নাজমুল হুদার ‘তৃণমূল বিএনপি’ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নামলেন আজাদ!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

বিএনপির দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে একজন হিসেবে মনে করেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে। বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে প্রথমে গমের শীষ নিয়ে বিএনএফ গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে করেছিলেন ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামক রাজনৈতিক দল। নেই নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি নিয়ে এবার নারায়ণগঞ্জে মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তিনি আড়াইহাজার কেন্দ্রীক রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও ইতিমধ্যে এই তৃণমূল বিএনপির ব্যানারে মহানগরীতে দুটি কর্মসূচি পালন করেছেন। যা নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন তৃণমূল বিএনপি নামে বিএনপির কোন অঙ্গ সহযোগী সংগঠন নেই। তাহলে আজাদের এই তৃণমূল বিএনপি কোনটি? তার উত্তর খুজতে বের হয়ে আসে সেই নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি। যে কারনে কেউ কেউ বলছেন, নাজমুল হুদার তৃণমূল বিএনপি নিয়ে এবার নারায়ণগঞ্জে মাঠে নেমেছেন নজরুল ইসলাম আজাদ।

জানাগেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৩১ মে শুক্রবার ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকায় ‘নারায়ণগঞ্জ মহানগর তৃণমূল বিএনপি’ এর ব্যানারে দোয়া মাহফিল ও সিহরী অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করেন মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি। এর আগে ২৮ মে জেলা বিএনপির মাসুকুল ইসলাম রাজীবও মহানগরীর মিশনপাড়া এলাকায় তৃণমূল বিএনপি নারায়ণগঞ্জ জেলা নামের ব্যানারে দোয়া মাহফিল ও ইফতার পার্টি করেন। দুটি অনুষ্ঠানেই প্রধান ছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। তবে খোজ নিয়ে জানাগেছে, তৃণমূল বিএনপি নামক দলের প্রতিষ্ঠাতা বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নাজমুল হুদা।

ছবি- দেওভোগ এলাকায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর তৃণমূল বিএনপি ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আজাদ।

যুবদল নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টিুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, প্রচার সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সদস্য সাদেকুর রহমান সাদেক, মহানগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত ইসলাম রানা, মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলামিন প্রধান, সহ-সভাপতি সিরাজউদ্দীন আহমেদ দর্পন প্রধান ও জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া সহ অন্যান্যরা।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির কোন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনে ‘নারায়ণগঞ্জ মহানগর তৃণমূল বিএনপি’ নামের কোন সংগঠন আছে কিনা জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামাল বলেন, ‘আমার যতদূর মনে আছে কয়েক বছর আগে ঢাকায় ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে একটি সংগঠনের উদ্ভব হয়েছিল। পরবর্তীতে তাদের কোন কার্যক্রম আমরা দেখতে পাইনি। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিতে এ নামের কোন সংগঠন কেন্দ্রেও নাই, আমাদের মহানগরীতেও নাই।’

এর আগে গত ২৮ মে নারায়ণগঞ্জ শহরের হোসিয়ারী মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ‘তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা’ ব্যানারে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ও সুস্থ্যতা কামনায় ইফতার দোয়া মাহফিল করেছিলেন। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ।

তবে ‘আসল বিএনপি’ এবং ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামক সংগঠনের উদ্ভব ঢাকায় হয়েছিল। যা বেশ তোলপাড় শুরু হয়। যে কারনে নারায়ণগঞ্জে যখন ‘তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা’ নামের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হলো তখন সেই কর্মসূচিতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি করা হয় তা নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এই নামের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হলেও সেখানে উপস্থিত অতিথি সকলেই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।

তবে এ বিষয়ে ভিন্মমত পোষণ করেন মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি বলেন, আসলে তৃণমূল বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে যেসব নেতাকর্মীদের পদ পদবী নাই এবং যারা দায়িত্বশীল শীর্ষ কোন পদে নাই তাহলে তারা যদি কোন কর্মসূচি পালন করতে চায় তাহলে তারা কোন ব্যানারে কর্মসূচি পালন করবে? যদি জেলা বিএনপির ব্যানারে করা হয় তাহলে বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এই বিতর্ক এড়াতেই রুট লেভেলের নেতাকর্মীকেই তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন বুঝানো হয়েছে অন্য কিছু নয়। এটাকে ভিন্নদিকে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বিএনপির নেতাকর্মী।

তবে ওই দিন এই নামে বিএনপির কোন অঙ্গ সহযোগী সংগঠন রয়েছে কিনা তা জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির ও সেক্রেটারি অধ্যাপক মামুন মাহামুদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে কাজী মনিরের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায় এবং মামুন মাহামুদ ফোনটি রিসিব করেননি। ওইদিন রাতেই এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেলের কাছে জানতে চাওয়া হয় ‘তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা’ নামে বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠন রয়েছে কিনা। তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে এ নামে বিএনপির কোন সংগঠন নেই।’

