সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছিলেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি সেলিম ওসমানের জনসভায় গিয়েছেন তিনি। নির্বাচনের দিন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এসএম আকরামের এজেন্টদের মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছিলেন মুকুল। সেই মুকুল এখন কঠিন বিএনপির নেতা হয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। তিনি খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই আওয়ামীলীগের দালাল বলে আখ্যায়িত করলেন। কিন্তু এতদিন তিনি বন্দরে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করে আসছিলেন।
৩০ ডিসেম্বর বন্দরে এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল বলেছেন, যে দেশে রাতের আধারে নির্বাচন হয়ে যায় আপনারা কিভাবে আশা করেন সেই দেশে অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা।
তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠ হবেনা। আমাদের মধ্যে দালাল ডুকে গেছে, আমাদের দলের মহাসচিবই (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সরকারের দালালি করছেন। এই দালালী আমরা দেখতে চাই না। আমরা সৎ লোকের রাজনীতি চাই। যারা অরিজিনালভাবে মরহুম জিয়াউর রহমানকে ভালবাসে তারা বিএনপি করে। এই সমস্ত দালাল দিয়ে বিএনপি চলবে না।’
দীর্ঘদিন পর মুকুলের মুখে বিএনপির এমন বন্ধনা শুনে উপস্থিত নেতাকর্মীরাও টিপ্পুনি কেটে অনেকে হাসাহাসি করেছেন। আবার একই অনুষ্ঠানে মহানগর জাতীয়পার্টির আহ্বায়ক ও বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সানাউল্লাহ সানুর জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে দোয়াও চাইলেন মুকুল।
মুকুল বিএনপির বন্ধনা করে আরও বলেন, বিএনপি হলো জনগণের দল। বাংলার মানুষের নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বিএনপি ও জিয়াউর রহমানের নাম। সে দল বাংলাদেশ থেকে মুছানো যাবেনা।
৩০ মে বৃহস্পতিবার বাদ আসর বন্দরের নবীগঞ্জ টি হোসেন গার্ডেনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদার সুস্বাস্থ্য ও কারামুক্তি কামনায় মো: আতাউর রহমান মুকুল সমর্থক গোষ্ঠীর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আতাউর রহমান মুকুল সমর্থক গোষ্ঠীর সভাপতি আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা। বক্তব্য রাখেন ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হান্নান সরকার, ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান আহম্মেদ, ২৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান বাবুল, মহানগর বিএনপি নেতা আজহার হোসেন বুলবুল, বন্দর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহমুদা আক্তার প্রমুখ।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মুকুল বলেন, যেহেতু দলের নিষেধ রয়েছে তাই আমাকে দলীয় কমান্ড মানতে হবে। এ ছাড়াও যদি নির্বাচন করতাম তাহলে আপনাদের মামলা হামলার শিকার হতে হতো। আমাকে নিয়ে কেউ কেউ বলেন মুকুল বিএনপিকে ধ্বংস করছে। কই আমিতো দেখিনাই এই মুকুল ছাড়া বন্দরে বিএনপির কোন অনুষ্ঠান হয়েছে। যত বড় বড় অনুষ্ঠান হয়েছে এই মুকুলই করেছে। অন্য কোন নেতাকে আমি দেখিনাই এ রকম অনুষ্ঠান করতে।
তিনি বলেন, আমরা বন্দরকে নিয়েই থাকতে চাই। নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্বকে আমরা মানিনা মানবো না।
পরিশেষে তিনি অনুষ্ঠানে মেহমান হিসেবে আগত মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়াম্যান প্রার্থী সানাউল্লাহ সানুর জন্য সকলের প্রতি দোয়া কামনা করেন।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া বন্দরের সিরাজউদ্দোলা ক্লাব মাঠে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সমাবেশ করতে দেয়নি। আগের মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়ে আসছিলেন সুলতান আহমেদ। মঞ্চ করার চেষ্টা করা হলে হাত পা ভেঙ্গে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন সুলতান। পরবর্তীতে অন্যত্র মহাসচিবকে নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের সমাবেশ করা হলে সেখানে মহাসচিব উপস্থিত হয়েছিলেন।
নির্বাচনে মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক হান্নান সরকার লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে যত টাকা লাগে তা খরচ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেলিম ওসমানকে নিয়ে তিনি নির্বাচনী সভা করেছিলেন। এই তিন নেতা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার নিয়ে শহরের খানপুরে সেলিম ওসমানকে সংবর্ধনা দিতে মিছিল নিয়ে যোগদান করেছিলেন।
এ ছাড়াও মুকুল লাঙ্গলের পক্ষে সরাসরি প্রকাশ্যে কাজ করেছিলেন। এমনকি সেলিম ওসমানকে নিয়ে জনসভা করে সেখানে সেলিম ওসমানকেই নির্বাচন করতে হবে এবং তাকেই বিজয়ী করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেলিম ওসমান নির্বাচনে রাজি হলে তার গার্মেন্টেসে গিয়ে স্বাগত জানান মুকুল। এখন সেই মুকুলকে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুযোগ দেয়া হয়নি। যে কারনে তিনি এখন বিএনপির বন্ধনা করতে গিয়ে দলের মহাসচিবকেই দালাল বলে আখ্যায়িত করলেন। তবে এমন বক্তব্যের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন- মুকুল এতদিন কি ছিলেন?