দিনকাল নারায়ণগঞ্জ ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে আজহারুল ইসলাম মান্নানকে রীতিমত হংকার দিয়েছেন আওয়ামীলীগের এমপি শামীম ওসমান। ১৬ ডিসেম্বর রবিবার বিকেলে সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের উদ্যোগে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে এমন হুংকার দেন শামীম ওসমান।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মান্নানকে নিয়ে শামীম ওসমান বলেন, মান্নানকে সাহেবকে নিয়ে বলতে চাই, নির্বাচন করছেন নির্বাচন করেন কোন আপত্তি নাই। ভোট দিলে পাস করবেন। কিন্তু আমি যা শুনি সেগুলো যদি হয়, যদি মনে করেন অন্য পথ ধরবেন, তাহলে আমি বলে যাচ্ছি দশ বছর আমরা বহু অত্যাচারিত হয়েছি। বাড়ি ঘরে হামলা হয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আমার বাড়ি থেকে আরম্ভ করে আওয়ামীলীগের এমন কোন বাড়ি নাই যেখানে হামলা করা হয়নি। চন্দনশীলের পা নাই, ২০ মানুষ হারিয়েছি। মনে করিয়ে দিয়েন না। দশ বছর ক্ষমতায় আছি বিএনপির নেতার গায়ে একটি ফুলের টোক্কা দেই নাই। যদি মনে করেন এটা দূর্বলতা তাহলে পরিষ্কারভাবে বলে যাই এটা আমাদের দুর্বলতা না। আমরা ক্ষমা করেছি। কিন্তু কেউ যদি এবার অন্য কোন পথ অবলম্বন করেন, যদি চিন্তা করেন জ্বালাওপোড়াও করবেন, ২৪ তারিখের মধ্যে ঘটনা ঘটানো হবে, ২৪ তারিখের আগেই দেশে কিছু ঘটনা ঘটানো হবে। ওরা নির্বাচন করতে চায়না, ওরা নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কোথায় কি হয় জানিনা। নারায়ণগঞ্জে কিছু হতে দেয়া হবে না। সোনারগাঁয়ের মান্নান সাহেব আপনাকে আামি চিনি, আপনার দৌড় কতটুকু আমি জানি। আমি আপনাকে পরিস্কারভাবে বলতে চাই সাবধান, একদম সাবধান। এখানে কোন খেলা খেলবেন না। ওই জায়গা থাকবে না কিন্তু, মা কইয়া গো কইতে সুযোগ দিমুনা। পরিস্কার কইয়া দিলাম। কোন ছাড় হবে না। কারন লড়াইটাই হচ্ছে স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে লড়াই।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী একেএম শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনে গিয়ে এ আসনের মহাজোটের প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খানের লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে রবিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে বিজয় র্যালী ও আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শামীম ওসমান। তবে তিনি এর আগেও গত ১৪ ডিসেম্বর শামীম ওসমান তার বড় ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের এমপি একেএম সেলিম ওসমানের পক্ষে বন্দরের সমরক্ষেত্র মাঠে গিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন তিনি।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানকে নিয়ে আরও শামীম ওসমান বলেন, বিএনপির অপজিশন প্রার্থী হচ্ছে মান্নান। সেও আমারে মানে। আমি তাকে দুশমন ভাবিনা। মান্নানের বুঝা উচিত এটা তো জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন না। জাতীয় সংসদে মানুষ যায় আইন পাশ করার জন্য। আইন পাস করতে হলে ওখানে বাংলা ইংরেজী অনেক লেখা থাকে, পড়তে হয়। আমরাও এলএলবি পাস করেও পড়তে পারিনা। এখন আইন সভায় যাবো, আইন সভায় যাইয়া আমি যদি পড়তেই না পাড়ি তাহলে আইন সভায় যাইয়া করবটা কি আমরা? রাজনীতি কোন জায়গায় চলে যাচ্ছে। বিএনপি এতই অসহায় হয়ে গেছে, আমাদের শ্রদ্ধেয় মুরুব্বী রেজাউল করিম ভাই উনাকে যদি বিএনপি মনোয়ন দিতো তাহলে আমি ভাবতাম ঠিক আছে। একজন যোগ্য মানুষকে মনোনয়ন দিয়েছে। যে লেখাপড়া জানে, যার পিছনে জ্ঞান বুদ্ধি আছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মান্নানকে ছোট করে দেখছিনা। জাতীয় সংসদে কথা বলতে গেলে কিছুটা যোগ্যতা লাগে। পার্লামেন্টে কথা বলতে গেলে প্রথমে তো লিখতে হবে পার্লামেন্ট। মেম্বার অব পার্লামেন্ট লিখতেও তো কষ্ট হয় অনেকের।
