সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় এক শিশু ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম সহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটলিয়ন (র্যাব-১১)। ৭ আগস্ট বুধবার র্যাবের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত পুুলিশ সুপার আলেপ উদ্দীন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ৬ আগস্ট মঙ্গলবার বোরকা পরিহিত অবস্থায় এক ব্যক্তি র্যাব-১১ অফিসে এসে এই মর্মে একটি অভিযোগ দেয় যে, তার মেয়ে বর্তমানে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং মসজিদের ইমাম কর্তৃক ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা আমার মেয়েকে ও আমাকে মেরে ফেলার জন্য বার বার হাসপাতালে গিয়ে খুঁজছে। ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিকভাবে র্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছুটে যায়। ভিকটিম ও তার পরিবারের সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে হাসপাতালে তাদের নিরাপত্তায় নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করে। এরপর আভিযানিক দলটি ঘটনার স্থল পরিদর্শন ও অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। ২ দিনের প্রচেষ্টায় ৭ আগস্ট সকাল ৬টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন উত্তর চাষাড়া চাঁনমারীস্থ এলাকা হতে মোঃ ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া থানার সরাপাড়া এলাকার মৃত রিয়াজ উদ্দীনের ছেলে।
র্যাব আরও জানায়, নির্যাতনের শিকার শিশুটির বয়স ৮ বছর সে মাদ্রাসায় ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। শিশুটি রাতের বেলায় বিভিন্ন প্রকার দুঃস্বপ্ন দেখে কান্নাকাটি করত। বিভিন্ন প্রকার কবিরাজি চিকিৎসা করে ভালো না হওয়ায় ভিকটিমের বাবা জানতে পারে যে, অভিযুক্ত মোঃ ফজলুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম দীর্ঘ দিন যাবৎ ঝাড়ফুঁক ও পানিপরা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমের বাবা ভিকটিমকে এর আগে ২ থেকে ৩ বার ফজলুর রহমানের কাছে ঝাড়ফুক পরিয়ে নেয়। তারপরও তেমন উপকার না হওয়ায় ফজলুর রহমান ভিকটিমের বাসায় গিয়ে ‘বাড়ী বন্দি’ নামক চিকিৎসা করে আসে। ঘটনার আগের দিন মাগরিবের সময় ভিকটিমের বাবা ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিৎসার ব্যাপারে আসাতে চাইলে সে পরের দিন ফজরের আযানের সাথে সাথে মসজিদে আসতে বলে।
কথা অনুযায়ী পরের দিন সকালে ভিকটিমের বাবা মেয়ে শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে চলে আসে। ফজরের নামাজের পর শিশুটি তার বাবাকে নিয়ে মসজিদের ৩য় তলায় ইমামের বেড রুমে নিয়ে যায় অভিযুক্ত। এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাবাকে ভোরের দিকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাহিরে পাঠিয়ে দেয়। ঐ সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কোনো ভাবেই মমবাতি ও আগরবাতি কিনতে পারছিলেন না। এরমধ্যে সময় ক্ষেপন কারর জন্য ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে ১টি পান আনতে বলে ও মসজিদের মোয়াজ্জিন কে ফোন করে নিচের গেটে তালা মারতে বলে। ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেয়।
এর মাঝে শিশুটির দুই হাত পিছনে বেধে ও মুখে টেপ মেরে নির্মমভাবে পাশবিক নির্যতন করে তার কাম লিপ্সা চরিতার্থ হাছিল করে এবং প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে পরিস্কার করে দেয়। এরপরে শিশুটির গলায় ছুরি ধরে তার বাবা মাকে না বলার হুমকি দেয় এবং বললে জবাই করে ফেলবে বলে হুশিয়ার করে। শিশুটি অসুস্থ্য হয়ে গেলে তাড়াহুড়া করে তার বাবাকে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয়। এর পরে শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা মাকে সবকিছু খুলে বললে এবং ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়া শুরু করলে ভূক্তভোগী পরিবারটি শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে এসে বিচার দিলে মসজিদ কমিটির কিছু সংখ্যক লোক ও আশে পাশের অভিযুক্তের কিছু ভক্ত মিলে সেখানেও শিশু ও পরিবারটিকে মারাত্বকভাবে হেনস্থা করে।
ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে, ভূক্তভোগী পরিবারটি যেন থানা বা হাসপাপতালে যেতে না পারে। এরপর শিশুটির অবস্থা আরো খারাপ হলে শিশুটিকে নিয়ে শিশুটির পরিবারটি নারায়ণগঞ্জের ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে চুপি চুপি ভর্তি করলে। ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে হত্যা ও অপহরণ করার উদ্দেশ্যে কয়েক দফায় চেষ্টা চালায়। হাসপাতালের রফিকুলের অনুসারীরা হাসপাতালের এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে শিশুটির বাবা মাকে দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে এরই এক পর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্স এর বোরকা পড়ে র্যাব অফিসে এসে অভিযোগ দেয়। শিশুটিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে অপহরণের চেষ্টা ও পরিকল্পনার সাথে যুক্ত থাকার অপরাধে অভিযুক্তের অনুসারী আসামি মোঃ রমজান আলী, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি, মোঃ মোতাহার হোসেন ও মোঃ শরিফ হোসেনকে ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে গ্রেপ্তার করা হয়।