সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ শহরের কয়েক লাখ মানুষের হাটার জন্য তৈরি করা ফুটপাত দখলমুক্ত করলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। কয়েকশত পুলিশ নিয়ে ১৫জুন শনিবার দুপুরে শহরের বঙ্গবন্ধ সড়কের দুই পাশে হকারদের উচ্ছেদ অভিযান চালান তিনি। এতে নারায়ণগঞ্জের মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরে আসে। হকার উচ্ছেদ সহ শহরের দুই পাশের দোকানদারদের অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসায়িক পণ্য সরিয়ে নিতে দশ মিনিট করে সময় দেয়া হলে তা মুহুর্তের মধ্যে ফুটপাত দখলমুক্ত হয়ে যায়। এদিন অন্যরকম এক নারায়ণগঞ্জ দেখলো নারায়ণগঞ্জবাসী। শহরের চাষাড়া থেকে মন্ডলাপাড়া এলাকা পর্যন্ত দুই পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়।
শনিবার দুপুরে শহরের প্রধান এই সড়কে অবৈধ গাড়ী পার্কিং, অবৈধ স্ট্যান্ড, হকার মুক্ত ফুটপাত, নারায়ণগঞ্জ জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে চাষাড়ার শহীদ মিনারে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময় করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন-অর রশিদ, বিপিএম(বার), পিপিএম(বার)।
এখানে উল্লেখ্যযে, গত বছরের ১৬ জানুয়ারি এই হকার সরাতে গেলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরেন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি একেএম শামীম ওসমানের লোকজন। ওই সময় হকার উচ্ছেদের বিরোধীতা করেছিলেন শামীম ওসমান। এ নিয়ে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে গেলে মেয়র আইভীকে তার অনুগামী নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে হামলা থেকে রক্ষা করেন। দুই পক্ষের মাঝে গোলাগুলিও হয়। থানায় মামলাও দায়ের করা হয়। জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সেই কমিটি এখনও প্রতিবেদন দাখিল করেনি। এরপর সাত মাসে পূর্বে নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেই পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ ফুটপাত দখলমুক্ত করেন। ঈদে আবারো ফুটপাত দখল করে হকার বসলে তা এবার শনিবার দখলমুক্ত করেন এসপি হারুন অর রশীদ। আবারো বসানো হলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান।
বঙ্গবন্ধু সড়ক দখলমুক্ত করে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে পুলিশ সুপার বলেন, ঈদের আগে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত রাস্তার ডান ও বাম পাশের ফুটপাতে কোন হকার বসতে পারবেনা। রাস্তা বানানো হয়েছে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ চলাচলের জন্য, কোন দোকান বসানো জন্য নয়।
এসপি হারুন ঘোষণা দেন, পুলিশ অভিযান চালালে ফুটপাত খালি এরপর আবার ফুটপাত দখল করে। এই রুপ যাতে হকাররা বসতে না পারে সেজন্য আমরা গোটা এলাকার প্রত্যেকটি জায়গায় তদারকি করার জন্য পুলিশকে কয়েকটা স্টেপে ভাগ করে ফুটপাত খালি রাখা অব্যাহত রাখবো।
তিনি জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম সিদ্দিকী এটির তদারকির দায়িত্বে থাকবেন।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, চাষাঢ়া থেকে ১নং কিংবা ২নং রেলগেট পায়ে হেঁটে আজ আমরা গিয়েছে তাতে সময় লেগেছে ৫/৭ মিনিট সময় লাগে অথচ রিক্সায় গেলে ১৫/২০ মিনিটের চেয়ে বেশি সময় লাগে। নগরবাসীর জন্য ফুটপাত দখল করে রাখা যাবেনা। অতীতের মতো আপনারা পুলিশকে সহযোগিতা করবেন এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
হকার কিংবা গরীব মানুষের বিপক্ষেও তাঁর অবস্থান নয় জানিয়ে এসপি হারুন বলেন, ফুটপাত দখল না করে, রাস্তা না ব্লক না করে তারা যাতে অন্য কোথাও বসে। কেউ যদি হকারদের পক্ষে কথা বলেন তাদের কাছেও আমার অনুরোধ থাকবে হকারদের জন্য অন্য কোন জায়গা ব্যবস্থা করে দিন। সাধারণ মানুষকে সেবা দেয়ার জন্য জেলা পুলিশ একাজটি করছে বলে জানান তিনি।
মাদকব্যবসায়ী, ভূমিদস্যূদের ব্যাপারে পুলিশকে তথ্য দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে এসপি হারুন বলেন, আপনাদের এলাকায় যদি কোন মাদক ব্যবসায়ী কিংবা ভূমিদস্যু থাকে তাদের ব্যাপারে আমাদের তথ্য দিন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, মাদকের বড় বড় রাঘব বোয়ালদের এখনো ধরতে পারিনি, তবে আমাদের কাছে তথ্য আছে, আমরা চেষ্টা করছি। আমরা এখনও ওই ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন এক সময় এই নারায়ণগঞ্জে ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে, ওই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করার, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার সাহসটুকু পেতেন না। আমি সাধারণ নাগরিকদের বিনীতি অনুরোধ করছি আপনারা ভয় থেকে বের হয়ে আসেন। ওই মাদক ব্যবসায়ী, ওই সন্ত্রাসী, ওই চাঁদাবাজ, ওই ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে নিশ্চিন্তে নিরাপদে অভিযোগ দিতে পারেন, থানায় এসে মামলা দিতে পারেন। যদি প্রকাশ্যে অভিযোগ করতে ভয় পান তাহলে আমাদের সিনিয়র অফিসারদের কাছে এসে জানান।
এসপি হারুন বলেন, আমরা চাই সুন্দর একটি নারায়ণগঞ্জ। আমরা চাই পরিচ্ছন্ন নারায়ণগঞ্জ। আমরা চাই সাধারণ মানুষের নারায়ণগঞ্জ। যে নারায়ণগঞ্জে সাধারণ মানুষ তার মনের কথাটি বলতে পারবে।
এ ছাড়াও ঈদের আগের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসংশিত হয়েছে দাবি করে এসপি হারুন বলেন, নগরবাসী শান্তির সাথে ঈদ উদযাপন করেছে। প্রতিটি ঈদগাহে আমরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছিলাম এবং বড় বড় ঈদগাহগুলো পরিদর্শন করা হয়েছে।
শনিবার দুপুরে এরআগে কয়েকশ পুলিশ সদস্যের একটি বিশাল টিম নিয়ে নগরীর চাষাঢ়া থেকে গ্রীন্ডলেজ ব্যাংক মোড়, ২নং রেলগেট, ডিআইটি, মন্ডলপাড়া ব্রীজ এলাকা পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশের হকার উচ্ছেদ করেন। এ সময় মাইকিং করে ফুটপাত খালি রাখার জন্য সতর্ক করা হয়।
পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। পুলিশ সুপারসহ পুলিশের পুরোটিম ২নং রেলগেট এলাকা থেকে ১নং রেলগেট, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার দুই পাশের ফুটপাতে থাকা দোকানদারদের তাদের দোকান সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।
এসময় পুলিশ সুপারের সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম সিদ্দিকী, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম, জেলা পুলিশের ডিআইও-১ মমিনুল ইসলাম, ডিআইও-২ সাজ্জাদ রোমন সহ জেলা গোয়েন্দা শাখার একাধিক টিম ও প্রায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এই অভিযানে থাকায় পুলিশ সুপার সকল সাংবাদিকদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।