সান নারায়ণগঞ্জ টুয়েন্টিফোর ডটকম:
সারাদেশে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি। ফলে আবারো নিরাশায় পড়লো নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের বিভিন্ন থানা পৌরসভা সহ বিভিন্ন ইউনিট কমিটিতে পদ প্রত্যাশি কয়েক’শ নেতাকর্মী। এর আগেও ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটি গঠন জটিলতায় আটকে পড়ে যায় জেলা ছাত্রদলের অন্যান্য ইউনিট কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও। কিন্তু কমিটি গঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও সেই সময়ের মাঝে নারায়ণগঞ্জে ছাত্রদলের কমিটি গঠন করতে পারেননি শীর্ষ দুই নেতা।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পর আবার জেলা মহানগর পর্যায়ের সকল কমিটি গঠন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু সেই সময়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব জেলার থানা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন কমিটিই গঠন করতে পারেননি। তাদের ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতিকে টিকিয়ে রাখতে নিজেদের মনগড়া কমিটি গঠন করতে গিয়ে বিরোধীতার কারনে জেলার শতশত নেতাকর্মীকে আবারো নিরাশায় ফেললেন। এর দায়ভার তাদের উপরই চাপাচ্ছেন কর্মীরা।
জানাগেছে, কক্সবাজার জেলায় বেশকটি থানা পৌরসভা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের পর ১৬ অক্টোবর বুধবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল ওইসব কমিটি বাতিল ঘোষণা করেছেন। একই সঙ্গে দেশের সকল সাংগঠনিক ইউনিট সমূহকে তাদের অধীনস্থ ইউনিট কমিটি গঠন ও পুনঃগঠন স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ ফলে আশায় বুক বাধা নেতাকর্মীরা পড়লেন নিরাশায়।
সূত্রে জানাগেছে, ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ মাসুকুল ইসলাম রাজীবকে আহ্বায়ক ও আনোয়ার সাদাত সায়েম, মাহাবুব রহমান, শাহ ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন, মশিউর রহমান রনি, মঞ্জুর হোসেন ও হারুন উর রশিদ মিঠুকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে গঠন করা হয় জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি। তারাও জেলার কোন ইউনিট কমিটি গঠন করতে পারেননি। নেতাকর্মীদের তারাও প্র্রত্যাশা পুরণ করতে পারেননি।
ওই কমিটির পর গত বছরের ৫ জুন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন অর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন।
এই কমিটিতে আগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান রনিকে সভাপতি ও খায়রুল ইসলাম সজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মোহাম্মদ উল্লাহ এবং আরিফুর রহমান মানিককে সহ-সভাপতি, ইসমাইল মামুন, মেহেদী হাসান, মঈনুল ইসলাম রবিন, নাজমুল হাসান বাবু, মশিউর রহমান শান্ত, রাকিব হাসান রাজ, রফিকুল ইসলাম রফিককে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সোহেল মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়।
এদিকে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলে দুটি কমিটি গঠন করা হলেও থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি তাদের কেউই। পূর্বের আহ্বায়ক কমিটির পর পরবর্তীতে ১২ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হলেও সেই কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান রনি ও সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীবও নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেননি। অনেক নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের একটি পদের আশায় বিয়ে করে সংসারিও হননি। অনেকেই সেই সম্ভাবনার আশাও বাদ দিয়ে এখন অন্যান্য সংগঠনের রাজনীতিতে জড়িয়েছেন।
এদিকে বর্তমান কমিটি এক বছর পেরিয়ে গেলেও জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি রনি ও সজীব। এমনকি থানা পর্যায়ের কোন কমিটিই দিতে পারেনি তারা। এর মধ্যে দুজনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিরোধ বিভক্তি দ্বন্ধ মতপাথর্ক্য। এখন সরাসরি দুটি ভাগে বিভক্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল। অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে সংগঠনটি বিশৃঙ্খল সংগঠনে পরিনত হয়েছে নারায়ণগঞ্জে। চেইন অব কমান্ড বলতে কিছুই নেই। রনির নেতৃত্ব কেউ মানতে চাচ্ছেন না।
