কঠিন সময়ে ভাই হত্যার বিচার চেয়ে একাই লড়ছেন তৈমূর আলম

সান নারায়ণগঞ্জ

অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা আজকে রাঘববোয়াল হয়েছেন তাদের কেউ পাশে নেই তৈমূরের। যারা তৈমূর আলমের ছায়াতলে থেকে বটগাছ হয়েছেন, যারা এক সময় তৈমূর আলমের ছায়াতলে থাকতে তার চারপাশে ঘুরঘুর করতেন, আজকে সেইসব ব্যক্তিরা তৈমূর আলমের ভাই সাব্বির হত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। যারা এক সময় তৈমুর আলমের অঙ্গুলী ইশারায় লাফাতো আজকে তারাও তৈমূর আলম খন্দকারের ভাই হত্যার বিচারকার্যেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

কঠিন এক সময় পার করছেন তৈমূর আলম খন্দকার। এমন সময় তার ভাই সাব্বির আলম খন্দকারের কন্যা অ্যাডভোকেট ফাতেমা তুজ তোহুরা শবনবকে নিয়ে লড়াই করে আসছেন তৈমূর। এক ভাই লড়ছেন তার ভাই হত্যার বিচার দাবিতে, এক কন্যা লড়াই করছেন তার পিতা হত্যার বিচার দাবিতে। এমন কঠিন সময়ে পূর্বে যারা খন্দকার পরিবারের দ্বারা সুবিধাভোগী, খন্দকার পরিবারের দ্বারা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত তারাও নেই তাদের পাশে। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, যাতে এক ভাই তার ভাই হত্যার বিচার না পায়, এক কন্যা তার পিতা হত্যার বিচার না পায়!

যে তৈমূর আলম খন্দকার এক সময় রাজপথে নামলে তার পেছনে লাখ লাখ জনতা তার নামের উপর শ্লোগান দিতো আজকে সেই তৈমূর আলম খন্দকারের পাশে একজনও নেই। যাদেরকে তৈমূর আলম খন্দকার সাধারণ কর্মী থেকে রাজনৈতিক দলের বড় বড় নেতা বানিয়েছেন আজকে তারাও তার ভাই হত্যার আসামীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, উল্টো তৈমূর আলমের বিরুদ্ধে নানা কটাক্ষমুলক বক্তৃতা দিচ্ছেন। এক সময় যাদের অস্তিত্ব ছিল তৈমূর আলম খন্দকার, আজকে তারাও তৈমূর আলমের খারাপ সময়ে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এক সময় যারা সাব্বির হত্যার বিচার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছিলেন, আজকে সেইসব ব্যক্তিরা সাব্বির হত্যার আসামীদের মুক্তির দাবি করছেন।

কিন্তু দমে যাওয়ার মানুষ তৈমূর আলম খন্দকার নন। অদম্য এক সাহসী ব্যক্তির নাম তৈমূর আলম খন্দকার। যিনি ছোট থেকে তিল তিল করে বড় হয়েছেন। অদম্য সাহস নিয়ে তিনি একাই লড়াই করে জাতীয় পর্যায়ের একজন ব্যক্তিত্বে পরিনত হয়েছেন। একা লড়েই ভাই হত্যার বিচার পাবেন বলেও তিনি আশাবাদী। তিনি জানেন ভালো সময়ে কাক চিতাবাঘও পায়ের তলায় এসে নাচে, খারাপ সময়ে এই কাক চিতাবাঘও সাপ হয়ে ছোবল মারে। তাই তিনি একাই লড়াই করেছেন ভাই হত্যার বিচার চেয়ে। ন্যায্য বিচারের আশায় আদালতের দিকে তাকিয়ে এক ভাই হারানো ভাই, এক পিতা হারানো কন্যা।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর যাবত কোর্টে সাব্বির হত্যা মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়। কোর্টে একদিকে যখন তৈমূর আলম মামলার শুনানি করছেন, অন্যদিকে কোর্টের বারান্দা থেকে, কোর্টপ্রাঙ্গণ, কোর্টের গেটের সামনে তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে আসামীপক্ষের লোকজন। ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবারও কোর্টপ্রাঙ্গনে মিছিল নিয়ে তৈমূর আলমের গ্রেপ্তার দাবি করছে আসামীদের লোকজন, এদিকে তৈমূর তার ভাই হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে অদম্য সাহস নিয়ে যুক্তিতর্ক উত্থাপন করছেন ধীরচিত্তে।

অন্যদিকে জানাগেছে, আগামী ৭ জানুয়ারী নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করবে আদালত। ২৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন মামলাটির বাদী ও আসামীপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালতের বিচারক মমিনুল ইসলাম। এর আগে ২৬ নভেম্বর ও ২৭ নভেম্বর আসামীদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা যুক্তি উত্থাপন করেন।

