ঢাল হিসেবে শামীম ওসমান: আইভী সুফিয়ান ঠেকাতে আনোয়ার রশিদ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা এমপি একেএম শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র আইভীর মনোনয়ন ঠেকাতে আনোয়ার হোসেনকে হাইলাইট করেছিলেন শামীম ওসমান। পরবর্তীতে আনোয়ার হোসেন হয়ে গেলেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এবার বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে একেএম আবু সুফিয়ান ঠেকাতে এমএ রশিদ হয়ে গেলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। দুজনই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় দুটি দপ্তরের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেলেন। কিন্তু এর আগে এই দুজনই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচন করে ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। দুজন জনপ্রতিনিধি হওয়ার পিছনে ওসমান পরিবারের হাত।

নেতাকর্মীরা বলছেন- নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে নিতে কিছুটা ব্যর্থ শামীম ওসমান। শামীম ওসমান বলতেই নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগ। সেখানে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী দলীয় সাংগঠনিক নেতার কাতারেই পড়েন না। তার চার পাশে বাম পন্থী রাজনীতিকদের ছড়াছড়ি। যদিও বর্তমানে শামীম ওসমানের সঙ্গ ছেড়ে আসা অনেকেই মেয়র আইভীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আবার শামীম ওসমানের সঙ্গে থেকে যারা তার প্রতি নাখোশ এবং ওসমান বিরোধী তারাও এখন মেয়র আইভীর ছত্রছায়ায়।

আবার শামীম ওসমান যাদেরকে দিয়ে মেয়র আইভীকে ঠেকানোর চেষ্টা করেছেন এক সময় তারাই আবার শামীম ওসমানকে পল্টি দিয়েছেন। কদিন পর বন্দরের এই এমএ রশিদও শামীম ওসমানকে পল্টি দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারন এমএ রশিদ এর আগে থেকেই মেয়র আইভীর সঙ্গে তলেতলে সুসম্পর্ক রেখে আসছিলেন। সুফিয়ানের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছিলেন। আর আনোয়ার হোসেনকে মাজার জিয়ারত করে শপথ বাক্য পাঠ করেও শামীম ওসমানের বলয়ে ত্যাগ করেছেন।

জানাগেছে, ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানের ইসারাতেই মহানগর আওয়ামীলীগ থেকে মেয়র পদে তিন জনের নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়। যেখানে আনোয়ার হোসেনকে প্রথমে রাখা হয়। ওই নির্বাচনে মহানগর আওয়ামীলীগ মেয়র আইভীর নাম কেন্দ্রে না পাঠালেও আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পান মেয়র আইভী। নির্বাচনের আগে আনোয়ার হোসেনকে নিয়ে বিশাল বিশাল শোডাউন করেছিলেন শামীম ওসমান। যে আনোয়ার হোসেন শতজন নেতাকর্মী নিয়ে তখন শোডাউন করার মত সামর্থ ছিল না সেই আনোয়ার হোসেনকে মেয়র হিসেবে দেখতে চায় এমন শ্লোগান তুলেছিলেন হাজার হাজার নেতাকর্মীরা।

মুলত মেয়র আইভীকে ঠেকাতেই দাড় করানো হয়েছিল আনোয়ার হোসেনকে। নির্বাচনের আগে সিলেটে গিয়ে মাজার জিয়ারত করেছিলেন আনোয়ার হোসেন। শপথে ছিল কোন ক্রমেই আনোয়ার হোসেন শামীম ওসমানকে ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি ভুলে গেছেন। এখন শামীম ওসমানের কঠিন সময়েও আনোয়ার হোসেন পাশে নেই। মাঝে সাঝে শামীম ওসমানকে বেকায়দায় ফেলতে আকার ইঙ্গিতে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র আইভীকে মনোনয়ন দেয়া হলে তার দুদিনের মাথায় জুমা নামাজ পড়তে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন আনোয়ার হোসেন। যা মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে আনোয়ার হোসেনকে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি খাওয়া ধাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি শোকে কাতর। এমন খবর শুণে প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার হোসেনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ঘোষণা করে দেন। হাসপাতালের বিছানায় শুণে আনোয়ার হোসেন শুনতে পান তাকে এই মনোনয়ন দেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন তিনি। যাতে কোন প্রার্থী না থাকে সেই ব্যবস্থাও করে দেয় দলটি।ফলে বিনা ভোটেই আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অথচ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোটের লড়াইয়ে আনোয়ার হোসেন পরাজিত হয়েছিলেন। অথচ এর আগে আনোয়ার হোসেন আইভীর ঘনিষ্ট কর্মীর মতই কাজ করে আসছিলেন। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আনোয়ার হোসেন অধিষ্ট হওয়ার পিছনে ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছেন শামীম ওসমান।

এদিকে আগামী ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। ভোট গ্রহণের আগেই বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এমএ রশিদ মিয়া। তিনি এর আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির নেতা আতাউর রহমান মুকুলের সঙ্গে কোন রকম প্রতিদ্বন্ধিতাই গড়তে পারেননি। সেই পরাজিত প্রার্থী এবার বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন। যার পিছনে কাজ করেছেন শামীম ওসমান। রশিদের মনোনয়ন দাখিলের পর শামীম ওসমান বলেছেন, এক বদমাইশের হাত থেকে বন্দরকে রক্ষা করতেই রশিদ ভাইকে সমর্থন করে নৌকা এনেছি।

মুলত এখানে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ানও। এই সুফিয়ান মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠ কর্মী। এমএ রশিদের সঙ্গেও মাঝখানে ওসমান পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়ান ছিল। কিন্তু সেই রশিদের জন্যই শামীম ওসমান মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে কাজ করেছেন। মুলত এখানে সুফিয়ানকে ঠেকাতেই রশিদকে বেছে নিতে হয়েছে ওসমান পরিবারকে। এখানেও ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হলেন শামীম ওসমান। ভোটের নির্বাচনে পরাজিত দুই নেতা দুটি দপ্তরের চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে গেলেন। অথচ শামীম ওসমানের চার পাশে এই দুজনের চেয়ে অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা থাকলেও তাদের ভাগ্যে জুটেনি কোন দপ্তরের চেয়ারম্যান হওয়ার। ইতিমধ্যে আনোয়ার হোসেন শপথ পাঠ করেও পল্টি দিয়েছেন। এখন দেখার পালা এমএ রশিদ কোন দিকে যায়।