বিএনপি নির্বাচনে হামলার নাটক সাজাচ্ছে বলে মন্তব্য করে শামীম ওসমান বলেন, নাটক করতে করতে এক সময় যদি আমরা বুঝি আপনারা নাটক করছেন। তখন বলবো এরা এমনেও নাটক করে ওমনেও নাটক করে, তখন আমরা যদি ধরি, একবার যদি ধরা শুরু হয় বাংলাদেশে থাকা কিন্তু আপনাদের থাকা সম্ভব হবেনা। নাটক কইরেন না। জনগণের ভোটে পাস করেন আপত্তি নাই। কিন্তু কোন ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। এই নির্বাচন খোকার নির্বাচন না, কসম করে বলছি এই নির্বাচন স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে নির্বাচন। দেশটাকে বাঁচানোর নির্বাচন। নতুবা এই দেশ আফগানিস্তান হয়ে যাবে, জঙ্গীবাদের দেশ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতা খন্দকার মোশারফ হোসেন পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সঙ্গে কথা বলছে। আমরা কি এখণও চুপ করে থাকবো? আমি থাকবো কিনা জানিনা। আমাকে প্রতি মুহুর্তে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০০১ সালের ১৬ জুন আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার চোখে আমি মৃত। আমার জীবন নিয়ে চিন্তা নাই। এই লড়াই দেশ বাচাঁনোর লড়াই।
একেএম শামীম ওসমান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন সম্পর্কে বলেন, নির্বাচনে কার বিরুদ্ধে ভোট চাইবো। আজকে যাদেরকে নিয়ে নির্বাচন করছে তারা কারা? আজকে বিএনপির সঙ্গে জামাত শিবির। আমাদের শরীরের রক্ত কি পানি হয়ে গেছে? পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রে নাই রাজাকার নির্বাচন করছে। আমি অবাক হই বাংলাদেশে যখন তারা রাজনীতি করেন। কাদের নেতৃত্বে? এতদিন করেছে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে, এখন করছে ওই বর্ণচোরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। যারা রাজনীতি করে আজকে বেশ্যায় পরিনত হয়েছে। এরা পলিটিক্যাল প্রস্টিটিউট। এরা এদেশের মানুষকে লজ্জা দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ভোট চাইতে আমার লজ্জা লাগে।
শামীম ওসমান বলেন, সোনারগাঁয়ের খবর জানি। ৩০ তারিখে বিজয় মিছিলের প্রস্তুতি নেন ইনশাহআল্লাহ। লাঙ্গল পাস করবে। আমার নির্বাচন থুইয়া আমি এখানে আসছি কেন? আমার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী খুইজ্জা পায়না মানুষ। দিছে কোন যোগ্য লোক, একজন দিয়েছে। আমি নির্বাচন গত ৫ বছর ধইরা করছি। চিন্তা কইরেন না আমি বলিনা যে, আমি সোনারগাঁয়ে ৮টার সময় আসবো। তবে নির্বাচনের দিন সকাল ১০টার সময় শামীম ওসমান সোনারগাঁয়ে থাববে এবং রেজাল্ট নিইে আমরা যাবো ইনশাহআল্লাহ।
শামীম ওসমান প্রয়াত আওয়ামীলীগ নেতা আবুল হাসনাতকে স্মরণ করে বলেন, আমার নেতা মোবারক ভাই, আবুল হাসনাত ভাইকে যেনো আল্লাহ বেহেসত নসিব করেন।
আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত সম্পর্কে বলেন, কায়সার আমার হাতে তৈরি করা কর্মী এবং এই পরিবারের সন্তান। আমি বিশ্বাস করিনা যে কায়সার এমন কোন কর্ম করবে যে কর্মের কারনে এদেশে রাজাকার আলবদর আলসামস উপকৃত হবে। আমি বিশ্বাস করিনা যে কায়সার এমন কোন কর্মকান্ড করবে যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীরা উৎসাহিত হবে। যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, সেতো কোন রাজাকার আলবদরের সন্তান নয়। আমি বিশ্বাস রাখছি ইনশাহআল্লাহ আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই দেখবেন আজকে যেমন খোকন সাহা, আনিসুর রহমান দিপু, কামাল, সামসু ভাই সহ সকলে যেমন সবাই আজকে মহাজোটের প্রার্থী, শেখ হাসিনার প্রতীক লাঙ্গলের পক্ষে যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে তখন আমি আশা করছি আমার ভাতিজা কায়সার হাসনাতও এখানে এসে লাঙ্গলে প্রতীকে ভোট চাইবে।
