সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যখন প্রকাশ্য আলোচনা সভায় দালাল আখ্যায়িত করলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল তখন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে মহানগর বিএনপি। উল্টো কৌশলে মুকুলকে বিএনপিতে পাকাপোক্তভাবে আশ্রয় দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। যার বিনিময়ে ইতিমধ্যে মহানগর বিএনপির শীর্ষ এক নেতার বাসায় চলে গেছে বিশেষ ‘ঈদ উপহার’। আরও জানাগেছে, মহানগর বিএনপির (কালাম অনুগামী) অনেক কর্মসূচিতে বিশেষ সহযোগীতা করছেন আতাউর রহমান মুকুল।
এদিকে আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে যখন মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম ও সেক্রেটারি এটিএম কামাল অপারগতা প্রকাশ করেছেন তখন বিএনপির বেশকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মহানগর বিএনপির শীর্ষ এই তিন নেতা একই সূত্রে গাঁথা। একজন বিএনপি ছেড়ে বিকল্পধারায় যোগদান করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলেছিল ‘মায় পুতে মিল্লা দেশটা খাইছে গিল্লা।’ যা মহানগর বিএনপি নেতা আবু আল ইফসুফ খান টিপু বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে এমন অভিযোগ তুলেছিলেন। আরেকজন তো বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়াকে মাইনাস করে দল গঠনের ষড়যন্ত্রকারী সংস্কারবাদীদের অন্যতম নেতা। এমন দুই নেতার নেতৃত্বে কমিটির সহ-সভাপতি মুকুল যখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মাত্র দালাল বলেছেন সেটা বেশি কিছু নয়।’
অন্যদিকে নেতাকর্মীরা বলছেন, গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে কাজ করেছিলেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মুকুল। নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিরোধীতা করে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি সেলিম ওসমানের জনসভায় গিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এসএম আকরামের এজেন্টদের মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছিলেন মুকুল। যা এসএম আকরাম সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন। সেই মুকুল এখন কঠিন বিএনপির নেতা হয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা। তিনি খোদ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই আওয়ামীলীগের দালাল বলে আখ্যায়িত করলেন। কিন্তু এতদিন তিনি বন্দরে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টির হয়ে কাজ করে আসছিলেন।
৩০ মে বন্দরে এক অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল বলেছেন, ‘এই আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হবেনা। আমাদের মধ্যে দালাল ডুকে গেছে, আমাদের দলের মহাসচিবই (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সরকারের দালালি করছেন। এই দালালী আমরা দেখতে চাইনা। আমরা সৎ লোকের রাজনীতি চাই। যারা অরিজিনালভাবে মরহুম জিয়াউর রহমানকে ভালবাসে তারা বিএনপি করে। এই সমস্ত দালাল দিয়ে বিএনপি চলবে না।’
দীর্ঘদিন পর মুকুলের মুখে বিএনপির এমন বন্ধনা শুনে উপস্থিত নেতাকর্মীরাও টিপ্পুনি কেটে অনেকে হাসাহাসি করেছেন। আবার একই অনুষ্ঠানে মহানগর জাতীয়পার্টির আহ্বায়ক ও বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সানাউল্লাহ সানুর জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের কাছে দোয়াও চাইলেন মুকুল।
এ ছাড়াও মুকুল লাঙ্গলের পক্ষে সরাসরি প্রকাশ্যে কাজ করেছিলেন। এমনকি সেলিম ওসমানকে নিয়ে জনসভা করে সেখানে সেলিম ওসমানকেই নির্বাচন করতে হবে এবং তাকেই বিজয়ী করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেলিম ওসমান নির্বাচনে রাজি হলে তার গার্মেন্টেসে গিয়ে স্বাগত জানান মুকুল। এখন সেই মুকুলকে বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সুযোগ দেয়া হয়নি। যে কারনে তিনি এখন বিএনপির বন্ধনা করতে গিয়ে দলের মহাসচিবকেই দালাল বলে আখ্যায়িত করলেন। তবে এমন বক্তব্যের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন- মুকুল এতদিন কি ছিলেন?
৩০ মে বৃহস্পতিবার বাদ আসর বন্দরের নবীগঞ্জ টি হোসেন গার্ডেনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাত বার্ষিকী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদার সুস্বাস্থ্য ও কারামুক্তি কামনায় মো: আতাউর রহমান মুকুল সমর্থক গোষ্ঠীর উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আতাউর রহমান মুকুলের এমন বক্তব্যটি নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি এটিএম কামালের দৃষ্টি আকর্ষন করে জানতে চাওয়া হয় এ বিষয়ে মহানগর বিএনপি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি উল্টো এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে প্রতিবেদক শেখানে উপস্থিত ছিলেন কিনা। অথচ মুকুলের সেই বক্তব্য পরদিন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। তার বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম্যেও প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদক হ্যা, সূচক শব্দ বললে এটিএম কামাল বলেন, আতাউর রহমান মুকুল মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি। তিনি যদি এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাহলে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে মহানগর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’
তাহলে আপনাদের করণীয় কি যেখানে মহাসচিবকে বলা হলো দালাল? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা কেন্দ্রে বিষয়টি অবহিত করব।’