সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জের চীফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বারান্দায় জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট জাসমীন আহমেদ তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা ও তার দেবরের হাতে লাঞ্ছিত করার মামলায় স্বামী আবু নকীব ও দেবর আবু নাছের নিপুনের পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন
এই মামলায় বাদী অ্যাডভোকেট জাসমীন আহমেদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে শুনানিতে অংশগ্রহণ করে আসামিদের জামিনের বিরোধীতা করেন- আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ রশিদ ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট হাসান ফেরদৌস জুয়েল, সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী আহম্মদ ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সেলিনা ইয়াসমিন ও অ্যাডভোকেট সুলতানুল আরেফিন সহ প্রায় অর্ধশত আইনজীবী।
এদিকে জানাগেছে, গত ৩জুলাই নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট জাসমীন আহমেদের দায়েরকৃত নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় তার স্বামী পুলিশের পরিদর্শক আবু নকীবকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন আদালত। তিনি ঢাকা মহানগর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত।
৩ জুলাই বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ শাহীন খন্দকার শুনানি শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অ্যাডভোকেট জাসমীন আহমেদ ও আবু নকীব স্বামী স্ত্রী। আবু নকীবের বিরুদ্ধে এই মামলা সহ তিনটি মামলা করেছেন নারী আইনজীবী।
আদালত সূত্রে, এর আগে এই মামলায় ৬ সপ্তাহ আগাম জামিনে ছিলেন আবু নকীব। বুধবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। কিন্তু তারপর আসামি পক্ষের আইনজীবী জামিনের আবেদন করলে আদালত তা ১৬ জুলাই শুনানির জন্য দিন ধার্য্য করেন। আসামি সেই আদেশ গোপন করে গত ১০ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি এমদাদুল হক ও মহিউদ্দীন শামীম এর বেঞ্চে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের আদালতের আদেশটি গোপন রেখে সেখানে জামিন নেয়া হয় বলে বাদী অভিযোগ করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের ওই কোর্টেই আপিল করেছেন বাদী। যা ১৬ জুলাই শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়। ওই আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের আদালত জামিন শুনানির ২২ জুলাইয়ে দিন ধার্য্য করেছিলেন। উচ্চ আদালত থেকে নকীব জামিন পান।
এদিকে আরও জানাগেছে, গত ২৯মে নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা আবু নকীব ও তার দেবরের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এর আগেও নারায়ণগঞ্জ জেলার এডিএমের অফিস কক্ষে স্বামীর হাতে মারধরের শিকার হয়েছিলেন এই নারী আইনজীবী। এ দুটি ঘটনায় পৃথক দুটি মামলাও হয়। ২৯মে বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ চিফ জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বারান্দায় এই মারধরের শিকার হলে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান অন্যান্য আইনজীবীরা। জাসমীনের উপর হামলার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় আইনজীবীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করে আসামিদের শাস্তির দাবি করেন।
ওইদিন আইনজীবীরা দাবি করেছেন- বুধবার সকালে মামলার বাদী জাসমিন আহমেদের উপর হামলা চালায় পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী আবু নকিব ও তার ভাই। জাসমিন আহমেদকে বেদম মারধর করে তারা। ওই সময় জাসমিন আহমেদ অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান আইনজীবীরা। ওই সময় তিন জনকে পুুলিশ আটক করে কোর্ট গারদে নিয়ে যান। কিন্তু কোর্ট পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দেন।
অন্যদিকে আরও জানাগেছে, এর আগে গত ১৩ মার্চ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ এডিএম জ্যোতিকা যুথি সরকারের কক্ষে একটি মামলার বিষয়ে শুনানি করতে গেলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার দ্বারা এই মারধরের শিকার হন নারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। তবে ওই সময় এডিএম তার কক্ষে ছিলেন না। তার সহকারী আবদুর রহমান দাবি করেছেন ওই সময় এডিএমের কক্ষে কেউ ছিল না। ওই দিনও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জাসমিন আহমেদ।
ঘটনা সূত্রে জানাগেছে, ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আবু নকিবের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। আবু নকিব ঢাকা মহানগর পুলিশের সার্কেল অফিসার। আর স্ত্রী অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি। গত ৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে স্বামী আবু নকিবের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগে একটি মামলা করেন অ্যাডভোকেট জাসমিন আহমেদ। ওই মামলাটি আদালত তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ এডিএমকে দায়িত্ব দেন।
ওই মামলায় জাসমিনের স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা আবু নকিবকে প্রধান আসামি করা হয়। নকিব ছাড়াও নকিবের ভাই মো: নাছের নিপুণ, বোন জুবরিয়া বেগম, অপর ভাই মো: আবু নোমান সজন ও ভাইয়ের স্ত্রী শিরিন আক্তার হিরাকে আসামি করেন জাসমিন আহমেদ।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সন্তানদানে অক্ষম জেনেও জাসমীন আহমেদের সঙ্গে ২০০৭ সালের ১৪ মে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মো: নকিব। বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে ৫০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে তার উপর অত্যাচার করতে থাকেন স্বামী।
দাবি করা হয়- নিজ বিবাহজীবন সুখে-শান্তিতে কাটানোর জন্য স্বামীকে ১২লাখ টাকার একটি প্রাইভেটকার, ১টি মোটরসাইকেল ও ঢাকায় জমি কেনার জন্য নগদ ৫০ লাখ টাকা দেন জাসমিন।
মামলায় আরো দাবি করা হয়- জাসমিনের স্বামী নকিব সম্প্রতি চালচলন পরিবর্তন করে উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইসলামের অনেক অপব্যাখ্যা দিয়ে জাসমিনকে তার দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেন। এ ছাড়া প্রায়ই জাসমিনকে হত্যার চেষ্টা করেন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল থেকে একবার ফেলে দিয়ে, আরেকবার ঘুমের মধ্যে গলাটিপে ধরে এবং বালিশচাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল।
মামলা দায়েরের পর জাসমীন আহমেদ বলেছিলেন, আমাকে না জানিয়ে আরো দুটি বিয়ে করেছে নকিব। পরে জাসমিন আহমেদের খোঁজ-খবর নেয়া বন্ধ করে দেন। ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাসমিনের সঙ্গে দেখা করেন নকিব। সে সময় মারধর করে নগদ ৫ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, দলিল ও বিভিন্ন ডকুমেন্ট নিয়ে চলে যান।