কায়সারকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, আমি চাইনা আওয়ামীলীগ পরিবারের নেতাকর্মী আজীবনের জন্য বহিস্কার হয়ে যাক। আমি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত জানি। আর জানি বলেই এখানে সবাই কিন্তু পরিষ্কারভাবে একটি কথা বলে গেছেন। এ মুহুর্তে আমাদের কায়সারকে নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই। কারন কায়সার আমাদের অপজিশন প্রার্থী না।
শামীম ওসমান যুবলীগ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বলেণ, কেউ যদি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেন তাহলে কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হবে। আজীবনের জন্য বহিস্কার করা হবে। কোন ছাড় দেয়া হবে না। আর যদি কেউ মনে করেন বিএনপিকে সাহায্য করবেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলে দিলাম এই নির্বাচন খোকার নির্বাচন না। এই নির্বাচন শেখ হাসিনার নির্বাচন। শেখ হাসিনার সন্তান আমরা বেচেঁ আছি। প্রয়োজনে আমার নির্বাচন ছেড়ে দিয়ে সোনারগাঁয়ে এসে নির্বাচন করব। দেখতে চাই কার কত মাথা আছে। কোন ছাড় দেয়া হবে না। এই লড়াই দেশ বাচাঁনোর লড়াই। এই লড়াইয়ে কোন পরিবারকে বেঈমানী করার সুযোগ দেয়া হবে না। ভাল করে বললাম ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, নেত্রীর পক্ষে অবস্থান নেন। খোকা কোন সাবজেক্ট না। সাবজেক্ট একটাই শেখ হাসিনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। এই সাবজেক্টের সাথে যদি কেউ পিছন থেকে ছুড়ি মারার চেষ্টা করে মনে রাখবেন নারায়ণগঞ্জের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে যাবেন। পরে কিন্তু দরজা বন্ধ হয়ে গেলে ওই দরজা আর খোলা হবে না। এই মুহুর্তে ফাইনাল সিদ্ধান্তের কথা বললাম না। আশা করি সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। ভুল হতে পারে সবারই। রাগ অভিমান থাকতে পারেনা। কিন্তু এমন কিছু করবেন না দেশের জন্য ক্ষতি হয়ে যায়। যারা সারাজীবন একটা পতাকার নিজে রাজনীতি করেছেন, শেখ মুজিবের আদর্শের পক্ষে রাজনীতি করেছেন, সেই সকল কিছু অম্লান করে দিবেন না। যেখানে মানুষের মুখের বুর্লি হতেন সেখানে কিন্তু মানুষের মুখের গালি হইয়েন না। জামাত শিবির রাজাকাররা উস্কানি দিবে। ওই উস্কানীতে কান দিয়েন না। সামনে থাকা কিছু লোক হয়তো বলবে আপনিই সব। ধান্ধা করবে টাকা খাবে। এদের সাফাইয়ে কান দিয়েন না। কয়দিন পর একা হয়ে গেছেন।
এ সময় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ-৩(সোনারগাঁও) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও মহাজোটের মনোনিত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জের সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, চন্দন শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরু, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন, কেন্দ্রীয় মহিলা লীগ নেত্রী ডা. সেলিনা আক্তার, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট নূর জাহান প্রমুখ।
এতে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামের সঞ্চালনা সভাপতিত্ব করেন সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূইয়া।
এছাড়াও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সোনরগাঁও পৌর মেয়র সাদেকুর রহমান, সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হা-মীম শিকদার শিপলু, শম্ভপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ, কাচপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর, পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম প্রমুখ। এর আগে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে যোগদান করেন আওয়ামীলীগ ও জাতীয়পার্টির বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।