মাহবুব আলম প্রিয়, রূপগঞ্জ থেকে:
চাল, চুলোহীন আমাদের চারপাশে এমন হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা নগণ্য। তবে সমাজের বিত্তবানরা জোটবদ্ধভাবে এগিয়ে এলে এদের সংখ্যা কমে যাবে। এভাবে স্থানীয় হতদরিদ্র চিহ্নিত করে সম্মিলিতভাবে সাহায্য সহযোগীতা দিয়ে দরিদ্র আর অসহায়দের সমাজে পূণর্বাসন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভক্তবাড়ি এলাকায় পূর্বাচল আদর্শ সেবা ফাউন্ডেশন একটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের অধীনের ১৯৯৬ সনে জমি অধিগ্রহণ শুরু হলে জালিয়াতির খপ্পরে পড়ে স্থানীয় শতাধিক জমি মালিক হয়ে পড়েন নিঃস্ব। এছাড়াও বিধবা, বৃদ্ধ, অতিদরিদ্র শ্রেণির বসবাস রয়েছে এখানে। ধারাবাহিকভাবে তাদের পূণর্বাসনের লক্ষ্যে উপজেলার রূপগঞ্জের সদর ব্রাহ্মণখালী এলাকার ইটালী প্রবাসী ফরহাদ হোসেন খোকনের উদ্যোগে গড়ে ওঠে পূর্বাচল আদর্শ সেবা ফাউন্ডেশন নামে স্বেচ্চাসেবী সামাজিক সংগঠন।
এ সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রবাসী ও স্থানীয়দের নিজেদের চাঁদার টাকা দিয়ে প্রতিবছর দরিদ্র চিহ্নিত করে ঘর বাড়ি নির্মাণ, খাবার ও বস্ত্র সামগ্রি বিতরণ, রোগাক্রান্ত হলে আর্থিক সহযোগীতা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিত সচেতনতার কাজ করে আসছে।
স্থানীয় শিমুলিয়া এলাকার বাসিন্দা টুকু মিয়া বলেন, আমি দিন মজুর। কোনমেত ডাল ভাত খেয়ে সংসার চলতো। বাবার রেখে যাওয়া পুরনো টিনের ছাপড়া ঘরে থাকতাম। একটি ঘর করার সামর্থ ছিলোনা। পরে পূর্বাচল আদর্শ সেবা সংগঠনের মঞ্জুর ইসলাম মাষ্টার, প্রবাসী মুসলিম খান, পারভেজ ফকির ও হামিদার নজরে আসে। পরে ফরহাদ হোসেন খোকনসহ সংগঠনের লোকেরা চাঁদা তুলে আমাকে একখানা নতুন টিনের চালার ঘর করে দেয়। এতে সুন্দর একটি ঘরে বসবাস করতে পারছি।
উত্তর ব্রাহ্মণখালী এলাকার বাসিন্দা সিএনজি চালক মানিক মিয়া জানান তার ৩ বছরের ছেলে হাদিদ মিয়া ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিল। এতে ২০ লাখ টাকা চিকিৎসা ব্যয় করতে হয়েছে। হাদিদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় বিত্তবানরা সহযোগীতা করেছে। সে সময় পূর্বাচল আদর্শ সেবা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে লক্ষাধিক টাকা অনুদান দিয়ে সহযোগীতা করেছে। এছাড়াও সুলপিনা, কাঞ্চন এলাকার একাধিক প্রতিবন্ধি পরিবারকে হুইল চেয়ার বিতরণ, স্থানীয় শতাধিক হতদরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তাসহ প্রতি ঈদে ঈদ সামগ্রি বিতরণ, মাদক বিরোধীসহ সামাজিক সচেতনতামূলক কাজেও বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি ৩শ ফুট সড়কে বিআরটিসি বাস চালুর দাবীতে সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ ও নানা উৎসবে অভীদের সাহায্য সহযোগীতা করে আসছে সংগঠনটি। এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যাকবলিতদের ত্রাণ সামগ্রি বিতরণে অংশ নিয়েছে এই সংগঠনের লোকজন।
এভাবে স্থানীয়ভাবে স্বেচ্চাসেবী এ সংগঠনকির সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশে। স্থানীয়দের দাবী, প্রবাসীদের উদ্যোগে পরিচালিত এ সংগঠনে স্থানীয় বিত্তশালীরা যোগ দেয়ায় সাফল্য এসেছে। এতে এ সংগঠনের ফান্ড থেকে উপকৃত হচ্ছে প্রকৃত দরিদ্র শ্রেণির লোকজন।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফরহাদ হোসেন খোকন বলেন, পূর্বাচল ও আশপাশ এলাকায় স্থানীয় দরিদ্রদের সংখ্যা নগণ্য। কিন্তু বিত্তশালী বেশি হলেও উদ্যোগের অভাবে কেউ এগিয়ে আসতেন না। এখন পূর্বাচল আদর্শ সেবা সংগঠনের মাধ্যমে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে স্থানীয় দারিদ্রতা দূর করে চেষ্টা করছেন। এভাবে প্রবাসী ও স্থানীয়দের সম্মিলিত সহযোগীতা পেলে অভাবী লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি হামিদা সরকার বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। একের বিপদে অন্যরা এগিয়ে বিপদ দূর করা সম্ভব। এমন বিশ্বাস নিয়েই পূর্বাচল আদর্শ সেবা ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের পর থেকে প্রায় হাজারের অধিক দরিদ্র লোকজন এ সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুদান ও সহযোগীতা পেয়েছে। ধারাবাহিকভাবে দরিদ্র পরিবার চিহ্নিত করে তাদের পূনর্বাসন করার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্রতা দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও স্থানীয় স্বেচ্চাসেবী সংগঠনের লোকেরা সম্মিলিত হয়ে পূর্বাচল আদর্শ সেবার মতো এগিয়ে এলে সরকারকে সহায়তা করার সামিল। এভাবে স্থানীয়ভাবে দরিদ্রদের তালিকা করে উপযুক্ত সাহায্য সহযোগীতার প্রচলন চালু করলে কোথাও অভাবী থাকবে না বলে মনে করি। এ সময় যেকোন সামাজিক সংগঠনের ভালো কাজে পাশে থাকার আশ্বাস দেন তিনি।