অন্যদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, জেলা কমিটি যাতে নতুন করে গঠন করা হয় সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হলে ছাত্রদলের নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী কমিটিতে মশিউর রহমান রনি সভাপতি হতে পারবেন না। এক্ষেত্রে সজীব হবেন সভাপতি ও সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান কমিটির একজন হবেন সেক্রেটারি। সেই লক্ষ্যেই দফায় দফায় আলোচনা হয়েছে। যেকোন দিন চূড়ান্তভাবে কমিটি ভেঙ্গে দেয়ার বিষয়ে সজীবের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ইতিমধ্যে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের এই কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে বর্তমান কমিটির নেতাদের দাবি তোলা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে আবার অভিযোগ ওঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে মাইনাস করতে এই নীল নকশা তৈরি করেছেন সংগঠনটির সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম সজীব। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের অন্যান্য নেতাদের নিয়ে পরিকল্পনাও করেছেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে রনিকে ছাড়াই জেলা ছাত্রদলের ব্যানারে নারায়ণগঞ্জে কর্মসূচি পালন করছেন সজীব। আবার সজীবের নির্দেশনায় অন্যান্য থানা এলাকায়ও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যেখানে মুল টার্গেট জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দেয়া। এমন পরিকল্পনায় একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছাড়া বাকিরা অবস্থান নিয়েছেন সজীবের পক্ষেই।
গত ৯ অক্টোবর বুধবার কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচিতেও দেখা গেল নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের বিভক্তি। ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিকে বাদ দিয়ে অধিকাংশ নেতারা অবস্থান নিয়েছেন সেক্রেটারি সজীবের পক্ষে। পরদিনেও সজীবের নির্দেশনায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন থানায় কর্মসূচি পালন করেন। আবার এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতেও জেলার সভাপতি ও সেক্রেটারি তাদের নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মীরা পৃথকভাবে সেখানে গিয়েছেন।
নেতাকর্মীদের সূত্রে আরও জানাগেছে, ১২ সদস্যের এই কমিটির মধ্যে ইতিমধ্যে দু’চারজন নেতা পুরোদস্তর রাজনীতি থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কমিটি গঠনের পর সভাপতি ও সেক্রেটারি দুজনই কারাভোগ করেছেন। দুজনেরই যথেষ্ট ত্যাগ রয়েছে সংগঠন করতে গিয়ে। কিন্তু কমিটি গঠনে ব্যর্থতার দায়ভার নিয়েও তৃণমূল নেতাকর্মীদের চরম ক্ষোভ এখন তাদের উপর। থানা পর্যায়ের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রত্যাশায় ছিলেন কমিটি গঠন করা হবে।
কমিটি গঠনের পর সাংগঠনিক নিয়ম মাফিক দু’চারটি মিটিং করতেও দেখা যায়নি তাদের। বর্ধিত সভাও করতে পারেনি ছাত্রদল। বলয় ভিত্তিক কমিটি গঠন করার চেষ্টা এবং ব্যক্তি স্বার্থের কারনে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েও আটকে গেছে বারংবার। সংগঠনের মধ্যে শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। সংগঠনের সভাপতি রনির নেতৃত্বের প্রতি অনীহা দেখা যাচ্ছে একাংশের নেতাদের। আবার দু’একজন রনির পক্ষেই রয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশরা চাচ্ছেন এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে রনির খবরদারি বন্ধ করে দিতে।
এরি মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলেন রনি। সেখানে তিনি পরাজিত হওয়ার পর জেলা ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মীরাই এখন তার সঙ্গ থেকে সটকে পড়েছেন। এখন কেউ কেউ স্বপ্ন দেখছেন সামনে রনিকে বাদ দিয়ে সজীবের হাতেই তুলে দেয়া হতে পারে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটিও। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে সজীব কেন্দ্রে যথেষ্ট চেষ্টাও করছেন বলেও জানাগেল। যদিও সজীব এ বিষয়ে এখনও মুখ খুলেননি। নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার চিন্তা পরিকল্পনা করলেও মাঠ পর্যায়ের শতশত নেতাকর্মীদের নিয়ে তারা ভাবছেন না।