সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁয়েই সবচেয়ে বেশি মাদকের ছড়াছড়ি। প্রতিটি এলাকার অলিগলি এখন মাদকের স্পট। কিন্তু এই সোনারগাঁয়ে অন্যান্য থানা থেকে তুলনামুলকভাবে মাদকের উদ্ধার ও গ্রেপ্তার দেখা যাচ্ছে কম! কক্সবাজারের টেকনাফ হয়ে কুমিল্লা বর্ডার পাড় হয়েই সোনারগাঁয়ে ঢুকছে মাদক। এভাবে মাদক দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে সোনারগাঁয়ে। সেই সঙ্গে ব্রাক্ষ্মনবাড়িয়া থেকেও ভারতের বর্ডার থেকে পাড় হয়ে মাদক চলে আসছে সোনারগাঁয়ে। অথচ জেলা পুলিশের ব্লক রেইড ও মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে সোনারগাঁয়ের চেয়ে অন্যান্য থানায় মাদক উদ্ধার ও গ্রেপ্তার হয়েছে বেশি।
জানাগেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জেলার মাদক ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যূ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে নামেন। প্রভাবশালী অনেক সন্ত্রাসী চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করে জেলায় সাধারণ মানুষের কাছে বেশ প্রসংশা পান এসপি হারুন। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা, ফতুল্লা থানা, বন্দর থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মাদক বিরোধী অভিযানে বিপুল সংখ্যক মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় মাদকও। কিন্তু সেই অনুপাতে সোনারগাঁয়ে সবচেয়ে বেশি মাদকের ছড়াছড়ি যেখানে পুলিশের অভিযান মাদকের বিরুদ্ধে অনেকটা ঢিমেতালে।
স্থানীয়রা বলছেন- সোনারগাঁও থানা পুুলিশের অনেক সদস্যদের সঙ্গে এলাকার মাদক বিক্রেতাদের এক সাথে চায়ের দোকানে বসে চা পান করতেও দেখা যায়। তাহলে এখানে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান দিবে কে? যারা দীর্ঘদিন যাবত সোনারগাঁ থানায় কর্মরত তাদের এখান থেকে সরিয়ে নতুন পুুলিশ সদস্যদের দিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানে যাওয়া উচিত। যারা দীর্ঘদিন যাবত এখানে কর্মরত রয়েছেন তাদের অনেকের সঙ্গেই অনেকের সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। এমনকি এর আগে থানা পুুলিশের মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা প্রস্তুত করেছিল সেই তালিকার মাদক ব্যবসায়ীরা এখন প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রি করছে। নামে মাত্র ওই তালিকা প্রস্তুত করলেও তালিকায় নাম আসা অনেক মাদক ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে থানা পুলিশের সঙ্গে থানায় এসে কথা বলতেও। মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রস্তুত করেই থানা পুুলিশ তার কার্যক্রম শেষ করে। কিন্তু মাদক বিক্রেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। থানার ওসি পরিবর্তন হলেও মাদক ব্যবসায়ীরা হরদম চালিয়ে যাচ্ছে মাদক বিক্রি।
যদিও ইতিমধ্যে ৫জন রোড ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে সোনারগাঁও থানা পুুলিশ। ঈদ উপলক্ষ্যে ছিনতাই ডাকাতি রোধে থানা পুুলিশ তৎপর হলেও এতদিন মাদকের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে সোনারগাঁও থানা পুুলিশের মাদক উদ্ধার ও গ্রেপ্তার অন্যান্য থানা পুলিশ থেকে কম। অথচ সোনারগাঁয়ের প্রায় প্রতিটি এলাকায় ছোট ছোট মাদকের স্পট গড়ে ওঠেছে।
গত মাসে সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের একটি স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁ) আসনের এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ সেই যুদ্ধ ঘোষণাটি কর্ণপাতই করছে না। প্রায় এক টানা মাসব্যাপী পুুলিশের ব্লক রেইড চললেও একটি অভিযানে সোনারগাঁও থানা পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় মাত্র। কিন্তু এসব গ্রেপ্তারকৃতদের বেশির ভাগই মাদকসেবী। ধরা ছোয়ার বাহিরে রয়েছে মাদকের ডিলাররা। অনেক রাজনৈতিক চিহ্নিত ছিচকে সন্ত্রাসীরাও দিয়ে যাচ্ছে মাদকের শেল্টার। এই সোনারগাঁয়েই সবচেয়ে বেশি মাদক উদ্ধার ও গ্রেপ্তার হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানেই যখন মাদক উদ্ধার ও গ্রেপ্তার কম তখন বুঝা যায় জেলা পুলিশ সুপার হারুণ অর রশীদের প্রসংশনীয় কাজের সাথে তাল মিলাতে পারছেনা সোনারগাঁও থাানা পুলিশ।