২৮ নভেম্বর মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী ও মামলাটির বাদী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার যুক্তি উত্থাপন করে আসামীরাই সাব্বির আলম খন্দকার হত্যার ঘটনায় প্রকৃত দোষী হিসেবে দাবি করেন। এ সময় বাদীকে যুক্তিতর্কে সহযোগীতা করেন খুনের শিকার সাব্বির আলম খন্দকারের কন্যা অ্যাডভোকেট ফাতেমা তুজ তোহুরা শবনম। পরে আসামীপক্ষের আইনজীবীরাও যুক্তির রিপ্লে দেন। সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলার কারনে আসামীরা পূর্ব থেকেই হত্যার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করে সাব্বির আলম খন্দকারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে আদালতে যুক্তি দেখান তৈমূর।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে আদালতে আসামীদের বিপক্ষে যুক্তিতর্ক উত্থাপন শুরু করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এ সময় তিনি দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন আইনের আইনগত রেফারেন্স ও ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এবং যাবতীয় আইনের কাগজপত্রও আদালতের কাছে জমা দেন। হত্যার ঘটনা ও হত্যার পূর্বের ঘটনা তুলে ধরে তৈমূর আলম আইনগত রেফারেন্স ও ব্যাখ্যা দেখিয়ে কোর্টকে বলেন, মাস্টার মাইন্ড ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও খুনি। জাকির খান সহ আসামীরা হত্যার মাস্টার মাইন্ড। আসামীরা প্রমাণ করতে পারেনি আসামীরা খুন করেনি, এমনকি এও প্রমাণ করতে পারেনি অন্য কেউ হত্যা করেছে।

জাকির খান হত্যার সময় বিদেশে ছিল আসামীপক্ষের এমন দাবির বিষয়ে তৈমূর আলম আদালতে আইনগত রেফারেন্সের পাশাপাশি দেখান যে, ২০০৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী হাইকোর্টে আসামীরা আগাম জামিনের দরখাস্ত দাখিল করেছিল। সেই দরখাস্তের কাগজপত্র জমা দেন তৈমূর আলম। এবং হাইকোর্টের নির্দেশনাও অমান্য করেছে আসামীরা।

সাক্ষীদের জবাববন্ধিতে ছিল জাকির খান হত্যার পূর্বে সাব্বির আলম খন্দকারকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এ বিষয়ে আসামীপক্ষ যুক্তি দেখান যে, হত্যার হুমকি দিয়েছিল এ সংক্রান্ত কোনো জিডি দায়ের করা হয়নি হত্যার আগে। এ বিষয়ে তৈমূর আলম খন্দকার সাক্ষ্য আইন সহ বিভিন্ন আইনের রেফারেন্স ও আইনগত ব্যাখ্যায় দেখান যে, হত্যার পূর্বে যৌথ বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে রেজুলেশন করার সাক্ষ্যগত মুল্য রয়েছে। একই সঙ্গে হত্যার পূর্বে ওই বৈঠকে সাব্বির আলম খন্দকারের বক্তব্য ও জাকির খান সহ অন্যান্য আসামীরা হুমকি দিচ্ছে তা উল্লেখ আছে দেখিয়ে কোর্টে কাগজপত্র দাখিল করেন। পরে তিনি ভাই হত্যার বিচার দাবি করে আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। ওই সময় তিনি তার পাশে নিহত সাব্বির আলমের কন্যা অ্যাডভোকেট ফাতেমা তুজ তোহুরা শবনবকে কোর্টকে দেখিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। আদালত শুরু থেকেই তৈমূর আলম খন্দকারের যুক্তি উত্থাপন ও আইনগত রেফারেন্স এবং ব্যাখ্যা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেন।

এর আগের দিন ২৭ নভেম্বর আসামীপক্ষের আইনজীবী মনগড়াভাবে আসামীদের নির্দোষ দাবি করায় আসামীপক্ষের আইনজীবীর কাছে আইনগত রেফারেন্স ও আইনগত ব্যাখ্যা চান। তখন আসামী পক্ষের আইনজীবী পরদিন ২৮ নভেম্বর আইনগত রেফারেন্স দিবেন বলে জানান। আসামীপক্ষের আইনজীবী আইনগত রেফারেন্স ও ব্যাখ্যার চেয়ে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়েছে বেশি। ২০০৩ সালের খুনের ঘটনার সঙ্গে ২০২৩ সালে তৃণমুল বিএনপিতে তৈমূর আলম খন্দকারের যোগদানের যোগসুত্র দেখানোর মত যুক্তি উত্থাপন করে আসামীপক্ষের আইনজীবী।

প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে খুন হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার। এ হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিহতের বড় ভাই তৈমুর আলম খন্দকার বাদী হয়ে ১৭ জনের নামে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশীট দাখিল করেন। এতে মামলা থেকে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খানসহ মোট ৮ জনকে আসামি উল্লেখ করা হয়।