সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে এক সংবাদকর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠার পর উল্টো শিক্ষার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন কলেজ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। একই সঙ্গে ওই সংবাদকর্মীকে মারধর করা হয়নি বলেও দাবি করেছেন কলেজের প্রাণী বিদ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
২৯ সেপ্টেম্বর রবিবার দুপুরে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে এসব কথা বলেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সংবাদকর্মী সৌরভ হোসেন সিয়ামকে মারধরের অভিযোগকে মিথ্যা দাবি করেছেন প্রাণী বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গনে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রানী সিংহ।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী প্রিয়া, বিগত সময়ে কলেজের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আসছিল সৌরভ এবং এর আগে আমাদের এক শ্রদ্ধেয় এক শিক্ষকের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে দাবি করেন, ঘটনার সময় ছাত্র-ছাত্রী সংসদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল চলছিল। আর যাদের বিরুদ্ধে সৌরভ অভিযোগ করেছেন তারা ঐ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। যার ছবিও রয়েছে। একটা মানুষ দুইটি স্থানে উপস্থিত থাকবে এটা কোনভাবেই সম্ভব না। সহপাঠী সৌরভ মিথ্যাচার করছে।
ওই সময় শিক্ষার্থীরা আরও দাবি করেন- যে ঘটনা ঘটেইনি তা নিয়ে কলেজের এতদিনের গৌরভ নষ্ট করতে চাইছে। কলেজের এতদিনের গৌরব, ঐতিহ্য ও সুনাম কেউ নষ্ট করতে চাইছে, আমরা তা মেনে নিবো না। আমরা অবশ্যই এর প্রতিবাদ করবো।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থী পরশ বলেন, সৌরভ আমাদের সহপাঠী। আমরা একই ক্লাসে পড়ি। ও আমাদের ভাই-বন্ধু। ওকে মারা তো প্রশ্নই উঠে না।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ বেলা রানী সিংহ বলেন, ঘটনার সময় মিলাদ মাহফিলে ছিলাম আমরা। সৌভবের বড় পরিচয় ও আমাদের কলেজের ছাত্র। ঘটনার পর থেকে ও আমাকে কিছুই বলেনি। মিলাদ মাহফিল শেষে পুলিশ আমার কাছ ঘটনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। আমি তাদের বলেছি আমি মিলাদ মাহফিলে ছিলাম। পরবর্তিতে আমি প্রাণী বিদ্যা বিভাগের শিক্ষকদের ডেকে এনে কথা বলেছি। তারা মারামারি দেখেনি। তারপরও আমি আগামীকাল উভয় পক্ষকে ডেকেছি। ঘটনা ঘটে থাকলেও ব্যবস্থা নিব।
এর আগের দিন শনিবার ওই সংবাদকর্মী মিডিয়াতে বলেন, আমি সৌরভ হোসেন সিয়াম। নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের প্রাণীবিদ্যা ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও নারায়ণগঞ্জের অনলাইন পোর্টল ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’এ চিফ রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছি।
কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে সকাল ১১টার দিকে ৩য় বর্ষের ফরম ফিল-আপ করতে তোলারাম কলেজের বিজ্ঞান ভবনের চতুর্থ তলায় প্রাণি বিদ্যা বিভাগে যাই। সেখানে গিয়ে ফরম ফিল-আপের জন্য সকল কাগজপত্র তৈরি করি। পরে ডিপার্টমেন্ট থেকে জানানো হয়, রোববার ফরম ফিল-আপ করতে।
তিনি অভিযোগ করেন, এক পর্যায়ে পিয়াস প্রধান, মেহেদী হাসান প্রিন্স ও শাহরিয়ার পরশ (হৃদয়), সার্থক আহমেদ তোফা, শেখ হাবিবুর রহমান তামিম সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জন ছেলে আমার ডিপার্টমেন্টের ভেতরে আসে। আমাকে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ অনুসরণ করতে থাকে। এই পাঁচ জন জন ২৩ এপ্রিল ২০১৮ সালের কলেজ ক্যাম্পাসেই আমাকে মারধর করেছিল বিধায় তাদের উপর আমার সন্দেহ হয়। ঘটনাটা একজন শিক্ষককে জানাই। তার পরামর্শে আমি ডিপার্টমেন্ট থেকে বের না হয়ে সেখানেই বসে থাকি। আমি ভেবেছিলাম, ওটা আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ডিপার্টমেন্ট), সেখানে আমার পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আছেন, শিক্ষার্থীরাও আছে। তাই সেখানে আমি নিরাপদ। এদিকে সেই ছেলেরা বারবার ডিপার্টমেন্টে আসা-যাওয়া করছিল।’
‘আনুমানিক সোয়া বারোটায় পিয়াস প্রধান, শাহরিয়ার পরশ, মেহেদী. তোফা ও তামিমসহ অন্যান্যরা এসে আমাকে ডিপার্টমেন্টের ভেতরেই ঘিরে ধরে। তাদের মধ্য থেকে একজন আমাকে বলে, চল নিচে আয়। উত্তরে আমি বলি, আমি নিচে যাবো কেন? কিছু বলার থাকলে এখানেই বলো। আমি যেতে না চাইলে তারা আমাকে টেনে নিচে নিয়ে যেতে চায়। এক পর্যায়ে আমি স্যারদের ডাকাডাকি করলে ওরা ডিপার্টমেন্টের ভেতরেই আমাকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি-লাথি মারতে থাকে। মারতে মারতে তারা বলে, এই কলেজেই পড়ো আবার সাংবাদিকতা করো। সততা দেখাও? নারায়ণগঞ্জের সব সাংবাদিকরে খাইয়া দিমু। একথা বলতে বলতে তারা মারতে মারতে তারা আমাকে ডিপার্টমেন্টের বাথরুমের দিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইলে আমি চিৎকার করতে থাকি। এক পর্যায়ে ওরা মারধর করে চলে যাওয়ার আগে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বলে, আজকে বাঁইচা গেলি। তোর পুলিশ বাবাদের গিয়ে এই কথা বললে একেবারে জানে মাইরা ফেলমু। এক শিক্ষকের সহায়তায় আমি সেখান থেকে বের হয়ে আসি। পরবর্তীতে এ বষিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ঘটনার পর জানতে পারি, পিয়াস প্রধান নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, তামিম সহ সম্পাদক, মেহেদী প্রিন্স একই কমিটির উপ সাংস্কৃতিক সম্পাদক অন্যরা তোলারাম কলেজ ছাত্র সংসদের লোক হিসেবে কলেজে পরিচিত।
সৌরভ জানান, এর আগে গত বছরের এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখ সংবাদ প্রকাশের জেরে তোলারাম কলেজের ছাত্রছাত্রী সংসদ কক্ষের ভেতরে নিয়ে গিয়ে আমাকের বেধরক মারধর করে। পিয়াস প্রধান, পরশ, মেহেদী। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল। জিডি নম্বরÑ ১৩৩২। তারিখ-২৪/০৪/২০১৮। আজকে কোন কারন ছাড়াই তারা আমাকে মারধর করে। কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, এতে করে ঐতিহ্যবাহী তোলারাম কলেজের সুনাম ক্ষুন্নসহ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সাহসী সাংবাদিকতার পথ রুদ্ধ হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি পাশাপাশি তোলারাম কলেজের শিক্ষার পরিবেশ ও নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করছি।’