রনির ডাকেই কর্মীর স্রোত, ঠেকাতে ব্যর্থ বিদ্রোহীরা

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ১২ সদস্যের কমিটি। এই কমিটির বেশকজন নেতা জেলা ছাত্রদলের আয়োজিত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া, কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুস্থ্যতা কামনা করে দোয়া মাহফিল ও ইফতার পার্টিতে আসেননি। তারা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। যা আলোচিত হয়েছে তারা বিদ্রোহ করেছেন। তবে ওই অনুষ্ঠানে জেলা ছাত্রদলের সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তার এক অসুস্থ্য আত্মীয়কে হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার কারনে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। তবে সর্বপরি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি একাই বিশাল আয়োজনের কর্মসূচি সফল করেছেন। ওইসব ছাত্রদল নেতারা বিদ্রোহের ঘোষণা দিলেও তারা ছাত্রদলের কর্মী ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীরা ঠিকিই উপস্থিত হয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত সকালে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোন ধরণের বক্তব্য না দিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেন। তার বক্তব্যে তখনি প্রমাণিত হয়ে যায় তিনি বর্জনের ঘোষণার পর অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তিনি অনুষ্ঠানটিকে বিতর্কিত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে। যার পেছনে কিছু নেতার ইন্দন রযেছে বলেও দাবি করেছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তবে ইফতার মাহফিল শেষে মশিউর রহমান রনি শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখতে গেলে মশিউর রহমান শান্ত বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে তা হয়ে ওঠেনি।

ছবি- নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের ইফতার মাহফিলে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের অংশগ্র্রহণ।

নেতাকর্মীরা বলছেন- জেলা ছাত্রদলের দোয়া মাহফিলে যেখানে হাজারের অধিক নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে যারা বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছেন উল্টো তারাই ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের বিদ্রোহী কিংবা বর্জনের ঘোষণা কর্মীরা আমলে নেয়নি। যে কারনে সকল থানা ইউনিয়ন পৌরসভা ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীদের স্রোত দেখা যায় জেলা ছাত্রদলের অনুষ্ঠানে। উল্টো বিদ্রোহ করে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন জেলা ছাত্রদলের নেতারা। কারন আরও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তারা এ কারনেই যে, কর্মীদের দাবি- যদি জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে তাদের কোন মত দ্বিমত থেকে থাকে সেটা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুস্থ্যতা দাবির ইফতার দোয়া মাহফিলে কেন উত্থাপন করা হলো? এটা নিয়ে তারা আগে কিংবা পরেও বসতে পারতেন।

এসবের কারন হিসেবে জানাগেছে, জেলা ছাত্রদলের শীর্ষ পদে থাকা নেতারা অনৈতিক দাবি করেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারির কাছে। বিএনপির গঠনতন্ত্রে যেখানে নির্ধারণ করা হয়েছে এক নেতার এক পথ। সেখানে তারা জেলার নেতৃত্বের পাশাপাশি চাচ্ছেন অন্যান্য থাকার নেতৃত্বও। এ নিয়েই মুুলত তাদের সঙ্গে সভাপতি ও সেক্রেটারির বিরোধ। তারা জেলায়ও থাকতে চান আবার অন্যান্য থানাগুলোর নেতৃত্ব চান।

জানাগেছে, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুজনেই চান আড়াইহাজার উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্বে থাকতে। তারা জেলার সঙ্গে উপজেলা ছাত্রদলকেও কুক্ষিগত করতে চান। অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত চান সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব। সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল মিয়া ও সহ-সভাপতি ইসমাইল মামুন চান রূপগঞ্জের নেতৃত্ব। বন্দরের নেতৃত্ব চান অপর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান রাজ। ফলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তারাই হতে চান অন্যান্য উপজেলার শীর্ষ নেতা। এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে জেলার সভাপতি ও সেক্রেটারির। আবার জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ গঠনেও চান তাদের চার পাশের কর্মীদের শীর্ষ পদে রাখতে। নতুবা চান থানা উপজেলার কমিটিতে শীর্ষ পদে রাখতে। ফলে তাদের এুসব দাবি মানা সভাপতি ও সেক্রেটারির কাছে কঠিন হয়ে গেছে। এ কারনেই মুলত জেলা ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে সরে যেতে চাচ্ছেন। কিন্তু এসব বিদ্রোহীদের আন্দোলন ও ত্যাগ টেনে আনলে অনেক থানার পর্যায়ের নেতাদের চেয়েও অনেকের কম বলেও দাবি করেছেন ছাত্রদলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

এদিকে জানাগেছে, দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের সমাগম ঘটাতে পেরেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী ও বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ্যতা, মুক্তির দাবিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কয়েক হাজার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেল।

২৭ মে সোমবার ফতুল্লার বাংলা ভবনে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি।

ছবি- নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে ইফতার মাহফিল।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহামুদুল হক আলমগীর, কেন্দ্রীয় শহীদ জিয়া আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন, জেলা বিএনপি নেতা বোরহান উদ্দীন বেপারী, আব্বাস উদ্দীন বাবুল, মহানগর যুবদলের সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি মন্টু মেম্বার, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, জেলা মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রহিমা শরীফ মায়া ও মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ।

ছবি- বক্তব্য রাখছেন জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রহমান রনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলকে শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত করা। জেলার প্রতিটি ওয়ার্ড ইউনিয়ন থানা পর্যায়ে শক্তিশালী ছাত্রদল গঠন করা। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কাউকে ভয় পায়না। আপনারা জানেন আমাকে গুম করা হয়েছিল। আমাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন আমাকে জেলে রাখা হয়েছিল। আমি তবুও রাজনীতি ছেড়ে যাইনি। শত হামলা মামলা নির্যাতনের পরেও আমি রাজপথ ছেড়ে যাবো না। শত নির্যাতনেও রাজনীতি ছাড়বোনা। আগামীতে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রদলকে নিয়ে রাজপথে দূর্বার আন্দোলন করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব ইনশাহআল্লাহ।

এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান শান্ত, জেলা ছাত্রদল নেতা শাহজাহান মিয়া, জুয়েল আরমান, সাগর সিদ্দিকী সহ বিভিন্ন থানা থেকে আগত শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এসময় জেলা ছাত্রদলের আওতাধীন বিভিন্ন থানা ইউনিয়ন পৌরসভা ওয়ার্ড পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় নেতাদের বক্তব্যের সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কারাগারে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দফায় দফায় শ্লোগান দেন।