সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
সাত খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন বিএনপিকে দিয়েছিলেন আলিশান কার্যালয় উপহার। বিনিময়ে সেই নূর হোসেনের আপন ভাই মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীনকে করা হয়েছিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। একই সঙ্গে নূর হোসেনের শর্ত ছিল সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির কমিটিতে বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দীনের কোন লোকজনকে রাখা যাবে না। নূর হোসেনের শর্ত মেনেই সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটিতে গিয়াসউদ্দীনের কোন লোকজনকেই রাখা হয়নি। যে কারনে বিএনপির প্রতি খুশি হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপিকে নূর হোসেন দিয়েছিলেন আলিশান বিএনপি কার্যালয়।
জানাগেছে, ২০১২ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেন তৎকালীন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও সেক্রেটারি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। কমিটিতে আহ্বায়ক শিল্পপতি সফর আলী ভূঁইয়া ও সদস্য সচিব করা হয় অধ্যাপক মামুন মাহামুদকে। আগের কমিটির সভাপতি আবদুল হাই রাজু ও এমএ হালিম জুয়েল সহ গিয়াসউদ্দীনের বলয়ের কাউকেই রাখা হয়নি কমিটিতে। যদিও বর্তমানে আবদুল হাই রাজু গিয়াসউদ্দীনের বলয় ছেড়ে দিয়েছেন।
কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় প্রয়াত আলী হোসেন প্রধান, মনিরুল ইসলাম রবি, মাজহারুল হক মুয়ুর, মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীন, পারভেজ আহমেদ, আলী আহমদ লালা বেপারী সহ বেশকজনকে। এই কমিটি গঠনের পর সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডান পাশে বিশাল আলিশান কার্যালয় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপিকে উপহার দেন এক সময়কার বিএনপি নেতা নূর হোসেন। ওই সময় এই নূর হোসেন ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি। এর আগে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। বিএনপির এসব নেতাদের সঙ্গে নূর হোসেনের আপন ভাই মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীনের মাধ্যমে ভিতরগত যোগাযোগ ছিল বেশ। ওই সময় নূর হোসেন হাজারো অপকর্ম করে গেলেও নূর হোসেনের বিরুদ্ধে বিএনপির কোন শীর্ষ নেতা কখনই বক্তব্য দেননি। অনেক শীর্ষ নেতাদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল নূূর হোসেনের কার্যালয়ে। যে কার্যালয়ের চার পাশে ছিল মাদক বিক্রির হাট ও নগ্ন নৃত্যের আসর।
জানাগেছে, নূর হোসেনের গানম্যানদের একজন আনোয়ার হোসেন আশিক। এই আনোয়ার হোসেন আশিককে মহানগর শ্রমিকদলের সেক্রেটারি করা হয়। তৈমূর আলম খন্দকারের মাসদাইরের বাড়িতে এক কথিত সম্মেলনে আশিককে মহানগর শ্রমিকদলের সেক্রেটারি করা হয়। যেখানে একক সমর্থন ছিল তৈমূর আলমের। বিএনপির অনেক কর্মসূচিতে নূর হোসেন ডোনেট করতেন বলেও ওই সময় গুঞ্জন ওঠেছিল। একইভাবে নূর হোসেনের বাস স্টান্ড থেকে চাঁদা সংগ্রাহক টিএইচ তোফাকে জেলা তরুণ দলের সভাপতি করা হয়। এমনকি একটি মামলায় কারাগারে গেলে তোফাকে বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হয় তৈমূর আলম খন্দকারের মাসদাইরের বাসায়। আনোয়ার হোসেন আশিক সাত খুনের মামলায় আসামি হয়েছিলেন। তিনি চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পান। একইভাবে থানা বিএনপির সদস্য ছিলেন ইকবাল হোসেন। যিনি নূর হোসেনের সঙ্গে কাজ করতেন। যদিও আশিক সাত খুনের মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন- মুুলত গিয়াসউদ্দীনের সঙ্গে নূর হোসেনের রাজনৈতিক বিরোধ ছিল সিদ্ধিরগঞ্জের নানা সেক্টর নিয়ন্ত্রন নিয়ে। গিয়াসউদ্দীন যখন এমপি ছিলেন তখন নূর হোসেন এলাকায় থাকতে পারেননি। যে কারনে নূর হোসেন চেয়েছিলেন গিয়াসউদ্দীন যেনো বিএনপির মনোনয়ন না পান এবং যাতে বিএনপিতে তার কোন প্রভাব না থাকে। যে কারনে বিএনপির পিছনে খরচা করেছেন নূর হোসেন। এটা বিএনপি নেতারাও লুফে নিয়েছিলেন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সিদ্ধিরগঞ্জে গিয়াসউদ্দীনের একটি মার্কেট দখলে নিয়ে যায় নূর হোসেন। আরও কথিত ও গুঞ্জন ওঠেছিল ওই সময় কাচপুরের শ্রমিক সমাবেশে মিয়া নূর উদ্দীনের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা প্যান্ডেলের জন্য দিয়েছিলেন নূর হোসেন। যে শ্রমিক সমাবেশে এসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
এদিকে আরও জানাগেছে, নূর হোসেন সাত খুনের মামলায় আসামি হলে দেশে ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায়। তার পর থেকে বিএনপি কার্যালয়ের ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। কারন ওই কার্যালয়ের ভাড়াটি পরিশোধ করতো নূর হোসেন নিজেই। ভাড়া পরিশোধ না করায় কার্যালয়টি ভবন মালিক নিয়ে অন্যত্র ভাড়া দিয়ে দেয়। এ নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহামুদ মিডিয়াতে ঘোষণা দেন সেই কার্যালয়টি এখন আর নেই।
এ নিয়ে ২৫মে শনিবার সিদ্ধিরগঞ্জে যখন জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিল একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় তখন নেতাকর্মীদের অনেকেই মিডিয়াতে জানিয়েছেন তাহলে বিএনপির ওই কার্যালয়টি কোথায়? যা নূর হোসেন দিয়েছিলেন। তবে নূর হোসেন সাত খুন মামলায় আসামি হওয়ার পর বিএনপির রাজনীতিতে আর দেখা যায়নি নূর হোসেনের আপন ভাই মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীনকে। সাত খুনের মামলায় নূর হোসেনের বিরুদ্ধে প্রতিটা শুনানির দিন আদালতে বিএনপি নেতা মিয়া মোহাম্মদ নূর উদ্দীনকে দেখা গিয়েছিল। ফলে বিষয়টি নেতাকর্মীদের কাছে পরিস্কার হয়ে যায়।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ভবনে নেয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কার্যালয়টি এখন আর নেই। সিটি কর্পোরেশনের ভবনে একটি দোকান হিসেবে ভাড়া নিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয় হিসেবে চালিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে মামলায় লড়াই চালান বিএনপি নেতারা। মামলায় হেরে গেলে ভবনটি ইতিমধ্যে ভেঙ্গে সেখানে ৯তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির কোন কার্যালয় নেই।