, আজ থেকে রাজনীতিকে বিদায় জানালাম। যখন আমার সন্তান এবং স্ত্রী স্বপ্ন দেখেছিল আর কিছুদিন পর তারা ইউরোপের বাসিন্দা হয়ে উন্নত ও নিরাপদ জীবন যাপন করবে, ঠিক সেই সময় এলাকাবাসীর চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ইটালি থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসি এবং ২০১৫ সাল জুনে তৎসময় নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের সংসদ সদস্য জনাব লিয়াকত হোসেন খোকা সাহেবের নেতৃত্বে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পথচলা শুরু করি। নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানান ষড়যন্ত্রের শিকার হই।

তিনি আরো লিখেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে মাওলানা মামুনুল হক তাণ্ডব সহ একাধিক মামলার আসামি করে হয়রানি করা হয় এবং ২০১৮ সালে হামলার শিকার হই, যার উদ্দেশ্য ছিল আমাকে হত্যা করা এটা সবাই জানেন। এই হামলা, মামলা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল ছাত্রলীগ যুবলীগ তথা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। তবুও আমি থেমে যাইনি, নিজের বুদ্ধিমত্তা ও একান্ত বিশ্বস্ত সঙ্গী সাথীদের নিয়ে এলাকার অবকাঠামোগত ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার চেষ্টা করেছি।

বেশকিছু উন্নয়ন কাজে নিজের ভুমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, উদাহরণস্বরূপ উল্লেখযোগ্য কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন তুলে ধরতে চাই। আমি আমার সাংগঠনিক সহযোদ্ধাদের নিয়ে তৎকালীন সাংসদের কাছে দাবী জানিয়ে বাস্তবায়ন করিয়েছি।

* কাইকারটেক নবাব উচ্চ বিদ্যালয়ে আধুনিক চারতলা ভবন।
* কাইকারটেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বহুতল ভবন নির্মাণাধীন।
* কাবিলগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বহুতল ভবন।
* রহমতপুর আশ্রদ্ধি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বহুতল ভবন।
* কালীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বহুতল ভবন নির্মাণাধীন।
* সোনাখালী বাস স্ট্যান্ড হইতে কানাইনগর পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ।
* দরিকান্দি বাস স্ট্যান্ড হইতে ইলিয়াসদি ভায়া কালিগঞ্জ পাকা রাস্তা পর্যন্ত রাস্তাটি পাকাকরণ।
* আলাপদী সিএনজি স্ট্যান্ড হইতে সোনাখালি বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তা পুণঃনির্মাণ প্রশস্তকরণ।
* নাল আলাপদী তাওলাদের দোকান হইতে কাফুরদী দিয়ে রাজার বাড়ি ভায়া আলাউদ্দিন ভায়া উলুকান্দা মসজিদ হয়ে দারোগোল্লা পর্যন্ত পর্যন্ত পাকাকরণ ও পুনঃনির্মাণ।
* ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হইতে কাইকারটেক হাট ও পাঁচ পীরের দরগাহ হইতে উলুকান্দা এবং ভাটিপাড়া হতে রহমতপুর সহ মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটারের অধিক নতুন মাটির রাস্তা নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ।
* বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নে নগদ অর্থ প্রদান এবং ঈদগাহ কবরস্থানের উন্নয়ন।
* মোগরা পাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে কবরস্থানে শতাধিক‌ সোলার লাইট স্থাপন।
* কাজী বাড়ির মোড় হইতে মুগারচর পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরন।

উল্লেখিত উন্নয়ন সহ মাদকের বিরুদ্ধে আমার বলিষ্ঠ অবস্থান সবসময়ই ছিল সর্বাগ্রে। তারপরও আমি ভুলের ঊর্ধ্বে নই। সকল প্রকার লোভ লালসার ঊর্ধ্বে থেকে প্রতিহিংসার রাজনীতি উপেক্ষা করে জনগণের প্রয়োজনে কতটুকু কাজ করতে পেরেছি তা মূল্যায়ন করবেন আপনারা। দেশকে ভালবাসি আর ভালোবাসি বলেই ইউরোপের উন্নত জীবন ফেলে এসে জনগণের পাশে থেকে সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চেষ্টা করেছি। দেশকে ভালবাসি বলে ই জীবনের মায়া ত্যাগ করে জুলাই/আগস্ট অভ্যুত্থানের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম ।

এখন আমি মনে করি ৫ আগস্টের পর নতুন বাংলাদেশে সামাজিক উন্নয়ন করার বহু দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করবে। আর আমার উচিৎ পরিবারের সদস্যের প্রতি দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়া। এমত অবস্থায় রাজনৈতিক ভাবে সময় দেওয়া আমার জন্য কষ্টসাধ্য তাই সবদিক ভেবে চিন্তে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম।

সকলের প্রতি আহ্বান প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে থেকে, ভাল মানুষকে আলিঙ্গন করুন
দুর্বিত্বায়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ুন। সবাই আমার ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, ভাল কিছু করে থাকলে প্রশংসা নয় দোয়া করবেন। আল্লাহ হাফেজ।