আড়াইহাজারে বহিরাগতরাই আজাদের ভরসা!

সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:

নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে বিএনপির রাজনীতিতে বহিরাগতরাই এখন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম আজাদের একমাত্র ভরসা। কেন্দ্রীয় বিএনপির এই সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আড়াইহাজারে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজ বলয়ে টানতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন তিনি আড়াইহাজারে বিএনপির রাজনীতি করলেও তার বেশির ভাগ নেতাকর্মী আড়াইহাজার এলাকার বাহিরের। অনেকেই মহানগরীর রাজনীতি ছেড়ে আড়াইহাজারে গিয়ে আজাদের পক্ষে রাজনীতি করছেন। অথচ আড়াইহাজারে আজাদ শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। যা গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেলেও বহিরাগতদের নিয়েই তার নির্বাচনী প্রচারণার মুল আকর্ষণ ছিল।

এরি মাঝে অভিযোগ ওঠেছে- আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম আজাদ বিএনপিকে দ্বিখন্ডিত করার চেষ্টা করছেন। গত ইদুল ফিতরের পূর্বে সেখানে ইফতার পার্টি করেছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। তিনি আড়াইহাজার বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করেন। কিন্তু আড়াইহাজার বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কেউ সেখানে ছিলেন না। আবার এর দুদিন পর আড়াইহাজারে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে ইফতার পার্টি হলে সেখানে আড়াইহাজার বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এক থানায় দুটি বিএনপি কি করে হয় তা মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন। আজাদ কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা হয়ে আড়াইহাজারে বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

জানাগেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মক্তির দাবিতে ৩০মে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার পাচরুখী এলাকায় আড়াইহাজার বিএনপির ব্যানারে আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আজাদ।

ওই অনুষ্ঠানে নিজেকে আড়াইহাজার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দাবি করে হাবিবুর রহমান হাবু সভাপতিত্ব করেন।

খোজ নিয়ে জানাগেছে, ২০১৩ সালে সাংগঠনিক নিয়ন নীতি ভঙ্গের অভিযোগে হাবুকে শোকজ করেছিল জেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। সেই শোকজের কোন জবাব দেয়নি হাবু। তার কয়েক মাস পর আড়াইহাজার বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে হাবুকে অব্যাহতি দিয়ে সেখানে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাশেম ফকিরকে। কিন্তু তারপরেও হাবু নিজেকে সাধারণ সম্পাদক দাবি করে আসছেন।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আড়াইহাজার যুবদলের আহ্বায়ক জুয়েল হোসেনকে মারধরের ঘটনায় হাবুকে হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলে নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধেই থানায় জিডি করেছিলেন। বর্তমানে সেই হাবুকে আজাদের পাশেই দেখা যায়। ফলে হাবুর জিডি নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। হাবু ছাড়া আড়াইহাজারে আজাদের রাজনীতিতে কেবল বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন অনু, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের নেত্রী পারভীন আক্তার ও জুয়েল হোসেন রয়েছেন মাত্র। বাকিরা বহিরাগত।

আজাদের ওই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক জুয়েল আহমেদ, অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন অনু, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন মোল্লা, সদস্য সাদেকুর রহমান, মহানগর বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সজল, জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত ইসলাম রানা, আড়াইহাজার থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম লাভলু, নাজমুল হাসান বাচ্চু, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পারভীন আক্তার, জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার বেগম, মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা।

এদের মধ্যে মাকুসুল ইসলাম রাজীব জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকায় তিনি বিভিন্ন থানায় যেতেই পারেন। তবে তার বিরুদ্ধে আড়াইহাজার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অভিযোগ- তিনি জেলার নেতা হলেও অন্যান্য থানায় কোন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলে থানার নেতাদের অবগত করেই যাওয়া উচিত। আবার আসলেই আড়্্াইহাজার বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি আড়্ইাহাজার বিএনপির কিনা সেটাও যাচাই বাছাই করে সেখানে অংশগ্রহণ করা উচিত। কিন্তু তিনি সেটা করছেন না। জেলার নেতা হলেও তিনি আড়াইহাজারে আজাদের পাশে যতবার কর্মসূচিতে গিয়েছেন তার একভাগও তিনি রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ের কোন কর্মসূচিতে যাননি। তিনিও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আড়াইহাজারে আজাদের পক্ষে রাজনীতি করছেন। একই কাজ করছেন জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুুরুন্নাহার বেগমও।

কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা সাদেকুর রহমান সাদেকের পৌত্রিক ভিটা আড়াইহাজারে হলেও আড়াইহাজারে তার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি বসবাস করেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুর এলাকায়। তিনিও আজাদের পাশে এখন বহিরাগতের মতই একজন।

নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে আজাদের বলয়ে আড়াইহাজারে গিয়ে রাজনীতি করছেন মনিরুল ইসলাম সজল, আয়েশা আক্তার দিনা, মহানগর যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন মন্টি, মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি রাফিউদ্দীন আহমেদ রিয়াদ ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত ইসলাম রানা। এসব নেতারা এখন বিএনপির দলীয় নিয়ম নীতি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মহানগরীর রাজনীতি ছেড়ে বহিরাগত হয়ে আড়াইহাজারে গিয়ে আজাদের পিছনে রাজনীতি করছেন। পদ বহন করছেন মহানগরীর অথচ তারা রাজনীতি করছেন গিয়ে আড়াইহাজারে। কিন্তু আড়াইহাজারে আজাদের তেমন কোন শক্ত অবস্থান নেই এটাই প্রমাণ করেছে বলে আড়াইহাজার নেতাদের দাবি। আড়াইহাজারে আজাদ এখন বহিরাগত নেতা নির্ভর রাজনীতি করছেন।