দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এসএম আকরাম বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোট প্রার্থনায় আগ্রহী নন। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজনের সঙ্গে তিনি বৈঠক করলেও বিএনপির অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আচরণ করছেন অনেকটা সতীনের মত। তবে আওয়ামীলীগের সাবেক এই এমপি নির্বাচনী বৈতরী পার হওয়ার জন্য ভরসা করছেন আওয়ামীলীগের একটি অংশের ভোটের উপর।
জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন ও সদরের দুটি ইউনিয়ন এলাকা ছাড়া বাকি পুরো এলাকাটিই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত। এ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্বে রয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় আইভীর ভোট ব্যাংক রয়েছে। টানা দুইবার মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আইভী। একবার শামীম ওসমানকে পরাজিত করে এবং পরের বার বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি মেয়র হন।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম এখন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হলেও তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের দেখলে অনেকটা নাক ছিটকাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর এসএম আকরাম ভরসা রাখতে পারছেন না। দুচারজন বিএনপির ওয়ানম্যান খ্যাত নেতাদের নিয়ে দুদিন এলাকায় ঘুরলেও জন¯্রােত তৈরি করতে পারেননি। যদিও সাবেক এমপি আবুল কালামকে তার সঙ্গে নামকাওয়াস্তে একবার দেখাও গিয়েছিল।
নেতাকর্মীরা আরও বলছেন, নারায়ণগঞ্জে শহর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে উত্তর মেরু ও দক্ষিন মেরুর মধ্যে বিরোধ দ্বন্ধ রয়েছে। এদিকে শামীম ওসমান অন্যদিকে মেয়র আইভী। নির্বাচনী আচরণ বিধিতে বাধা নিষেধ থাকায় মেয়র আইভী নির্বাচনের প্রচারণায় থাকতে পারবেন না। এতে এসএম আকরামের জন্যও আরেকটু সুযোগ হয়ে দাড়িয়েছে। নতুবা মেয়র আইভীকে অনেকটা বাধ্য হয়েই মহাজোটের প্রার্থী সেলিম ওসমানের পক্ষেই নামতে হতো। কারন তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন।
আওয়ামীলীগের বিরোধের কারনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এসএম আকরাম ওসমান বিরোধী ভোটের উপর ভরসা করছেন। তবে কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করে বলেছেন, ইতিমধ্যে মেয়র আইভী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানের সঙ্গে গোপন আতাত রয়েছে। এমন আতাতে শামীম ওসমান বিরোধীদের অনেকেই রয়েছেন। যারা বর্তমানে শামীম ওসমানের সঙ্গে থাকলেও কয়েক মাস আগেও যারা ওসমান বিরোধী ছিলেন তারাও ওসমান পরিবারকে এবার সাইজ করতে নীল নকশা তৈরি করেছেন।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ২০১১ সালে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র আইভীকে সুযোগ করে দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান এসএম আকরাম। তিনি আওয়ামীলীগের সমর্থন পাননি। যে কারনে নির্বাচনের পরের দিন আওয়ামীলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। ওই সময় তিনি জেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক পদে ছিলেন। যার প্রতিদান এবারের নির্বাচনে দক্ষিণ মেরুর আওয়ামীলীগ নেতারা দিতে যাচ্ছেন।
নেতাকর্মীরা আরও বলছেন- নির্বাচনের দুদিন আগে জেলা আওয়ামীলীগের একজন শীর্ষ নেতা বন্দরের মাঠে নামবেন। বিশাল বাজেট নিয়ে তিনি লাঙ্গলের বিরুদ্ধে মাঠে নামবেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যে সেটাপ রয়েছে সেই সেটাপে এসএম আকরামের পক্ষে কাজ করবেন। তবে এসব বিষয় নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা বললেও আরো নানান ধরনের সন্দেহ ও তথ্য বের হয়ে আসছে। তবে দক্ষিণ মেরুর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা এখনও মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি। যে কারনে এসব বিষয়গুলো আরো জোড়ালোভাবে দেখা যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন রয়েছে শেষ পর্যন্ত মেয়র আইভীর অনুগামী ও আইভীর ভোট ব্যাংক কার বাক্সে যাবে? এমপি সেলিম ওসমান নাকি এসএম আকরামের বাক্সে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে যেসব বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে সেইসব দলের সমর্থকদের ভোটও যাবে এসএম আকরামের বাক্সে। যে কারনে বিএনপির উপর ভরসা করছেন না এসএম আকরাম।