সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের (জাদুঘর) সদ্য সাবেক পরিচালক রবীন্দ্র গোপকে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে এক নারী সহ আটক করা হয়েছে। ১৩ জুন বৃহস্পতিবার দুপুরে জাদুঘরের ভিতরে ডাক বাংলো থেকে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। এ ঘটনায় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নারী সহ রবীন্দ্র গোপকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আটককৃত রবীন্দ্র গোপের বিরুদ্ধে এর আগেও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। তিনি তার অফিসের পিছনেই একটি বেডরুম তৈরি করে সেখানে নারী নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। বেলা ১২টার দিকে প্রায় ২৫বছর বয়সী এক নারী সন্দেহজনকভাবে ডাক বাংলোর কক্ষে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই রবীন্দ্র গোপ অবস্থান করেছিল। ভিতরে প্রবেশের পরেই তারা দরজা বন্ধ করে দেয়। তাদের অন্তরঙ্গ মুহুর্তের সময়ে বাহিরে লোকজনের অবস্থান টের পেয়ে সাবেক পরিচালক রবীন্দ্র গোপের সহযোগিতায় নারী কৌশলে পকেট গেইট দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের হাতে ধরা পড়েন। পরে পুলিশে খবর দিলে সোনারগাঁ থানার পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রবীন্দ্র গোপ ও সোনিয়া আক্তার মীম নামে নারীকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে
যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাদুঘরের এক কর্মকর্তা জানান, গত বুধবার রাতে রবীন্দ্র গোপের বড় ছেলের শ্বশুর মারা যান। সংবাদ পেয়ে তার ২ছেলে ও নাতিরা সেখানে চলে যায়। এ সুযোগে রবীন্দ্র গোপ সকালে একটি মেয়েকে ডেকে নিয়ে যায় জাদুঘরের ডাক বাংলোতে। বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের চোখে পড়ে। দীর্ঘ সময় মেয়েটি ডাকবাংলো থেকে বের না হওয়ায় তারা সেখানে গিয়ে অসামাজিক কার্যকালাপের সময় হাতে নাতে রবীন্দ্র গোপকে আটক করে পুলিশে দেয়।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান মনির রাত ৮টার দিকে জানান, স্থানীয়রা এক নারীর সঙ্গে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে কবি রবীন্দ্র গোপকে আটক করা হয়। তবে তারা এখনও অসামাজিক কার্যকলাপের কথা স্বীকার করেননি। সে রকম কোন আলামতও ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া যায়নি। মেয়েটিও কোন অভিযোগ করছেন না। এখন পর্যন্ত তাদেরকে থানায় আটক রাখা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগেও রবীন্দ্র গোপের বিরুদ্ধে একাধিক নারী কেলেঙ্কারীর জোড়ালো অভিযোগ উঠেছিলো। কিন্তু তিনি জাদুঘরের পরিচালক হওয়ায় ক্ষমতার দাপটে সবকিছু ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিলেন। আটককৃত রবীন্দ্র গোপ বি-বাড়িয়ার সরাইল থানার উকমাইল গ্রামের মৃত উপেন্দ্র গোপের ছেলে ও সোনিয়া আক্তার মীমের বাড়ি সোনারগাঁয়ের সাদিপুর ইউনিয়নের কাঠালিয়াপাড়া গ্রামে।
অভিযুক্ত কবি রবীন্দ্র গোপ দাবি করেন, মেয়েটি আমার পূর্ব পরিচিত। সে ডাক বাংলোতে আমার ছেলের গর্ভবতী স্ত্রীকে দেখতে এসেছিলেন। আমার ছেলের স্ত্রীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে তাই দেখা হয়নি। ঘটনা এর বেশী কিছু নয়। মেয়েটিকে জড়িয়ে যা করা হয়েছে তা আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
উল্লেখ, গত ১৭ মে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়। এদিন থেকে পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেব দায়িত্ব পালন করছিলেন মোঃ খোরশেদ আলম। পরবর্তীতে গত ৩জুন বিসিএস প্রশাসনের উপপরিচালক ড. আহমদ উল্লাহ প্রেষনে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে দায়িত্বে থাকা কবি রবীন্দ্র গোপ গত ১০বছর আগে যাদুঘরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এরপর কয়েক দফায় চুক্তি নবায়ণ করে তিনি ১০ বছর পার করে দেন। তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি এখনো সরকারী বাংলোতে বসবাস করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।