সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ শহরের জল্লারপাড় আমহাট্টা এলাকায় একটি চার বছরের শিশু আলিফকে নির্মমভাবে হত্যার দায়ে আসামি অহিদুল ইসলাম ওরফে অহিদুল্লাহকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদন্ডের আদেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিসুর রহমান। ২২ জুলাই আসামির উপস্থিতিতে এই আদেশ বিচারক। আসামি অহিদুল ইসলাম নোয়াখালীর জেলার বাসিন্দা। ঘটনার সময় আসামি জল্লারপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো।
সাজাপ্রাপ্ত আসামি অহিদুল ইসলাম ওরফে অহিদুল্লাহ নোয়াখালী জেলার চরজব্বার থানার চরজব্বার ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চরহাসান এলাকার মাকসুদের ছেলে। অহিদুল নারায়ণগঞ্জ শহরের জল্লারপাড়া আমহাট্টা এলাকার খোকন মিয়ার ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতো।
নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, এই মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে আদালত। আদালতে যুক্তিতর্ক ও সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আসামি অহিদুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন আদালত।
তিনি আরও জানান, গত বছরের ১৬ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের জল্লারপাড় আমহাট্টা এলাকার খোকন মিয়ার বাড়িতে অহিদ ও রিপন নামের দুইজনের ভাড়া ঘর থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় শিশু আলিফের লাশটি উদ্ধার করা হয়। এই মামলায় একমাত্র আসামি অহিদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, চকলেট খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে শিশু আলিফকে বাসায় নিয়ে হত্যা করে বস্তাবন্দি করে রাখে এবং শিশু আলিফের অভিভাবকদের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ঘটনাটি আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এ রায় ঘোষণার পর নিহত শিশু আলিফের মা সালমা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমি চাই দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক।
এই মামলায় বাদী পক্ষে আইনজীবী হিসেবে সহযোগিতা করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী আহম্মদ ভূঁইয়া।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮ সালের বছরের ১৬ আগষ্ট শহরের জল্লারপাড় আমহাট্টা এলাকার ভাড়াটিয়া অহিদ ও রিপন নামের দুইজনের ভাড়া ঘর থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় শিশু আলিফের লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে সকাল ১১টা থেকেই নিখোঁজ ছিল আলিফ। চারপাশে সকল বাড়িতে খোঁজ নেওয়ার পরেও যখন তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিলোনা। তখনই দুপুরের পর থেকে পাশের ঘরের ভাড়াটিয়া পিংকির ছোট ছেলে সাকিব জানায়, সকালে একসাথে সাকিব ও আশপাশের কয়েকটি ঘরের আরও কিছু বাচ্চাদের সাথে খেলছিল আলিফ। এমন সময় ঐ ঘরের ভাড়াটিয়া অহিদ এসে চকলেট দেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায়।
ঘটনার দিন বিকেলে আলিফের লাশ উদ্ধার করা হয়। আলিফকে হত্যার পর হাত পা বেঁধে লাশ ভরে রাখা হয় বস্তার ভেতরে। শুধু বস্তাবন্দী নয়, প্রথমে পলিথিন ব্যাগে ভরে লাশটিকে একটি বস্তায় ঢুকানো হয়। সেই বস্তার উপরে দেয়া ছিলো কংক্রিটের টুকরো। এ ঘটনায় নিহতের বাবা সৌদি প্রবাসী আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে পরদিন ১৭ আগস্ট সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।