গিয়াস ও খোকনের রাজনীতিতে কালিমা লেপন: জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত!

সান নারায়ণগঞ্জ

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও গোলাম ফারুক খোকনের রাজনীতিতে কালিমা লেপন করে দিয়ে তাদের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। বিলুপ্তির কারন হিসেবে কেন্দ্রীয় বিএনপি জানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটির সুপারিশে এই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। তবে তাদের কি অপরাধ প্রমানিত হয়েছে সেটা পরিষ্কার করেনি কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে কেন্দ্রের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এটা পরিষ্কার করেছেন যে, তারা গুরুত্বর অপরাধ করার কারনেই তাদের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। এতে গিয়াস ও খোকনের রাজনীতিতে কালিমা লেপন হয়েছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

তাদের সামনের রাজনীতি যে ঘোর অন্ধকার সেটাও স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। যদিও গিয়াস অনুগামীরা বলছেন, ‘যারা এমপি মন্ত্রী হবেন, তারা দলের নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না, এটা তারেক রহমানের নির্দেশনা।’ এমনটা দাবি করে নিজেরা নিজেদের শান্তনা দিলেও গিয়াস খোকনের বেলায় সেটা নয়। কারন তারা দোষী প্রমানিত হওয়ার কারনেই তাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তবে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে রীতিমত উৎসবের আমেজ চলছে। নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল সহ মিষ্টি বিতরণ করে যাচ্ছেন। কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার পর থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই উৎসব আমেজ শুরু হয়।

২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অতিসত্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর জেলার বিভিন্ন নেতাকর্মীর নামে চাঁদাবাজি, দলখবাজি এবং টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধীদের আশ্রয় ও রক্ষা করার অভিযোগ ওঠে। তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সেই কমিটির সুপারিশে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

গত বছরের ১৮ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

গত ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপির সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু সাত বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সাড়ে তিন বছর পর সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর মনিরুল ইসলাম ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।