সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
ধর্ষণ একটি মারাত্মক ব্যাধি। যা ভাইরাসের ন্যায় সংক্রমণ হচ্ছে আমাদের সমাজে। চার বছরের শিশু থেকে নিয়ে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত কেহই আজ নিরাপদ না। প্রতিটি যুবতি নিজের সতিত্ব রক্ষায় চিন্তিত। প্রতিটি মা নিজের মেয়েকে নিয়ে আতংকিত। লাখো শহীদের রক্তে কেনা পবিত্র ভূমির ইঞ্চি ইঞ্চি মাটি আজ কলংকিত- নিষ্কলুষ নিরপরাধ নারীর আর্তচিৎকারে।
কেউ ধর্ষিতা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে, কেউ পাঠশালায়, কেউ কর্মস্থলে, কেউ লোকালয় থেকে দূরে গহীন অরণ্যে, কেউবা আবার আত্মসম্ভ্রম রক্ষায়, ভষ্মিত হচ্ছে অট্টালিকার ছাদে। চলে যাচ্ছে না ফেরার দেশে, পৃথিবীর আকাশে একটি একটি আওয়াজ ভাসিয়েÑ হে প্রভু! নারী বলে জন্ম নেয়াই কি ছিল অপরাদ।
এভাবেই হারিয়ে যাচ্ছে শত প্রাণ নির্বাক নিথর নিস্তেজ আহত পাখির ন্যায়। মানুষ পশুর পার্থক্য-তো বিবেক। সেখানেই যদি পচন ধরে, তাহলেতো পশুত্বকে হার মানাবেই।
নবী-যুগে এক সাহাবী এসে জানালেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার যিনা করতে মন চায়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মাথায় স্নেহের পরশ ভুলিয়ে বললেনÑ ‘তুমি কি পছন্দ কর- তোমার মা অথবা বোনের সাথে অন্য কোন পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হোক? সাহাবী বললেন- ‘কখনই না’। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ‘তুমি যার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে সেওতো কারো না কারো মা অথবা বোন।’
সাহাবী অত্যন্ত অনুতপ্ত হলেন এবং নিজের অসৎ মনবাসনার জন্য ইস্তেগফার করলেন। আদর্শহারা আজকের এই ঘুনে ধরা সমাজ, বিকৃত মস্তিষ্ক এবং পর্যুদস্ত মনুষত্বকে কে শাধরাবে? এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির জন্য কি আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, শাসন ব্যবস্থা এবং বিচারব্যাস্থা দায়ী নয়? ধর্মীয় অনুশাসনের কথা আপাতত নাই বললাম। কিন্তু দেশের সংবিধানে- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯ ধারা মতে যে বিচার ব্যবস্থার কথা উল্লেখ আছে, সমাজের গুটি কয়েকটি বিষফোড়া নির্মূল করতে কি এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারেনা।
আসুন জেনে নেই- কী আছে সেই ৯নং ধারায়। ১. যদি কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে তাহলে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে।
২. যদি কোন ব্যক্তি কতক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তি তার অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদন্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে।
৩. যদি একাধিক ব্যক্তি দলবদ্ধভাবে কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ফলে উক্ত নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে বা আহত হয় তাহলে ঐ দলের প্রত্যেক ব্যক্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে এবং এর অতিরিক্ত একলক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবে।
৪. যদি কোন ব্যক্তি কোন নারী বা শিশুকে (ক) ধর্ষণ করে মৃত্যু ঘটানো বা আহত করার চেষ্টা করে তাহলে উক্ত ব্যক্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে। (খ) যদি শুধুধর্ষণের চেষ্টা করে তাহলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বছর এবং অন্যূন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে।
৫. যদি পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন কোন নারী ধর্ষিতা হয় তাহলে যাদের হেফাজতে থাকাকালীন উক্তরূপ ধর্ষণ সংঘঠিত হয়েছে, সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ ধর্ষণের জন্য সরাসরি দায়ী ছিলেন। তিনি বা তারা প্রত্যেকে ভিন্নরূপে প্রমাণিত না হলে হেফাজতে ব্যর্থতার জন্য অনধিক দশ বছর অন্যুন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডনীয় হবে এবং এর অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবে। এটাই হল আমাদের সাংবিধানিক বিচারব্যবস্থা। তাই আসুন সবাই মিলে ঐক্য গড়ি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। রুখে দাঁড়াই অন্যায় ও জুলুমের বিপক্ষে।
লেখক: মুফতী উসমান গনী কাসেমী