সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রূপগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন যাবৎ তিন বিএনপি নেতার কোন্দলের কারনে সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেই চাঙ্গাভাব। ফলে ত্রিধারায় বিভক্ত এ দলের নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। শুধু তাই নয়, দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলে ১৯৯৫ সালের পর প্রায় ২৩বছর পেরিয়ে গেলেও নতুন কমিটি হয়নি।
এর অন্যতম বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অবস্থা এ অঞ্চলে আরো নাজুক। কমিটি না হলেও দলের দুঃসময়ে কিছু নেতাকর্মী স্বেচ্ছায় এ দলের হাল ধরে থাকায় কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখা দিলেও রাজপথে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছেন বললেই চলে ফলে দীর্ঘ বছর ধরে এ অঞ্চলে বিএনপি কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে ছাত্রদলের নতুন কমিটি না হওয়ায় পুরনো কমিটির ছাত্ররা বয়স ভারে আজ আদু ভাইয়ে রূপ নিয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কেউ বিয়ে করে সংসারী হয়ে ব্যবসায় প্রবেশ করেছেন। পাশাপাশি রাজনীতিতে নামে মাত্র সক্রিয় রয়েছেন। নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাঁচাতে সরকার দলীয় নেতাদের আনুগত্যের রয়েছে অভিযোগ। আবার অনেকেই আদু ভাই খেতাবের ভয়ে ছাত্রদল ছেড়ে যুবদল ও মূলদলে যোগ দিয়েছেন। তবে ছাত্রদলের কাগুজে কলমে নবীণ ছাত্ররা কাজ করলেও নেই দলীয় স্বীকৃতি। জেলা ছাত্রদল ও একটি পক্ষের দায়সারা সাংগঠনিক পরিচালনায় এ অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্র জানায়, ১৯৯৫সালে প্রয়াত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধূরীর জীবদ্দশায় তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সভাপতি মোশারফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান রোজেল উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করেন যেখানে সভাপতি আনোয়ার সাদাত সায়েম, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব রহমান নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা শাখা কমিটির অনুমোদন দেন। তাদের সংগ্রামী পরিচালনা থাকাকালীন ২০০২ সালে ঘরোয়াভাবে পুণরায় একই কমিটি অনুমোদন নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালান। এরপর এ পর্যন্ত কোন কমিটি গঠন করতে পারেনি তারা।
এদিকে বয়স ও সাংসারিক কারনে ছাত্রদল থেকে সে¦চ্চাসেবক দলের জেলা সভাপতি হন আনোয়ার সাদাত ছায়েম ও সেক্রেটারি হন মাহাবুব রহমান। আর জেলার ছাত্রদলের নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়ে সভাপতি হিসেবে মশিউর রহমান রনি ও সাধারণ সম্পাদক পদে খায়রুল ইসলাম সজীব সহ তাদের প্যানেল হাল ধরেন।
পরে ২০১৪ সালে রূপগঞ্জ উপজেলা শাখার নতুন কমিটির আশ্বাস দিয়ে ভেঙ্গে দেয় পুরনো কমিটি।
পরবর্তীতে উপজেলা ছাত্রদলের হাল ধরেন আবু মোহাম্মদ মাসুম, আজিম সরকার, সুলতান মাহমুদ, মেহেদী হাসান রিপন ও ওমর ফারুক সহ একাধিক গ্রুপ। এদের মধ্যে আবু মোহাম্মদ মাসুম রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ২০০২এর কমিটিতে। পরে ইউনিয়ন সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দলীয় কর্মসূচী পালন করতে যেয়ে নাশকতার নামে রাজনৈতিক মামলার শিকার হন তিনি। এভাবে বিএনপির ডাকা হরতাল সফল করতে যেয়ে রূপসী, গাউছিয়ার একাধিকবার ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের হামলা, মামলার শিকার হন।
দলীয় কর্মসূচী পালন করতে যেয়ে সরকার দলীয়দের ২৩টি বিভিন্ন অপরাধের নামে রাজনৈতিক মামলায় আটকে যান আবু মোহাম্মদ মাসুম। একই সময়ে ছাত্রদল নেতা সুলতান মাহমুদের নামে ৪০টি, আজিম সরকারের নামে ১৯টিসহ প্রতিটি ছাত্রদল নেতার নামে ১০টির অধিক মামলা ঝুলে যায়। শুধু তাই নয়, দল ক্ষমতায় না থাকলেও দলীয় কর্মসূচী পালনে এসব ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা নিরলস রাজপথে কাজ করে আসছেন। কিন্তু মূল দলের নেতাদের গাফিলতির কারনে উপজেলা ছাত্রদলের কাগুজে কলমে নেই কমিটি কিংবা দলীয় স্বীকৃতি। এতে ছাত্রদল ছাড়াও দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভের যেন শেষ নাই। ছাত্রদল নেতাদের দাবী পদ পদবী রাজনীতিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলের জন্য জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও নুন্যতম স্বীকৃতি না পাওয়া দূর্ভাগ্যজনক।
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম বলেন, দলের চাঙ্গাভাব ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করে দলের চেয়ারপার্সন গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশের গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের জন্য রাজপথে কাজ করার সুযোগ চাই।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের নারায়ণগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক খায়রুল ইসলাম সজীব বলেন, ২৩ বছরেও কমিটি হয়নি এটা দুঃখজনক। এর জন্য দায়ী মূল দলের কিছু নেতা। তবে খুব শীঘ্রই এ এলাকার নতুন কমিটি প্রকাশ পাবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আওয়ামীলীগের হামলা, মামলায় জর্জরিত উপজেলা বিএনপি গোঁছাতে সময় ব্যয় হয়েছে। এর জন্য আমরা সিনিয়রাই দায়ী। দলের দুঃসময়ে যে সকল ছাত্রনেতারা দলের পাশে থেকে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে আবু মাসুমসহ অনেকের ভুমিকা রয়েছে। ঐসকল ত্যাগি কর্মীদের মুল্যায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে যারা সক্রিয় রয়েছেন তারাই ঠাঁই পাবে ছাত্রদলের কমিটিতে।