ফাইল ছবি- গত বছরের ১৪ মে আদালতপাড়ায় আজাদের পাশে এভাবেই তারা শোডাউন করেন। কিন্তু ওইদিন কেন্দ্র ঘোষিত খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেননি।

নেতাকর্মীরা বলছেন- অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত হয়েছিলেন তারা মুুলত বিএনপির নয় ‘আজাদ ভাই’ এর রাজনীতি করেন। কারন গত বছরের ১৪ মে যেদিন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নারায়ণগঞ্জে কর্মসূচি পালন করার কথা সেইদিন আজাদ আদালতে এসেছিলে হাজিরা দিতে। কিন্তু আজাদের পাশে দাড়িয়ে আদালতপাড়ায় শোডাউন দিলেও বিকেলেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে আসেননি তাদের একজনও! যে কারনে আজাদ অনুগামী নেতাদের কাছে খালেদা জিয়ার চেয়ে আজাদই বড় বলে মন্তব্য করেছিলেন বিএনপিরই অনেক নেতাকর্মী। অনেকেই মহানগরীর রাজনীতিতে কমিটিতে থাকলেও তারা রাজনীতি করছেন আজাদের পিছনে আড়াইহাজার গিয়ে।

ছবি- ২৮ মে ‘তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা’ নামক ব্যানারে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন আজাদ।

ওই দিন আরও জানাগেছে,‘তৃণমূল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা’ এর আয়োজনে এ ইফতার মাহফিলে আরো উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল, জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, মহানগর যুবদল সভাপতি মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশারফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ মহিলা দলের আহ্বায়ক নুুরুন্নাহার বেগম, মহানগর মহিলাদলের সদস্য সচিব ও কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর সেচ্ছাসেবকদল সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত ইসলাম রানা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি সাহেদ আহমেদ, মহানগর যুবদল নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, আড়াইহাজার যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল আহমেদ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সিনিয়র সহ সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ প্রমূখ।

তবে এ কোন তৃণমুল বিএনপি বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানতে নজরুল ইসলাম আজাদকে ৩১ মে শুক্রুবার দুপুরে একাধিকবার ফোন করলেও তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। একইভাবে শুক্রবারের আয়োজক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টির ফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারনে তাদের মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

ছবি- ২৮ মে তৃণ্যমুল বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নারায়ণগঞ্জ জেলা ব্যানারে অনুষ্ঠানে আজাদ।

অন্যদিকে সূত্রে জানাগেছে, ২০১৬ সালে নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব হিসেবে অভিনেতা আহমেদ শরীফের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। দলটির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নাজমুল হুদা নিজেই আহমেদ শরীফের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় অভিনেতা আহমেদ শরীফ সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দলটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন মাওলানা আবেদ আলী। ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর নাজমুল হুদার নেতৃত্বে তৃণমূল বিএনপি গঠিত হয়।

এর আগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে তিনটি দল গড়েছিলেন নাজমুল হুদা। এই হিসেবে ‘তৃণমূল বিএনপি’ তার তৈরি চতুর্থ দল। ১৯৭৮সালে তখনকার সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর গঠিত প্রথম স্থায়ী কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন নাজমুল হুদা। খালেদা জিয়ার দুই সরকারের আমলে তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। নানা ঘটনায় আলোচিত হুদা ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা দেওয়ার কারণে মন্ত্রিত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।

দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৩ জুন তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। হুদা তখন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। ভুল স্বীকার করে খালেদা জিয়ার কাছে আবেদন করার পর ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আবার বিএনপির সদস্যপদ ফিরে পান নাজমুল হুদা। কিন্তু ২০১৪ সালের ৬ জুন সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অভিমানের কথা তুলে ধরে বিএনপি ত্যাগের ঘোষণা দেন।

ঢাকার দোহারের এই সাবেক সাংসদ বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির মামলাও হয়েছিল। ২০১০সালে বিএনপি বহিষ্কৃত হওয়ার পর হুদা বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) নামে নতুন দল গঠন করেন। অবশ্য ওই দল থেকেও তিনি বহিষ্কৃত হন। দ্বিতীয় দফা বিএনপি ছড়ার পর ২০১৪ সালের মে মাসে হুদা গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স- বিএনএ। কিন্তু ওই দলের তেমন কোনো কার্যক্রম না থাকায় এক পর্যায়ে তার বিএনপিতে ফেরার গুঞ্জন ওঠে। এরপর ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর নাজমুল হুদা ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি’ গঠনের ঘোষণা দেন। আর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে ৩০টি দল নিয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ নামে নতুন একটি দল গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।