নারায়ণগঞ্জ জেলায় যোগ্য উত্তরসূরীর খোঁজে কেন্দ্রীয় বিএনপি

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও গোলাম ফারুক খোকনের নেতৃত্বাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। ২৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি জানান। এও জানানো হয় অতিসত্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হবে। কমিটি বিলুপ্তির কারনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি এখন নেতৃত্বশূণ্য।

সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতৃত্বের জন্য যোগ্য উত্তরসূরীর খোঁজ করছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কাকে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে বসানো যায় সেটার সিদ্ধান্ত না হওয়ার কারনে কমিটি বিলুপ্তির সঙ্গে ঝুলে আছে কমিটি ঘোষণার বিষয়টি। গত ২০ বছর যেসব নেতা জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে কেউ থাকছেন নাকি নতুন কোনো নেতাদের হাতে ওঠবে নতুন নেতৃত্ব সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে জেলা বিএনপির সাবেক ৪ জন নেতা চলে আসছেন রাজনীতির মাঠে আলোচনায়। যাদের মধ্যে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারের নামও চলে আসছে রাজনীতির মাঠে। কারন ৫ আগস্টের পর তৈমূর আলম খন্দকারের কার্যক্রমে ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। তিনি ‘তৃণমুল বিএনপি’ নামক দলের পরিচয় দিচ্ছেন না। জেলা বিএনপির রাজনীতিতে যে নেতৃত্বের শূণ্যতা তৈরি হয়েছে সেখানে তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপিতে ফিরিয়ে এনে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দিলেও রাজনীতিতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

কারন হিসেবে অনেকে বলেছেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন ‘বিএনপি যদি প্রয়োজন মনে করে ডাকলে দলের পাশে থাকবো’। ১৬ ডিসেম্বর রূপগঞ্জে তৈমূর আলম খন্দকার বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সহ সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিলও করেছেন। তিনি এও দাবি করেছেন, আমি আপাদমস্তক জাতীয়তাবাদের আদর্শের কর্মী।

এদিকে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার পর নতুন কমিটিতে কারা থাকছেন তা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সহ কেন্দ্রীয় পর্যায়েও আলোচনা চলছে। বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি গিয়াসউদ্দীনকে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারনে এবং তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি হলেও সিদ্ধিরগঞ্জের বাহিরে তার রাজনৈতিক প্রভাব দেখা যায়নি। জেলার অন্যান্য থানা এলাকায় তার কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়নি। একই দশা হয়েছিল কাজী মনিরের ক্ষেত্রে। তার আমলে তিনিও বন্ধি ছিলেন তার নিজ এলাকা রূপগঞ্জ কেন্দ্রীক কর্মকান্ডে।

রেজাউল করিমের আমলেও ছিল তার সোনারগাঁও কেন্দ্রীক রাজনীতি। রেজাউল করিমের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে চষে বেরিয়েছেন তৈমূর আলম পুরো জেলা। জেলার ৭টি থানা এলাকায় কর্মসূচি পালন করেছেন নিজে উপস্থিত থেকে তৈমূর। একমাত্র তৈমূর আলম খন্দকার পুরো জেলা বিএনপির নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে সভাপতি হয়ে টানা ৭ বছর পুরো জেলা বিএনপিতে একক আধিপত্য দেখিয়েছেন তৈমূর আলম। যে কারনে অনেকে মনে করছেন যদি অতীতের নেতাদের থেকে কাউকে নেতৃত্ব তুলে দেয়া হয় তাহলে তৈমূর আলম খন্দকারই যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা। নারায়ণগঞ্জে তৈমূর আলমের বিকল্প কেউ নেই।

তৈমূর আলমের মত নেতা নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে এখনো তৈরি হয়নি। বর্তমানে জেলা ও বিএনপির মহানগর বিএনপির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা প্রায় সবাই তৈমূর আলমের কর্মী। জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনের নেতা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া। এই দিপু ভুঁইয়াকেই রাজনীতির মাঠে এনেছেন তৈমূর। মামুন মাহামুদ ও মাসুকুল ইসলাম রাজীবও তৈমূর আলমের কর্মী। মামুন মাহামুদকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব পদে বসান তৈমূর। সোনারগাঁয়ে মান্নানকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন তৈমূর। এক সময় নজরুল ইসলাম আজাদকে আড়াইহাজারে পরিচিত করিয়েছেন তৈমূর। সুতরাং বিএনপিতে তৈমূর আলমের বিকল্প হিসেবে আরেকটি তৈমূর নারায়ণগঞ্জে সৃষ্টি করতে পারেনি বিএনপি। তৈমূর আলমের শূণ্যতা পূরণের মত নেতা নেই নারায়ণগঞ্জে।

এসবের পরেও তৈমূর আলম ভিন্ন দলে যাওয়ায় তাকে যদি না নেয়া হয় তাহলে তার স্থলে বিকল্প হিসেবে নতুন করে আলোচনায় আছেন কাজী মনিরুজ্জামান মনির। জেলা বিএনপির কমিটিতে আসার আলোচনায় আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহামুদ, সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব।

সূত্রে, গত বছরের ১৮ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সম্মেলনে একক প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম ফারুক খোকন নির্বাচিত হোন। এর আগে ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর গিয়াসউদ্দীনকে আহ্বায়ক, মামুন মাহামুদকে ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক ও গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

এর আগে ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ নগরীর চাষাড়া শহীদ জিয়া হলে জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম সভাপতি ও অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হোন। ১/১১ এর সময় রেজাউল করিম চলে যান দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী সংস্কারবাদীদের সঙ্গে এবং তারেক রহমানের পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান তৈমূর আলম খন্দকার। ২৬ মাস কারাভোগ করেন তৈমূর আলম খন্দকার।

পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৫শে নভেম্বর নগরীর আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপির সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০১৬ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার কারনে তৈমূর আলমের নেতৃত্ব মাইনাস করে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কাজী মনিরের চরম ব্যর্থতার কারনে এই কমিটির সাড়ে ৩ বছর পর সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুণরায় তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপি’র ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলম খন্দকারকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়।

২০২২ সালের ১৫ই নভেম্বর মনিরুল ইসলাম ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।