জামপুরের সেই আওয়ামীলীগার গোলজার এখন বিএনপি নেতা!

সান নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের গোলজার হোসেন প্রধান আবারো পল্টি দিয়ে গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি নেতা সেজেছেন। গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করে এবার তিনি বিএনপিতে নাম লেখাচ্ছেন। নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে জামপুর ইউনিয়নে দাবিয়ে বেড়াচ্ছেন গোলজার হোসেন প্রধান। বহু অপকর্মের হোতা এই গোলজার।

শুরুতেই তিনি বিগত সাড়ে ১৫ বছর যেসব বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদেরকে দমানোর চেষ্টায় নেমেছেন। উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ম্যানেজ করে রাজপথের কর্মীদের ‍উপর স্টীমরোলার চালানো শুরু করেছেন। এলাকার জমিজমা ব্যবসার নামে যার কাজ দখলবাজি। সেই গোলজার এখন প্রভাবশালী।

স্থানীয়দের সূত্রে জানাগেছে, গত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির হয়ে কাজ করেছেন গোলজার হোসেন প্রধান। বিভিন্ন সময় সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সামসুল ইসলাম ভুঁইয়ার সঙ্গে কাজ করেছেন। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন।

২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর বস্তল এলাকায় জামপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষ নিয়ে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল মাকসুদ ভুঁইয়ার গণসংযোগে হামলা চালিয়েছিল গোলজার হোসেন প্রধান। নির্বাচনে নৌকা বিজয়ী হলে হুমায়ুন কবির ভুঁইয়াকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। নির্বাচনে হুমায়ুন কবির ভুঁইয়ার অন্যতম হাতিয়ার ছিলেন গোলজার।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর সঙ্গে সখ্যতাও দেখা গেছে গোলজার হোসেনের। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর হটাত করে বিএনপি নেতা সাজতে যাচ্ছেন গোলজার হোসেন প্রধান। সেজন্য বিএনপির রাজপথের সক্রিয় ত্যাগী নেতাদের সাইজ করে জামপুর ইউনিয়নে গোলজার হোসেন প্রধানের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন তিনি।

এদিকে জানাগেছে, উপজেলার জামপুর এলাকার ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক দিপু জামপুর মৌজায় আরএস ৩১৯ নং দাগের ২৭.৬৬ শতাংশ সম্পত্তি ইয়ামিনের নিকট থেকে রেজিস্ট্রিকৃত বায়না মুলে ক্রয় করেছেন। ওই সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করতে যান রূপগঞ্জের মাসাবো এলাকার আনোয়ার হোসেন, আউয়াল, গোলজার হোসেন প্রধানসহ তাদের একটি সিন্ডিকেট।

ওই সম্পত্তি থেকে ইমদাদুল হক দিপুকে সরাতে আনোয়ার ও গোলজার গং ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এ নিয়ে ইমদাদুল হক দিপুর সঙ্গে আনোয়ার-গোলজারদের বিরোধ চলে আসছিল এবং তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ইমদাদুল হক দিপুর বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করে আনোয়ার গং।

ইমদাদুল হক দিপু বিএনপির রাজনীতিতে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন। দলের কর্মী হওয়ার কারনে ইমদাদুল হক দিপুর আহ্বানে নিরপেক্ষ ভুমিকা নিয়ে বিষয়টি সুরাহ করতে চেয়েছিলেন উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ ভুঁইয়া। কিন্তু ভুমিদস্যু চাঁদাবাজ দখলবাজরা কোর্টের মামলায় আশরাফ ভুঁইয়ার নামে অভিযোগ তুলে দেয়।

পরবর্তীতে ইমদাদুল হক দিপুও বাদী হয়ে কোর্টে আনোয়ার ও গোলজার গংদের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। এতে নিজেদের ধোয়া তুলসি পাতা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করে আশরাফ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলা হয়।

বিষয়টি স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে কোনো রকম যাচাই বাছাই তদন্ত ছাড়াই আশরাফ ভুঁইয়াকে বহিস্কার করে দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল। ২৩ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় যুবদলের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সোহেল স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আশরাফ ভুঁইয়ার বহিষ্কারের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।