সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতাদের নানা ব্যর্থতার কারনে এ জেলায় ড. তৈমূর আলম খন্দকারের বিএনপিতে ফেরার সম্ভাবনা আরো বেশি প্রখর হয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর লাগামহীন বিএনপির নেতাকর্মীদের লাগাম টেনে ধরার মত নেতা ছিলেন কেবল একমাত্র তৈমূর আলম খন্দকারই। তৈমূর আলমের মত পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক, অহিংসু রাজনীতিক নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে নাই। এখানে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দায়িত্বশীল নেতারাও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন। দিনকে দিন নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে জনগণের মুখোমুখী দাঁড় করানো হচ্ছে, যা তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির রাজনীতিতে থাকলে তা হতো না।
স্থানীয়রা বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা যেসব কর্মকান্ড করেছেন তা তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির দায়িত্বে থাকলে হতো না। তৈমূর আলম খন্দকারের অনুপস্থিতি নারায়ণগঞ্জের রাজপথের নেতাকর্মীরা হারে হারে টের পাচ্ছেন। নারায়ণগঞ্জের সিংহভাগ নেতাকর্মীরা চান তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপিতে ফিরিয়ে নেয়া হোক। কিন্তু তৈমূর আলম ভিন্ন দলে নাম লেখানোর কারনে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সেই দাবি তোলার সাহস পাচ্ছেন না। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছেন যে, নারায়ণগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকারের মত রাজনীতিক বিএনপিতে প্রয়োজন। আগামী দুই তিন যুগেও নারায়ণগঞ্জ থেকে বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের একজন নেতা তৈমূর আলমের মত তৈরি নাও হতে পারে।
স্থানীয়রা আরো বলছেন, তৈমূর আলম খন্দকার যখন জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন তখন তার প্রভাব দাপট ও জনপ্রিয়তা ছিল জেলা জুড়ে। জেলার সাতটি থানা এলাকায় তৈমূর আলম খন্দকারের নেতাকর্মী রয়েছে। যে কোনো এলাকায় তৈমূর আলম খন্দকার কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি গিয়াসউদ্দীন তার নিজ থানা সিদ্ধিরগঞ্জের বাহিরে যেতে পারছেন না। এমনকি তার নিজ প্রত্যাশীয় আসন এলাকার অংশ ফতুল্লা থানা এলাকাতেও প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না। গিয়াস সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা নিয়েই পড়ে আছেন। জেলার অন্যান্য থানা এলাকায় তার কোনো পদচারণা নেই। অথচ তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়ার কর্মী। গোলাম ফারুক খোকন ছিলেন জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক। এর আগে ছিলেন তিনি মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। গোলাম ফারুক খোকনের রাজনীতি মুড়াপাড়াতেই সীমাবদ্ধ। অথচ তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক!
অথচ তৈমূর আলম খন্দকার ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে পুরো জেলা চষে বেরিয়েছেন। সোনারগাঁও, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, ফতুল্লা, বন্দর, সদর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় তিনি কর্মসূচি পালন করেছেন। এর আগে তিনি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। ২০০৯ সালে তৈমূর আলম যখন জেলা বিএনপির সভাপতি হোন তখন মহানগর না থাকায় শহর বিএনপির কমিটির নিয়ন্ত্রণও ছিল তৈমূর আলমের হাতে। যার ফলে তৈমূর আলম খন্দকার জেলার পুরো সাতটি থানা এলাকায় বিএনপিকে সংগঠিত করতে কাজ করেছেন।
এদিকে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত ও সদস্য সচিব টিপু মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। কারন হিসেবে অনেকে বলছেন, তাদের পূর্বপুরুষদের স্থানীয় ঠিকানা নারায়ণগঞ্জে না থাকায় তাদের নেতৃত্ব মানতে নারাজ বিএনপির নেতাকর্মীরা। যে কারনে মহানগরীর রাজনীতির চেয়ে তারা কোর্টপাড়ার রাজনীতিতে পড়ে থাকছেন বেশি। শহরে দু’একটি কর্মসূচি পালন করতে পারলেও বন্দরে তাদের তেমন একটা প্রভাব নেই। তাদের বিরোধীতা করে মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী গ্রুপের নেতারা পৃথকভাবে কর্মসুচি পালন করছেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর বন্দর নবীগঞ্জে নিজ দলের নেতাকর্মীদের হাতে বেদম মারধরের শিকার হয়েছেন টিপু।
এখানে উল্লেখ্যযে, ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত হওয়ার পরেও তিনি বিএনপির সকল কর্মসূচি পালন করেছেন। নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। গত নির্বাচনে ভিন্ন একটি দল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করেছেন সব সময় এবং জাতীয়তাবাদীর আদর্শে রাজনীতি করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন এবং প্রতিবাদ করে বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তৈমূর। গত জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনেও সমর্থন জুগিয়েছেন তৈমূর আলম। তিনি আন্দোলনের পক্ষে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে উজ্জীবিত করেছেন। নিহত শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন। ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। চট্টগ্রামে ইসকনের সন্ত্রাসীদের দ্বারা আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার দাবি ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে ‘ভয়েস অব ল’ইয়ারর্স অব বাংলাদেশ’ নামক সংগঠনের ব্যানারে ঢাকা টু চট্টগ্রামে রোড মার্চে অংশগ্রহণ করেছেন।