সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনারা জানেন আমাকে গুম করা হয়েছিল। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন আমাকে জেলে রাখা হয়েছিল। আমি তবুও রাজনীতি ছেড়ে যাইনি। শত হামলা মামলা নির্যাতনের পরেও আমি রাজপথ ছেড়ে যাবো না। আগামীতে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদলকে নিয়ে রাজপথে দূর্বার আন্দোলন করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব ইনশাহআল্লাহ।
এ ছাড়াও তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত করা। জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড ইউনিয়ন থানা পর্যায়ে শক্তিশালী ছাত্রদল গঠন করা। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কাউকে ভয় পায়না।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন মশিউর রহমান রনি। তার দুই দিন পর ফতুল্লা থানা পুলিশ তাকে অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানায়। এরপর তাকে তিনটি অস্ত্র ও গুলি মামলায় আসামি করা হয়। মামলায় তাকে ১০ দিন রিমান্ডে নেয় পুলিশ। প্রায় ৬ মাস পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান রনি।
২৭ মে সোমবার নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লার বাংলা ভবনে জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা, মুক্তির দাবিতে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ছাত্রদলের এই নেতা।
এদিকে দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটাতে পেরেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা, মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেল।
২৭ মে সোমবার ফতুল্লার বাংলা ভবনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহামুদুল হক আলমগীর, কেন্দ্রীয় শহীদ জিয়া আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন, জেলা বিএনপি নেতা বোরহান উদ্দীন বেপারী, আব্বাস উদ্দীন বাবুল, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, জেলা মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা শরীফ মায়া ও মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ বলেন, আমরা সুশৃঙ্খলভাবে আন্দোলন করতে পারলে আমরা বিজয় লাভ করব। তাই আমাদের প্রথমেই শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। ছাত্রদলের আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবো এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। ছাত্রদলের আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে শান্তির পায়রা উড়িয়ে দিব। সেই শান্তির পায়রা উড়াতে গেলে ছাত্রদলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের নেতৃত্বে ছাত্রদলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল বলেন, আমরা কেউ ভাল নেই। কারন আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। তাকে কারাগারে রেখে আমরা কি কেউ ভাল থাকতে পারি? আমরা আসলে কেউ ভাল নেই। আমাদের সবার চাপ কষ্ট আছে। আগামীতে কেন্দ্র থেকে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে আমরা সেইসব কর্মসূচিতে ছাত্রদলকে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বো।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস বলেন, রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছাত্রদলের আজকের ইফতার পার্টি। বেগম খালেদা জিয়ার মুুক্তির আন্দোলনে রাজপথে দামাল সৈনিকের ভুমিকায় দেখতে চাই ছাত্রদলকে। ছাত্রদলকে নিয়ে রাজপথ কাপিয়ে আমরা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল বলেন, আন্দোলন করার জন্য ছাত্রদল অগ্রনী ভুমিকা রাখবে। দেহের তাজা রক্ত দিবে। তারপর এদেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। কিন্তু ছাত্রদলে যদি অনৈক্য থাকে তাহলে সেই আন্দোলন কখনই সফলতার মুখ দেখবে না। আমরা বিগত দিনের মতই ছাত্রদল ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকবে। আগামী আন্দোলনে ছাত্রদলকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাই।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, ছাত্রদল বিএনপির ভ্যানগার্ড। আমরা সবাই মুখে মুখে বলি আমার মা জেলে। আসলেই কি আমাদের নেত্রী আমাদের মা জেলে? আমি এটা বিশ^াস করি না। আমরা মা যদি জেলে থাকতো তাহলে কখনই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারতাম না। আমাদের মধ্যে কোন অস্তিরতা নেই। দেড় বছর হয়ে গেল আমাদের নেত্রী জেলে কিন্তু কঠোর কোন আন্দোলন দিতে পারে নাই। তাহলে কিসের আমাদের মা জেলে? আওয়ামীলীগ বিনা ভোটে ৫ বছর থেকেছে। ভোটের আগের দিন ভোট দিয়ে ৫ বছর থাকবে। এভাবে আরো থাকবে যদি আমরা আন্দোলন করতে না পারি। তাহলে দেখা যাবে তিন দিন আগেই ভোট শেষ। তাই আমাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেন, আমরা একতাবদ্ধ ছাত্রদল দেখতে চাই। এ রকম বিভক্ত ছাত্রদল দেখতে চাই না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সামনের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ ছাত্রদলকে মাঠে দেখতে চাই।
শহীদ জিয়া আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন বলেন, আমরা জাতীয়তাবাদী শক্তি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সব সময় রাজপথে ছিলাম এবং থাকবো। আগামীতে ছাত্রদলকে নিয়ে আমরা আইনজীবীরাও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত ও গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলনে রাজপথে থাকবো।
এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত, জেলা ছাত্রদল নেতা শাহজাহান মিয়া, জুয়েল আরমান, সাগর সিদ্দিকী সহ বিভিন্ন থানা থেকে আগত শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এসময় জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন বিভিন্ন থানা ইউনিয়ন পৌরসভা ওয়ার্ড পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় নেতাদের বক্তব্যের সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দফায় দফায় শ্লোগান দেন।