জেলা বিএনপির কমিটি আনতে পাঁচ মোড়লের টানাটানি!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটির নিয়ন্ত্রণ পেতে ৫ মোড়লের চলছে টানাটানি। নিজেরা নেতৃত্বে বসতে না চাইলেও তাদের অনুগামীদের নেতৃত্বে বসানোর লড়াইয়ে নেমেছেন তারা। গত ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তারপর থেকেই চলছে কারা আসছে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিকে পেছন থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন এমন ৫জন শীর্ষ নেতা রয়েছেন, যাদেরকে নেতাকর্মীরা মোড়ল হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এদের মাঝে আবার জেরা বিএনপির রাজনীতিতে দুটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেট ভিত্তিক রাজনীতিতে দুইদিকের দুই শীর্ষ নেতা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এদের মধ্যে একজন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, অপর সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া।

বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটে আছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি মুহাম্মদ শাহআলম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহামুদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক।

অন্যদিকে দিপু ভুঁইয়ার নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদু রহমান সুমন, সাবেক এমপি এম আতাউর রহমান খান আঙ্গুর, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি।

২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর গিয়াসউদ্দীন ও খোকনের নেতৃত্বে জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের পর আজাদ সিন্ডিকেটের নেতারা ব্যাকফুটে ছিলেন। কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগে তদন্ত কমিটির সুপারিশে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পর ফ্রন্টফুটে চলে আসছেন আজাদ অনুগামীরা। যদিও এদের মধ্যে আজহারুল ইসলাম মান্নানের সঙ্গে দুই সিন্ডিকেটের সকলের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

এদিকে খবর বেরিয়েছে যে, জেলা বিএনপির কমিটির জন্য নজরুল ইসলাম আজাদ অনেক আগেই মামুন মাহামুদ ও মাসুকুল ইসলাম রাজীবের নেতৃত্বে কমিটির খসড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে জমা দিয়েছেন। যদি সিনিয়র জুনিয়র মিলিয়ে কমিটি হয় তাহলে পরের নামে চলে আসছে কাজী মনির অর্থবা মান্নান। এক্ষেত্রে আজাদ ‍অনুগামীদের সমস্যা হবে না। কিন্তু বিপাকে পড়েছেন দিপু ভুঁইয়া সিন্ডিকেট। দিপু ভুঁইয়া চাচ্ছেন গোলাম ফারুক খোকনকে আহ্বায়ক ও শহিদুল ইসলাম টিটুকে সদস্য সচিব পদে রেখে জেলা বিএনপির কমিটি আনতে। কিন্তু বিতর্কের কারনে খোকনের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। যদিও শেষতক খোকনকে টিকাতে না পারলে টিটুকে কমিটিতে আনার জোর লবিং করছেন দিপু ভুঁইয়া ও সুমন।

আরো জানাগেছে, দিপু ভুঁইয়া ও সুমন সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সখ্যতা রয়েছে। তিনি এই সিন্ডিকেটকে নানাভাবে সহযোগীতা করে আসছেন। অনেকেই জানিয়েছেন, রিজভী মাহমুদুর রহমান সুমনের উকিল শ্বশুর। অন্যদিকে আজাদ সিন্ডিকেটের সঙ্গে সখ্যতা আছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। কাজী মনির ও মির্জা ফখরুলের সম্পর্কে বন্ধুত্ব আছে। এই সিন্ডিকেটকে মির্জা ফখরুল নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।

যদিও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের বিষয়টি পুরোপুরি তারেক রহমানের ‍উপর নির্ভর করছে। অনেকেই জানিয়েছেন তারেক রহমান জেলা বিএনপির কমিটি গঠনের জন্য সার্চ কমিটি গঠন করেছেন। সেই সার্চ কমিটি গোপনে কাজ করছেন। সার্চ কমিটি খসড়া কমিটি তারেক রহমানের কাছে সুপারিশ করে পাঠাবে। পরবর্তীতে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত গোয়েন্দার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই বাছাই করে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করবেন। কারো প্রেসক্রিপশনে একক কর্তৃত্ব বজায় রাখতে কারো মুঠোবন্ধি কমিটি দিবেনা বিএনপি।