সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী সাকিল ওরফে কিলার শাকিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এই কিলার শাকিল ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরুর ভাগিনা। একই সঙ্গে কিলার শাকিলের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী ও মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনিজামের। বিভিন্ন মিটিং মিছিলে মীর সোহেল ও শাহনিজামের সঙ্গেই দেখা যায় কিলার শাকিলকে। তাদের দুই জনের কর্মী এই কিলার শাকিল।
থানা পুলিশ জানিয়েছে, ১৬ জুন রবিবার দুপুরে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে কিলার শাকিলকে আদালতে পালিয়েছে পুুলিশ। আদালত আগামী ১৯ জুন বুধবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ছালেকুজ্জামান।
এর আগে গত শনিবার ১৫ জুন বিকেলে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজি মামলায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার শাকিলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কিলার শাকিল ওরফে ভাগিনা শাকিল পাগলা বউ বাজার এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে ও আলোচিত সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরুর আপন বড় বোনের ছেলে।
সূত্র জানায়, কিলার শাকিল ইতিমধ্যেই ৯টি মামলার অন্যতম প্রধান আসামী। এর মধ্যে আলোচিত ও লোমহর্ষক ২টি খুন এবং বাকি ৭টি চাঁদার দাবীতে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।
জানাগেছে, ২০১৬ সালের ফতুল্লার কুতুবপুরে পর পর দুটি আলোচিত হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত কিলার শাকিল। প্রথমটি ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী। ডিস ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে সেদিন বিকেলে মীরু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড কিলার শাকিল তার বাহিনীদের নিয়ে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় মোঃ শাহজাহানের উপর নির্মমভাবে হামলা চালায়। ওই হামলায় ডিস ব্যবসায়ী শাহজাহানকে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী কুপিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে শাকিল ও তার সহযোগিরা। দীর্ঘ ৬দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে অবশেষে ১৬ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ৩টার দিকে মৃত্যুবরণ করে শাহজাহান। এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যা অভিযোগ করে ফতুল্লা মডেল থানায় হত্যা মামলায় দায়ের করেছেন নিহত শাহজাহানের স্ত্রী আয়েশা আক্তার। মামলা নং- ৪৩, তারিখ- ১৬/০২/২০১৬।
একই বছর ১৮ অক্টোবর আরো এক আলোচিত হত্যাকান্ড ঘটায় এই কিলার শাকিল ও মীরু বাহিনীর সদস্যরা। সেদিনের হামলায় নির্মমভাবে খুন হয় জনতালীগের সভাপতি ও ব্যবসায়ী শেখ স্বাধীন হোসেন মনির। মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীন হোসেন মনির ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় তার আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মীরুর ভাগিনা কিলার শাকিল, বড় ভাই আলমগীর এবং গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় স্বাধীনের আত্মীয়ের বাড়ীতে প্রবেশ করে স্বাধীনের উপর নির্মমভাবে হামলা চালায়। কিলার শাকিলের ধারালো অস্ত্রে আঘাতে নিমিষেই লুটিয়ে পরে স্বাধীন হোসেন মনির। এসময় মনিরের স্ত্রী পরভীন আক্তার মেঘলা ও শ্যালিকা কাজল রেখাকেও এলোপাথারী কুপিয়ে জখম করা হয়। ঘটনার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থেকে পরদিন ১৯ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মারা যায় শেখ স্বাধীন হোসেন মনির। এই হত্যাকান্ডটি একটি আলোচিত ও লোমহর্ষক ঘটনা ছিল। এটিও পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকান্ড অভিযোগ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন মনির এর স্ত্রী পারভীন আক্তার মেঘলা। মামলা নং- ৬৬, তারিখ- ১৯/১০/২০১৬ইং।
মাদক ব্যবসায় বাধা দেয়ায় ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মীরুর ভাগিনা শাকিল পাগলা বৌ বাজার রেল লাইনের সামনে আব্দুর রহমান ও সজল নামে দুই সহোদরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। আহতরা পাগলা শাহি বাজার আকন পল্লি এলাকার মোঃ ফজলুল করিমের ছেলে। ঘটনার পর তাদের খানপুর ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অবস্থা বেগতিক দেখে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনায় আহতদের মা শাহনাজ বেগম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ৭২, তারিখ- ২৮/০৪/২০১৪।
২০১৫ সালের ১৭ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চলায় এই কিলার শাকিল। ওই হামলায় গুরুতর আহত হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোঃ নূর ইসলাম। একই সাথে তার দোকান ভাংচুর করে বন্ধ করে দেয়া হয়। একই ইস্যুতে দফায় দফায় হামলা চালানো হয় নূর ইসলাম ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর। বাড়ীতে চালানো হয় ভাংচুর ও লুটপাট। এসময় প্রতিবেশী শাহনাজ বেগম এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসী শাকিল শাহনাজকেও হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারী কুপিয়ে তার মাথায় গুরুতর কাটা রক্তাক্ত জখম করে। একাই সাথে তার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা ও ব্যপক লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় মোঃ নূর ইসলাম বাদী হয়ে গত ১৯/০৩/২০১৫ তারিখে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ৪৭।
সবশেষ চলতি বছরের গত ৩০ মার্চ ২০ লাখ চাঁদার দাবীতে দেশীয় অস্ত্র-দিয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর ও তার ম্যানেজারের হাত ভেঙ্গে ফেলার দায়ে ফতুল্লা মডেল থানায় আরো এক মামলা রুজু হয় সন্ত্রাসী শাকিলের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় মীরু বাহিনীর প্রধান মীর হোসেন মীরুকে প্রধান আসামী করা হলেও ৩নং আসামী করা হয় শাকিলকে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মামুন অর রশীদ বাদী হয়ে মীরু, তার শ্যালক আরিফ, ভাগিনা শাকিল এবং দলের অন্যতম সদস্য মুরাদ ও জাকিরের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-৯৮, তাং- ৩০/৩/২০১৯ইং। এই মামলায় সন্ত্রাসী শাকিলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।