এর মধ্যে কাচপুর এলাকার দুই চোখ অন্ধ রবিউল আউয়াল রবির নামে একজনের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মনির। কিন্তু তিনি ওই অভিযানের বিষয়ে অভিযোগকারী রবিকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যায়িত করে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
ওই ঘটনায় জানাগেছে, দুই চোখই অন্ধ সোনারগাঁয়ের রবিউল আউয়াল রবির। তার বসতভিটে দখলের পায়তারা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। চাঁদা না দিলে ভিটে মাটি ছেড়ে দেয়ার হুমকিও দিয়েছিল দাপটশালীরা। কিন্তু এমন অভিযোগ নিয়ে অন্ধ রবিউল আউয়াল রবি গিয়েছিলেন সোনারগাঁ থানায়। কিন্তু লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর মামলা করতে পুুলিশ হাতিয়ে নিয়েছেন ওই অন্ধ প্রতিবন্ধির কাছ থেকে ৩২ হাজার টাকা। কিন্তু আসামি পক্ষের সঙ্গে আতাত করে ৩২ হাজার টাকা ঘুুষ গ্রহণ করলেও মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ।
এমন অভিযোগ তুলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির, থানা পুুলিশের এসআই মুক্তার হোসেন, এসআই পঙ্কজ দেবনাথ ও ওসির ড্রাইভার সফিকের বিরুদ্ধে ৩২ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন এক অন্ধ প্রতিবন্ধি রবিউল আউয়াল রবি। মে বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী রবি।
লিখিত অভিযোগে রবি উল্লেখ করেন, আমি একজন অন্ধ প্রতিবন্ধি। বিগত ২০০৪ সাল থেকে আমি সোনারগাঁ থানাধীণ কাঁচপুর বিসিক এলাকায় সরকারী খাস সম্পত্তির উপর ঘরবাড়ি তুলে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছি। বিগত ২০ এপ্রিল সোনারগাঁয়ের মোমেন, জামাল, আকতার, হব,ি আঞ্জুসহ আরো ৪/৫ জন পরিকল্পিতভাবে যোগসাজসে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রসহ আমার বাড়িতে প্রবেশ করে এবং এই যায়গায় বাস করতে হলে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে। আমি এই চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সন্ত্রাসীরা আমাকে উচ্ছেদ করার হুমকি প্রদান করে এবং আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে বলে শাসায়।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, গত ২১ এপ্রিল সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দায়ের করিলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলে, মামলা নিতে হলে কিছু টাকা লাগবে। সেমতে ওসি সাহেব নেয় ১০ হাজার টাকা, এসআই মুক্তার হোসেন নেয় ৯ হাজার টাকা, এসআই পঙ্কজ নেয় ৬ হাজার ও ওসি সাহেবের ড্রাইভার সফিক নেয় ৭ হাজার টাকা। এই টাকা নিয়েও আসামীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ গ্রহন করেনি এবং আমাকে ও আমার পরিবারের লোকজনকে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেবে বলে হুমকি প্রদান করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই দিন সোনারগাঁ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেছিলেন, অভিযোগকারী রবি একজন মাদক ব্যবসায়ী। এলাকায় সে ফেন্সি রবি নামে পরিচিত। কিছুদিন আগে তার ছেলেকে ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রবি যাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেছে, পুলিশ তদন্ত করে দেখেছে সে অভিযোগ সত্য নয়। বরং রবি তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আর পুলিশ তার কাছ থেকে কোন টাকা গ্রহণ করেনি। পুরো ঘটনাটি সাজানো এবং মিথ্যা।’