স্বৈরাচারের গডফাদারের টাকায় আমাকে বাদ করে দিবেন, তা হবে না: গিয়াস

সান নারায়ণগঞ্জ

ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ‍রুহুল আমিন সিকদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরীকে ইঙ্গিত ও উদ্দেশ্য করে ফতুল্লা থানা বিএনপির কমিটি গঠন প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন বলেছেন, ফতুল্লাকে ঢেলে সাজিয়েছি ভালো কমিটি দিয়ে। কিন্তু কমিটির কেউ কেউ বিপদগামী হয়েছে। ৫ তারিখের পর লুন্ঠন করেছে, চাঁদাবাজি দখলবাজি করেছে অগ্নিসংযোগ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা আমাদের নেতৃবৃন্দ করেছে। সে কারনে তারা আজকের এই সমাবেশে উপস্থিত হতে পারে নাই। মানুষ তাদেরকে ঘৃণা করে। মানুষ তাদের অপকর্মকে ঘৃণা করে। তাই এই নেতৃবৃন্দের ডাকে হাজার হাজার মানুষ আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। যাদেরকে জনগণ ভালোবাসে, আমিও তাদেরকে ভালোবাসি।

৩০ নভেম্বর শনিবার বিকেলে ফতুল্লা থানাধীন নতুন কোর্ট সংলগ্ন আজমেরী বাগ এলাকায় ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এসব কথা বলেন গিয়াসউদ্দীন।

তিনি আরো বলেন, ফতুল্লায় যারা নেতৃত্বে তাদের অনেকেই নিজেকে অনেক কিছু মনে করে। কোনো কোনো সময় বলছে আমি বিএনপির প্রার্থী হইলাম, আবার কয়দিন পর দেখা গেল অন্য একটি ইসলামিক দলের প্রার্থীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করছে, তারা নিজেরাও জানি যারা প্রার্থী হিসেবে যোগ্য না, সেজন্য আরেক দলের প্রার্থীর উপর ভর করে। আপনারা হতাশায় ভুগছেন, আরে ভাই হতাশায় ভুগছেন কেন? আপনারা যে অপরাধ করেছেন নেতৃবৃন্দের কাছে ক্ষমা চান। জনগণের কাছে ক্ষমা চান। ক্ষমা চেয়ে আসেন আমরা মিলে মিশে বিএনপি করি।

তিনি বলেন, আপনারা যতই ভাবেন বড় বড় নেতা ধরে বাহিরে টাকা খরচ করে বিএনপিতে কর্তৃৃৃত্ব করবেন, তা হবে না। পারবেন না। অনেকেই অনেক কিছু বলছেন। গিয়াসউদ্দীনকে জেলা বিএনপি থেকে প্রত্যেকদিন বাদ করে দিচ্ছেন। স্বৈরাচারের গডফাদার থেকে টাকা নিয়ে সেই টাকা দিয়ে আমাকে বাদ করে দিবেন, তা হবে না। গিয়াসউদ্দীন তো সেই জায়গায়ই আছে, এগুলো ছেড়ে দেন। এগুলো দিয়ে কাজ হবে না। ৫ তারিখের পর টাউটবাটপারদের রাজনীতি নাই। টাকা পয়সা দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা কিনে নারায়ণগঞ্জের কর্তৃত্ব করবেন তা হবে না। আর ফাঁকা বুলি কম দেন। বিএনপির মুলধারা থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে ছোট ছোট মিটিং মিছিল করে ফেসবুকে দেন। ফেসবুকের রাজনীতিতেই আপনারা থাকবেন।

ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদারকে টোকাই আখ্যায়িত করেছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া।

একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের রেফারেন্স টেনে উক্ত অনুষ্ঠানে আব্দুল বারী ভুঁইয়া বলেন, আজকে একটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে যে, ফতুল্লা থানা বিএনপির একটি অংশ নাকি এই অনুষ্ঠান বর্জন করেছে? আরে ভাই বর্জন করবেন কি? চাঁদাবাজি ও দখলবাজির কারনে আপনাদেরকে তো আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। আপনাদেরকে আমরাই বর্জন করেছি। আমরা যদি আপনাদের কাছে দাওয়াত নিয়ে যেতাম তাহলে বর্জন হতো। আপনাদের চাঁদাবাজি, দখলবাজি সন্ত্রাসীর কারনে ফতুল্লা থানা বিএনপি আপনাদের প্রত্যাখান করেছে, বর্জন করেছে। আপনাদেরকে ফতুল্লার জনগণ টোকাই হিসেবে চিনে। টোনাইদের ফতুল্লার রাজনীতিতে আর কোনো দরকার নাই। এই টোকাইরা ফতুল্লার রাজনীতিতে ফিরে আসতে পারবে না।

একই অনুষ্ঠানে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি শাহআলম বিএনপির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দল ছেড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন।

এ প্রসঙ্গে গিয়াস বলেন, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শিল্প সম্মৃদ্ধশালী এলাকা। আমাদের ফতুল্লায় বিএনপির মধ্যে ছিলেন এক সময় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সাহেব। ছিলেন আমাদের বিএনপিতে। বিএনপি থেকে নির্বাচনও করেছিলেন। আমি জানি না কি কারনে তিনি বিএনপি থেকে চলে গেছেন, কি স্বার্থে বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন। বিএনপির যখন দুর্দিন তখন তিনি বিএনপি ছেড়ে চলে গেছেন। স্বৈরাচারী দোসরদের সাথে গিয়ে আত্মরক্ষার জন্য হতে পারে, তার ধন সম্পদ রক্ষা করার জন্য হতে পারে, নিজে সে চলে গেছেন।

এ প্রসঙ্গে গিয়াস আরো বলেন, আরেকজন ব্যবসায়ী, আমার ছোট ভাই শাহআলম বিএনপিতে ছিল। আমরা খুশি ছিলাম সে বিএনপিতে ছিল। কিন্তু জানি না কেন গেলেন, বিএনপি যখন বিপদগ্রস্থ তখন তিনি বিএনপি ছেড়ে চলে গেলেন। কিসের ভয়ে নাকি কেন, আমরা জানিনা, তিনিও বিএনপি ছেড়ে চলে গেলেন। আমরা চেয়েছিলাম এই দুইজন যদি বিএনপি থাকতে, বিশ্বাসঘাতকতা যদি বিএনপির সাথে না করতো, তাদেরকে নিয়ে আমরা কাজ করতাম। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নাই। তারা আমাদেরই সন্তান এবং বিশিষ্টজন।

মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ শাহআলম প্রসঙ্গে আরো বলেন, কিন্তু ভয় পাইলে তো রাজনীতি করা যায় না। ব্যক্তিগত স্বার্থের চিন্তা করলে তো রাজনীতি করা যায় না। উনারা রাজনীতি ছেড়ে চলে গেছেন। এখন মাঝে মাঝে উনারা নাকি নেতাকর্মীদের সুরসুরি দেন। এই যে সুরসুরি দেন লাভটা কি? লাভ নাইতো। কারন বিএনপি আপনারা ত্যাগ করেছেন, বিএনপি আপনাদের ত্যাগ করেনি। এটা আপনারা স্বভাবগত কারনে করেছেন, হয়তো অভাবগত কারনে করেছেন, হয়তো নিজ থেকে করেছেন, এগুলো আপনারা করেছেন।

এখানে উল্লেখ্যযে, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হোন মোহাম্মদ আলী। ওই নির্বাচন বাতিল হলে তিনি আর রাজনীতিতে ফিরেননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা) আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে চলচিত্র অভিনেত্রী নৌকার প্রার্থী সারাহ বেগম কবরীর কাছে পরাজিত হোন শিল্পপতি শাহআলম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। নির্বাচনের পর তিনি ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন মাত্র। কিন্তু তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে বহাল রয়েছেন।

ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাসান মাহামুদ পলাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন। এতে আরো বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, ফতুল্লা থানা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান মাহামুদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার মনিরুল ইসলাম মনির প্রমুখ।